১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১১:১১

কীভাবে কমাবেন স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা?

অনলাইন ডেস্ক

কীভাবে কমাবেন স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা?

কীভাবে কমাবেন স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা?

অবসট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হল ঘুম-সম্পর্কিত শ্বাস-প্রশ্বাসের একটি ব্যাধি। এই রোগে ঘুমানোর সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাস অনিয়মিত হয়ে যায়। অর্থাৎ শ্বাস কখনও শুরু হয়, কখনও আচমকা বন্ধ হয়ে আসে। বিভিন্ন ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে, তবে সবচেয়ে বেশি যা দেখা যায়, তা হল অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া। এই রোগে আক্রান্তের গলার পেশি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি শিথিল হয়ে আসে। এই পেশি মুখগহ্বরের টাকরা, আল জিভ, জিহ্বা ও টনসিলের মতো অংশগুলোকে ধরে রাখে। ফলে এই পেশির শিথিলতায় শ্বাস নেওয়ার পথটি রুদ্ধ হয়ে আসে ও ঘুমের সময় আচমকা শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়। অবসট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা সাধারণ মানুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এই রোগের ফলে ঘুমের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন মানুষ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ১০ সেকেন্ডের বেশি এমন অবস্থা থাকলে দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশ কমে যেতে পারে। অতিরিক্ত ওজন, বার্ধক্য উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শ্বাসনালীর সমস্যা এই রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় অনেকটাই। 

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ, তবে সকলের ক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিস্থিতি নাও হতে পারে। কোন কোন লক্ষণ দেখলে বুঝবেন অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’র মতো সমস্যা হচ্ছে? জেনে নিন এই অসুখটি সম্পর্কে।

কী কী কারণে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে?

১. এর সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে মেদ। টনসিল বড় হয়ে গেলেও এটি হতে পারে।
২. হাইপারটেনশন, পলিসিস্টিক ওভারির মতো সমস্যার কারণেও এই অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে।
৩. হাঁপানি-সহ ফুসফুসের অন্য সমস্যার কারণেও এটি হতে পারে।
৪. স্নায়ুর সমস্যার কারণেও এটি হতে পারে। তাতে বুকের পেশির উপর মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ কমে যায়।
৫. হৃদযন্ত্র এবং কিডনির সমস্যাতেও এটি হয়।
৬. অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ক্ষেত্রেও এটি দেখা যেতে পারে।
৭. ধূমপানের অভ্যাস থাকলেও এটি হতে পারে।

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার সম্ভাব্য লক্ষণসমূহ

১. নাক ডাকা এর প্রধান লক্ষণ।
২. ঘুমের মধ্যে শ্বাস আটকে যাওয়া, গলা শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে এতে।
৩. সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে মাথাব্যথার সমস্যায় ভোগেন অনেকে। এটিও অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ।
৪. ক্লান্তিও হতে পারে এর ফলে।
৫. শিশুদের ক্ষেত্রে অবসাদ বাড়তে পারে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণে।
৬. অনেকে যৌনসম্পর্কের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এই সমস্যায়।

কীভাবে কমাবেন স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা?

ফুসফুসের রোগের চিকিৎসক সুস্মিতা রায় চৌধুরী জানিয়েছেন, এটি একটি লাইফস্টাইল রোগ, যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ভারতীয় এই চিকিৎসক বলেন, জীবনধারায় সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা যেমন এই রোগ বাড়িয়ে দিতে পারে, তেমনি জীবনযাপনের ভঙ্গিতে কিছু সাধারণ পরিবর্তন আনলে তা নিয়ন্ত্রণও করা যায়। 

সুস্মিতা রায় চৌধুরী বলেন, “স্থূলতার সমস্যা যেহেতু এই রোগ বাড়িয়ে দেয়, তাই জোর দিতে হবে শরীরের ওজন কমানোর দিকে। সে কারণে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। কী খাচ্ছেন আর কী খাবেন না, সে বিষয়ে নজর রাখতেও হবে।”

চিকিৎসকের পরামর্শ, কম কার্বোহাইড্রেট আর কম ফ্যাটযুক্ত খাবার সাহায্য করতে পারে স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে। আরও খেয়াল রাখতে হবে যেন ডায়াবেটিস কিংবা হাইপারটেনশনে না ভোগেন রোগী। কারণ স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলে এই দু’টি রোগ তাড়াতাড়ি ধরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে সতর্ক করেন এই চিকিৎসক। তথ্যসূত্র: মায়োক্লিনিক, এনএইচএস ইউকে, বিএলএফ ইউকে, আনন্দবাজার

বিডি প্রতিদিন/কালাম

সর্বশেষ খবর