২৩ নভেম্বর, ২০২৩ ১৬:২৫

অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বন্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার : প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বন্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার : প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধের জন্য বর্তমান সরকার অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা নিচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার রোধকল্পে বর্তমান সরকার আইন প্রণয়ন করেছে। এ আইনের যথাযথ ও কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোন আপোষের সুযোগ নেই। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সপ্তাহ, ২০২৩ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে এমন মানহীন অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য ঔষধ যারা তৈরি করবে, ব্যবহার করবে বা এটি নিয়ে যারা ব্যবসা করবে তাদের বিশেষ আদালতে বিচার করা হবে। এজন্য  সরকার বিশেষ আইন ও বিশেষ কোর্টের ব্যবস্থা করেছে। এভাবেই সরকার অ্যান্টবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এরপরও কিছু ফার্মেসিতে ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা হচ্ছে, কিছু চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার করছেন। গ্রাম পর্যায়ে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিছু ফার্মেসি অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার করছে। আইনানুগভাবে তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বন্ধই শুধু না মানবস্বাস্থ্য, প্রাণিস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য যা কিছু ক্ষতিকর সেটি নিয়ে সরকার কাজ করছে। 

তিনি আরও বলেন, ওয়ান হেলথ ধারণা সারাবিশ্বে জনপ্রিয়। বর্তমান সরকার ওয়ান হেলথ ধারণা কার্যকর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার সমন্বিতভাবে ওয়ান হেলথ বাস্তবায়নে কাজ করছে। সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, তার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে কোনো শৈথিল্য বা গাফিলতি সরকার মেনে নিচ্ছে না। 

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আরও যোগ করেন, মানুষের সুস্বাস্থ্য, নিরাপদ খাবার এবং জীবনমান উন্নত করার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা, ওষুধের যথাযথ ব্যবহার, গুণগত মানের ওষুধ তৈরি এবং এটি তৈরিতে নজরদারির ক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের সবাইকে স্ব স্ব জায়গা থেকে সচেতন থাকতে হবে, দায়িত্বশীল হতে হবে। 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইইডিসিআর-এ পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন, বাংলাদেশে এফএও-একটাড-এর কান্ট্রি লিড এরিক ব্রাম, এফএও-একটাড-এর জ্যেষ্ঠ কারিগরী উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, বিশ্ব প্রাণিস্বাস্থ্য সংস্থার কনসালটেন্ট নূর ই আলম সিদ্দিকী, বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফ্লেমিং ফান্ড কান্ট্রি গ্র্যান্ট-এর টিম লিড ডা. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ প্রমুখ।

স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক। প্রাণিস্বাস্থ্য খাতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স রোধ বিষয়ে সেমিনার পেপার উপস্থাপন করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (হিসাব, বাজেট ও অডিট) ডা. মো. আবু সুফিয়ান, মানবস্বাস্থ্য খাতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স রোধ বিষয়ে সেমিনার পেপার উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. অনিন্দ্য রহমান। 

সেমিনারে মন্ত্রী আরও বলেন, সংবিধান অনুযায়ী অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা মানুষের মৌলিক প্রয়োজন। সেখানে চিকিৎসা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং তার যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের চিকিৎসার সুযোগ নিশ্চিত করেছেন। শুধু মানুষের জন্যই নয়, প্রাণির চিকিৎসাব্যবস্থা অত্যাধুনিক করার জন্য তার নেতৃত্বাধীন সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। গবেষণাগার স্থাপন, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যবরেটরি তৈরি করা এবং প্রাণিচিকিৎসা ব্যবস্থার সুফল গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক অর্থাৎ ভ্রাম্যমাণ প্রাণি হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। প্রাণি অসুস্থ হলে তার কাছে এখন অপারেশনের যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সুবিধাসহ হাসপাতাল চলে যায়। এমনকি উপজেলা পর্যায়ে প্রাণিচিকিৎসার বিশেষজ্ঞ সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাছাড়া গ্রামেও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রাণীর ভালো চিকিৎসার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এমনকি প্রাণী থেকে যা কিছু উৎপাদন হয় তার গুণগত মানের জন্য সহায়তা করা হচ্ছে।

তিনি আরও যোগ করেন, এক সময় মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন না করার কারণে সরকার বিপুল সংখ্যক ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করেছে। ওষুধে ভেজাল দেওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কারণ মানুষের চিকিৎসা ও বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধে ভেজাল দেওয়ার ক্ষেত্রে আপোষ করা যায় না। বর্তমানে দেশে তৈরি হওয়া অনেক ওষুধ গুণগত মানসম্পন্ন হওয়ায় বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এখনও বড় বড় কোম্পানির ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য, আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার জন্য সরকার নজরদারি করছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। এর আগে, বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সপ্তাহ, ২০২৩ উপলক্ষ্যে বেলুন উড়িয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর