১৬ অক্টোবর, ২০২৩ ১৭:৫৮

২০০ বছরের ‘বাঙালির চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ’ প্রকাশের উদ্যোগ

অনলাইন ডেস্ক

২০০ বছরের ‘বাঙালির চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ’ প্রকাশের উদ্যোগ

আজ সোমবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে এই রচনা সংগ্রহ প্রকাশের শুভ সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এই প্রকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, সম্পাদকবৃন্দ ও বিশিষ্টজন

গত ২০০ বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মনীষীদের সুনির্বাচিত রচনা একসূত্রে গ্রথিত করে ‘বাঙালির চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ’ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। 

আজ সোমবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে এই রচনা সংগ্রহ প্রকাশের শুভ সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এই প্রকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, সম্পাদকবৃন্দ ও বিশিষ্টজন। 

দীর্ঘ ২৪ বছরের পরিশ্রমে প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত সম্পাদনা পরিষদের সম্পাদনায় ১৬টি বিষয়ে দুই শতাধিক খণ্ডে প্রকাশিত হচ্ছে চুয়াত্তর হাজার পৃষ্ঠার এই রচনা সংগ্রহ। 

এই সংগ্রহে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ষোলটি বিষয়-ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, পরিবেশ, চলচ্চিত্র, সংগীত, রাজনীতি, ভাষা, সংস্কৃতি, নারী, সমাজ, অর্থনীতি এবং শিক্ষা। বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের উজ্জ্বল স্মারক এই রচনা সংগ্রহ-এর প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। 

অনুষ্ঠানে গ্রন্থমালা সম্পাদক ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রর সভাপতি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালির চিন্তামূলক রচনার সংগ্রহ সিরিজগুলোতে দুশো বছরের দিকে কেন তাকানো হচ্ছে সে প্রসঙ্গে বলেন, এই দুশো বছর শুধু দুশো বছর নয়, তা বাঙালির দুশো বছরের চিন্তা শক্তির স্ফুরণ। গত দুশো বছরের আগেও অনেক বড় বড় কাজ হয়েছে। কিন্তু এই দুশো বছরের সঙ্গে তা তুলনীয় নয়। আমরা যদি অতীতের দিকে তাকাই, এই ২০০ বছরের মধ্যে বাঙালির যে শক্তির স্ফুরণ ঘটেছিল তা আমরা পাব না। 

তিনি বলেন, একদিন আমার মনে হল এই যে দুশো বছর ধরে বাঙালি জাতির মধ্যে বৌদ্ধিক জাগরণে যারা এর  নায়ক, যারা এর নেতা, তারা এগুলো করেছেন, এগুলো নিয়ে লিখেছেন, তারা জাতির চিত্রকর্ষের জন্য চেষ্টা করেছেন। অনুশীলনের চেষ্টা করেছেন। এই যে এত বড় বড় কাজ এত বড় বড় ঘটনা, এগুলোতো রক্ষিত হলো না। কেননা চিন্তা, মূল্যবোধ, মননশীলতা, জ্ঞানচর্চা, মুক্তিসংগ্রাম– সব মিলিয়ে বাঙালির জীবনে এ সময়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, উর্বর ও ঐশ্বর্যময়। এ সময়ে বহু বাঙালি মনীষী, ভাবুক বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা করেছেন, লিখেছেন। তাদের সেই রচনাগুলোকে একত্র করতে পারলে তা বাঙালি জাতির জন্য বিরাট সম্পদে পরিণত হবে। এরপর এই সংগ্রহের, এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে এই কাজটি করলে সবারই উপকার হবে, জাতির উপকার হবে। তাই আমরা এই প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এ গ্রন্থমালা প্রকাশের বিলম্ব নিয়ে তিনি বলেন, দেরিতে হলেও আমরা এটা করতে পেরেছি এটাই আমাদের সার্থকতা।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, এখানে অনেক দুর্লভ বইয়ের সংগ্রহ আছে যা সব জায়গায় পাওয়া যাবে না। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও পাঠাগারগুলো যদি এই সিরিজগুলো সংগ্রহ করেন তাহলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং গবেষকগণ উপকৃত হবেন। তিনি আরও বলেন, এই বইগুলো সর্বাধিক মানুষের কাছে যত কম দামে পৌঁছে দেওয়া যায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, যদি এখন থেকে ৩০ মার্চ ২০২৪ এর মধ্যে ২০৮ খন্ডের সিরিজটি সংগ্রহ করতে চান, তাহলে ৫০%ছাড়ে  তা ৯০,০০০  টাকায় সংগ্রহ করতে পারবেন।  পরিশেষে তিনি, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের  এই পরিশ্রমের ফসল শেষ পর্যন্ত সকল পাঠকের কাছে পৌঁছাবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করে বক্তব্য শেষ করেন। 

গ্রন্থমালারটির ২০৮ খণ্ড একত্রে অথবা বিষয়ভিত্তিক সেট সংগ্রহ করা যাবে। ১৬টি বিষয় নিয়ে এই সংকলনটির এখন প্রি-অর্ডার এর জন্য বুকিং নেয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়ে। ৩১ মার্চ ২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রি অর্ডার করতে হবে। বিষয় ভিত্তিক মূল্যের জন্য অনুগ্রহ করে ওয়েবসাইটটিতে গিয়ে ক্রেতার পছন্দের বিষয়ের আইকন-এ ক্লিক করতে হবে। https://bcrs.bskbd.org বিষয়ভিত্তিক প্রি-অর্ডার ছাড় ৪৫%। ৩১ মার্চ ২০২৪ তারিখের পর গ্রন্থমালার মূল্যের ছাড় হবে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী ৩০% ছাড়ে ১,২৬,০০০ টাকা। সম্ভাব্য সরবরাহের তারিখ : ১০ এপ্রিল ২০২৪। ইতোমধ্যে পাঁচটি বিষয়ের (সংস্কৃতি, দর্শন, নারী, বিজ্ঞান ও ইতিহাস) চুয়ান্নটি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে, এই ইতিমধ্যে প্রকাশিত  বিষয়ভিত্তিক সংকলনগুলো বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করে এখনই সংগ্রহ করা যাবে। স্বল্প সময়ের মধ্যে বাকি খণ্ডগুলো প্রকাশিত হবে। ওয়েবসাইটে ক্লিক করে বিভিন্ন খন্ডের রচনার তালিকা পাওয়া যাবে।   

গ্রন্থমালা প্রকাশের শুভসূচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন অনুষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দ ও গণমাধ্যমকে ‘বাঙালির চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ’বিষয়ে বিস্তারিত অবহিত করেন। তিনি জানান, বিভিন্ন বিষয়ে বাঙালি মনীষীদের নির্বাচিত রচনাবলী ভবিষ্যতের পাঠক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষকসহ সকলের কাছে সহজলভ্য করার জন্য বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গর্বের বিষয় এই কারণে যে, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে একের পর এক ইতিহাস তৈরি করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে আরেকটি নতুন ইতিহাস তৈরি করতে যাচ্ছে। যাঁরা এই কঠিনতম কাজের সাথে জড়িত আছেন তাঁদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। 

আলোর ইশকুলের সদস্য রুখসানা মিলির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গ্রন্থমালার বিভিন্ন খণ্ডের সম্পাদকবৃন্দ দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দেন এবং বইটির গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারা বলেন, গত ২০০ বছরে শ্রেষ্ঠ বাঙালি চিন্তকদের রচনা নিয়ে এ সংকলন হলেও এর পরিধি, ব্যাপ্তি ও গভীরতা আরও ব্যাপক। যে কোনো সংকলনেরই সীমাবদ্ধতা থাকে। এটিরও আছে। সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলমান থাকবে পরিমার্জন, পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে, নতুন সংস্করণের মাধ্যমে। এ থেকে দেশবাসী উপকৃত হলে আমাদের ভালো লাগবে। 

১৬টি খণ্ডের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বাঙালির অর্থনীতিচিন্তা হারাধন গাঙ্গুলী, ইতিহাসচিন্তা মো. মোফাখখারুল  ইসলাম, চলচ্চিত্রচিন্তা সাজেদুল আউয়াল, দর্শনচিন্তা প্রদীপ রায়, ধর্মচিন্তা মোহাম্মদ আবদুল হাই ও চঞ্চল আশরাফ, নারীচিন্তা আকিমুন রহমান, পরিবেশচিন্তা মুশফিকুর রহমান, বিজ্ঞানচিন্তা জাকির তালুকদার, ভাষাচিন্তা সাখাওয়াৎ আনসারী, রাজনীতিচিন্তা খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন, শিক্ষাচিন্তা শোয়াইব জিবরান, শিল্পচিন্তা মইনুদ্দীন খালেদ, সংগীত করুণাময় গোস্বামী, সংস্কৃতিচিন্তা আহমাদ মোস্তফা কামাল, সমাজচিন্তা শিপ্রা সরকার ও আহমাদ মাযহার, সাহিত্যচিন্তা বিশ্বজিৎ ঘোষ  (১ থেকে ১১ খন্ড),  সাহিত্যচিন্তা   সৈয়দ আজিজুল হক (১২ থেকে ২৬ খণ্ড), সাহিত্যচিন্তা বদিউর রহমান (২৭ থেকে ২৯ খণ্ড), সাহিত্যচিন্তা মাসুদুল হক (৩০ থেকে ৩২ খণ্ড), সাহিত্যচিন্তা রাজীব সরকার (৩৩ থেকে ৩৫ খণ্ড)।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

সর্বশেষ খবর