► যুক্তিযুক্ত কারণ কিংবা গাণিতিক হিসাবনিকাশ- এ ধরনের আর যা কিছু, আজকের বিশ্বে আইকিউ না বাড়ালে লড়াই করা দায়! আইকিউ বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন...
► বুদ্ধিরই অন্য নাম ‘ইন্টেলিজেন্স’। এটি মাপার অনুপাতই হলো ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট বা আইকিউ। একে বাংলায় বলে ‘বুদ্ধ্যঙ্ক’। যাকে একটু সহজভাবে বললে বুদ্ধি+অঙ্ক, অর্থাৎ বুদ্ধি মাপার অঙ্ক...
ক্লাসের পরীক্ষা হোক কিংবা চাকরির ইন্টারভিউ... কপালে চিন্তার ভাঁজ খানিকটা কিন্তু থাকবেই! তবে এমন পরিস্থিতি বাগে আনার পুরো চাবিকাঠি আছে আমাদের ‘মগজাস্ত্রে’। যার মধ্যে রয়েছে বুদ্ধি, স্মৃতি এবং মনঃসংযোগ। এ ছাড়া পরীক্ষায় সাফল্য পেতে আর যা যা দরকার হয়, সবই এ তিনেরই রকমফের। একটু ভাবুন তো! এত এত পড়াশোনা করে মগজাস্ত্রে শান বাড়ানো যায়? নাকি কেউ কেউ তো জন্ম থেকে ব্রিলিয়ান্ট, কেউ কেউ তো আবার বরাবরই একটু বেশি... এ কথা মোটেও ঠিক নয়। কারণ, নিষ্ঠা এবং অনুশীলনে সবই মেলে, অন্ততপক্ষে অনেকটাই। আপনি চেষ্টা করে হয়তো আইনস্টাইন হতে পারবেন না। কিন্তু নিজের আইকিউ লেভেল বাড়িয়ে নেওয়া যায়। ব্যর্থতা সাফল্যে বদলে নেওয়া যায়। তবে শর্ত একটাই- ধৈর্য ধরে অনুশীলনটা চালিয়ে যেতে হবে। দু-চার দিনে হাল ছেড়ে বসে থাকলে চলবে না। প্রথমেই বলি, চাপ একদমই নেবেন না। দুশ্চিন্তারও কিছু নেই। ছোট ছোট অভ্যাস, ব্যায়াম, খাওয়াদাওয়া, খেলাধুলা অর্থাৎ প্রাত্যহিক জীবনজীবিকার বাইরে এগুলো মোটেও যাবে না। লাইফস্টাইলে সামান্য কিছু পরিবর্তনই যথেষ্ট।
প্রতিদিনের রুটিনে বদল...
► আমরা অনেক কাজ রিফ্লেক্সে করে ফেলি, সেগুলো করতে ব্রেনকে কোনো চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হয় না। ব্রেনকে সব সময় অচেনা জিনিসের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া অভ্যাস করুন। সকালে উঠে যে হাতে দাঁত মাজতেন, সে হাতের বদলে অন্য হাতে দাঁত মাজুন। পরে দুই মিনিট পিছু হেঁটে পায়চারি করে নিন। প্রতিদিন কারও সঙ্গে মিনিট ১০ বা ১৫ ইংরেজিতে কথা বলার অভ্যাস করুন। এভাবে ব্রেন অচেনা অভিজ্ঞতায় অভ্যস্ত হবে এবং ধীরে ধীরে ব্রেনের শক্তি বাড়বে।
► মেডিটেশন করলে যে শুধু ট্রেস কমানো যায়, তা নয়। মেডিটেশনে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ে, ধৈর্য, মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি সবই বাড়ায়। এটি মোটেও ঝামেলার নয়। শুধু নিজের শ্বাসপ্রশ্বাসের ওপর মনোযোগ বাড়াতে হবে। অন্য কোনো দিকে মন না দিয়ে একটি একটি করে শ্বাস গুনতে হবে। আর কিছু নয়। দিনে আধঘণ্টাই যথেষ্ট। টানা ৯-১০ মিনিট করে তিনবার বা ১৫ মিনিট করে দুবার করতে পারেন। ঘুম থেকে ওঠার পর হালকা এক্সারসাইজের পর এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে মেডিটেশন করা ভালো।
► খাবারে প্রচুর ফলমূল-আনাজপাতি রাখুন। তেল-ঝাল-মসলা খাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে পারলে ভালো। বিকাল বা সন্ধ্যার পর হালকা খাবার খাওয়াই স্বাস্থ্যকর।
► প্রতিদিন নিদেনপক্ষে ৪০-৪৫ মিনিট একটু হালকা ফ্রি-হ্যান্ড বা অ্যারোবিক্স করলেই চলবে। সুস্থ শরীরেই বাস করে সুস্থ মন।
► সব মানুষ একরকম নয়। কারও মস্তিষ্ক সকাল ৯টায় বেশি ক্রিয়াশীল থাকে, কারও আবার রাত ৯টায়। কেউ আবার রাত ৩টার সময় পড়াশোনায় আগ্রহ পায়। তাই নিজস্ব বায়োলজিক্যাল কক অনুযায়ী নিজের টাইম-টেবিল তৈরি করে নিন। যখন মস্তিষ্ক বিশ্রাম চাইবে, তখনই ঘুমান। অন্তত সাত ঘণ্টা।
নতুন অভ্যাস গড়ে তুলুন...
► পড়ার অভ্যাস করুন। এটা আইকিউ বাড়াতে সাহায্য করে। ভালো হয় মাঝে মাঝে ফিজিক্স বা অঙ্কের বই পড়লে। এতে মাথার যুক্তি-লজিক এবং কারণগুলো আয়ত্তের সক্ষমতা বাড়ে।
► ক্যান্ডি ক্রাশ বা এ ধরনের যে কোনো ধরনের খেলার বদলে পাজল সল্ভ করার খেলা কিংবা ওয়ার্ড গেমগুলো বেশি বেশি খেললে ভালো হয়। অতএব মোবাইল থেকে দূরে থাকাও হলো না, পাশাপাশি মস্তিষ্কচর্চাও হলো।
► ধাঁধা বা রিডল নিয়ে চর্চা করতে হবে। যুক্তিযুক্ত কারণ, এ-জাতীয় প্রশ্নোত্তরের অভ্যাস করুন। প্রতিদিন এক ঘণ্টা করা উত্তম।
► যা করবেন বলে ঠিক করে রেখেছেন, তা হঠাৎই বদলে ফেলুন। যেমন, বন্ধুকে নিয়ে চেনা রেস্তোরাঁয় যাওয়ার প্ল্যান আছে! প্ল্যান চেঞ্জ করে কোনো অচেনা রেস্তোরাঁ ট্রাই করুন। নতুন অভিজ্ঞতায় মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয়।
► নতুন কিছু যেমন- রান্না, ড্রাইভিং, সুইমিং, জাগলিং ইত্যাদি শিখতে পারেন। নতুন কিছু শেখা ও অভ্যাস করলে বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ হয়। নতুন ভাষা শেখা ও চর্চা করুন।
স্বাস্থ্যকর খাবার...
► প্রোটিন মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যকারিতা বাড়ায়। শরীরে নরএপিনেফ্রিন এবং ডোপামাইনের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে মস্তিষ্কের সচেতনতা এবং সমস্যা সমাধানে স্কিল বাড়ে।
► নিয়ম করে ডার্ক চকলেট খেলে শরীর, মন ও মস্তিষ্ককে অ্যানার্জি দেয়। এটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং ফ্যাভোনলে ভরপুর। ম্যাগনেশিয়াম এবং ভিটামিন ব্রেনে বাড়তি পুষ্টির জোগান দেয়।
► ভিটামিন ‘বি’ মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ায়। সবুজ শাকপাতা, হোল গ্রেন আটা, চিজ, ডিম এবং মাংসে ভিটামিন বি-এর পরিমাণ বেশি।
► চিপ্স, কুকিজ এবং প্রসেস্ড বা জাঙ্ক ফুড যথাসম্ভব এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে ভালো।
► দিনের প্রথম ১০ ঘণ্টা কিছু খেলেন না, শেষ ৬ ঘণ্টায় প্রয়োজনমতো খাওয়াদাওয়া করলেন, একে বলে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা আইএফ। গবেষণায় দেখা গেছে, এর ফলে ব্রেনের হায়ার লেভেল ফাংশনিং বাড়ে। এক্ষেত্রে ডায়েটিশিয়ান বা ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
আইকিউ বাড়ানোর টিপ্স...
► কোনো সমস্যা সম্পর্কে যা যা ভাবছেন, তা মাথা থেকে পুরো উবে যেতে দিয়েন না। খাতায় নোট করে নিন। এভাবে প্রতিদিন আপনার ভাবনাচিন্তা লিখে রাখার জন্য কিছুটা সময় বরাদ্দ করুন। এটা মনের ব্যায়াম। এতে সৃজনশীলতা, লজিক এবং ফোকাস বৃদ্ধি পায়।
► যা-ই পড়ুন না কেন, যথাসম্ভব দ্রুতগতিতে পড়া এবং চেষ্টা করুন ৫০০ তার কম পৃষ্ঠার বই হলে এক সপ্তাহে শেষ করতে। পড়ার গতি বাড়লে চিন্তার গতিও বাড়ে। কম সময়ে অনেক কিছু পড়ে ফেলা সম্ভব হয়।
► টিভি, সিনেমা দেখা বা বই পড়া হয়ে গেলে, যা দেখলেন বা যা পড়লেন সেটা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করুন এবং যা যা মনে হলো তা লিখে রাখুন। দেখা বা পড়ার এসব জিনিসই ভাবনাচিন্তার খোরাক জোগায়।
► যে কোনো ঘটনা অন্য কারও দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভাবার অভ্যাস করুন। প্রতিটি ঘটনার আলাদা বিশ্লেষণ পাওয়া যাবে। ব্রেনের অ্যানালাইসিস করার ক্ষমতা বাড়বে।
► যে কোনো ঘটনাকে ‘যদি এমন হতো’ পয়েন্ট থেকে বিশ্লেষণ করুন, নতুন করে ভাবুন, এতে আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়বে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল