২৪ জুলাই, ২০২৪ ০১:২৬

আত্মগোপনে বিএনপি নেতা-কর্মীরা

সাত দিন বন্ধ নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়-বিএনপি-জামায়াতের ৫৬৪ জন কারাগারে, রিমান্ডে ১৭

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আত্মগোপনে বিএনপি নেতা-কর্মীরা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সহিংসতায় কেন্দ্র থেকে শুরু করে সারা দেশের নেতা-কর্মীরা মামলার জালে আবদ্ধ। সে মামলার রেশ কাটতে না কাটতেই শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে আবারও মামলার জালে আটকে গেছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এ ইস্যুতে দলটির স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে দেশের সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাত দিন ধরে তালাবদ্ধ নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। গ্রেপ্তার এড়াতে প্রায় সব নেতা-কর্মী এখন আত্মগোপনে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও কাল্পনিক অভিযোগ এনে নেতৃবৃন্দকে হেনস্তা করা হচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেক নেতা-কর্মীর বাসায় পুলিশি তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’ জানা যায়, চলমান কোটা আন্দোলনে দলের পক্ষ থেকে সমর্থন দেওয়ার পর থেকেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকে নিজ বাসায় অবস্থান করছেন না। অনেক নেতার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। অনেকে ফোন ধরছেন না। অনেকে মোবাইল নম্বরও পরিবর্তন করেছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নাশকতা মামলায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। ঢাকায় ৩০ মামলায় ৬ শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ অনেকে রিমান্ডে রয়েছেন। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রামে ১৪ মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ৩৫ হাজার, সিলেটে সাত মামলায় ১০ হাজার, বরিশালে পাঁচ মামলায় বিএনপির ৮ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার এড়াতে সারা দেশের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে গেছেন। এদিকে ১৭ জুলাই পুলিশি তল্লাশি শেষে তালা মেরে দেওয়ায় বন্ধ রয়েছে দলটির নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ফলে কতজন গ্রেপ্তার ও আহত হয়েছেন নেই সঠিক পরিসংখ্যান। সারা দেশের কার্যালয়গুলোর অবস্থাও একই রকম। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপির নৈতিক সমর্থন থাকলেও দলীয়ভাবে মাঠে নামার বিষয়ে শুরু থেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। এ নিয়ে নীতিনির্ধারণী ফোরামে বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। দলের পক্ষে কোটা আন্দোলনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না থাকলেও সমর্থনের ঘোষণা দেওয়ায় দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নেন।

জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে সারা দেশে বিএনপির সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরই মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জহিরউদ্দিন স্বপন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহসমবায়বিষয়ক সম্পাদক নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নাজমুল হক সনি, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইয়েদুল আলম বাবুল, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়চৌধুরী, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরব, উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহমেদ কচি, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব আবুল হাসেম বকর, পেশাজীবী নেতা ইঞ্জিনিয়ার সাখাওয়াত হোসেনসহ অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্মমহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীর বাসায় পুলিশি তল্লাশি ও হয়রানি করা হচ্ছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, দলীয় কার্যালয় বন্ধ থাকায় কতসংখ্যক নেতা-কর্মী আটক হয়েছেন তার পরিসংখ্যান করতে পারেননি। ধারণা করা হচ্ছে, সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, কোটা আন্দোলন ইস্যুতে সরকার বিএনপিকে কোণঠাসা করতে চাচ্ছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সরকার এতটাই আতঙ্কে আছে যে, আন্দোলন দেখলেই বিএনপি-জামায়াত বলে চিৎকার করে।

বিএনপি-জামায়াতের ৫৬৪ জন কারাগারে, রিমান্ডে ১৭ : কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীসহ বিএনপি-জামায়াতের আরও ৫৬৪ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের পৃথক কয়েকটি আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়াও ১৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। কারাগারে যাওয়া আসামিদের মধ্যে যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী থানার ৪৪ জন করে ৮৮ জন রয়েছেন। এ ছাড়াও তেজগাঁও থানার ৩৪, আশুলিয়া থানার ২১, মিরপুর থানার ৩৮, শেরেবাংলা নগর থানার ২, মতিঝিল থানার ৭, পল্টন থানার ৪, শাহজাহানপুর থানার ৬, রমনা থানার ২, শাহবাগ থানার ৬, কাফরুল থানার ৬, রূপনগর থানার ১২, পল্লবী থানার ১৮, কলাবাগান থানার ৩, নিউমার্কেট থানার ৮, হাতিরঝিল থানার ১৪, মোহাম্মদপুর থানার ৮, আদাবর থানার ৪, রামপুরা থানার ১৩, সুত্রাপুর থানার ৫, ওয়ারী থানার ৪১, বাড্ডা থানার ৫০, ভাটারা থানার ১৮, বংশাল থানার ৪, কোতোয়ালি থানার ৫, গুলশান থানার ৪, বনানী থানার ৩৮, কদমতলী থানার ৪৪, তুরাগ থানার ১২, উত্তরা পশ্চিম থানার ১, উত্তরা পূর্ব থানার ২৪, বিমানবন্দর থানার ২, ধানমন্ডি থানার ৭, মুগদা থানার ৬ ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ৯ জন রয়েছেন। রিমান্ডে যাওয়া ১৭ আসামির মধ্যে শেরেবাংলা নগর থানার ৬, ক্যান্টনমেন্ট থানার ২, দক্ষিণখান থানার ১, ধানমন্ডি থানার ৪ ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ৪ জন রয়েছেন। এর আগে সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমানউল্লাহ আমানসহ ১৭৩ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়। রবিবার ১৭৩ জন, শনিবার ৪৯ জন এবং শুক্রবার ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ ৭ নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়।  

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর