বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন বলেছেন, আজকে সরকার যৌক্তিক সময় দাবি করছে, বিষয়টি এমন অবস্থান থেকে দেখতে হবে। যৌক্তিক সময় নির্ধারণ করা কঠিন।
তিনি বলেন, দেশের বিষয়ে যে কোনো সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব এখন বর্তমান সরকারের। মানুষ জবাব চাইছে বিএনপির কাছে। কারণ মানুষ মনে করছে বিএনপি সরকারে চলে এসেছে। মানুষের এই পারসেপশনের বাস্তবতা অস্বীকার করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতা যা পেরেছে তা রাজনৈতিক দল করতে পারেনি; কারণ ছাত্রদের কোনো পিছুটান ছিল না।মঙ্গলবার বিকালে গুলশানের একটি হোটেলে "গণতন্ত্র উত্তরণে অন্তর্বতীকালীন সরকার তথা রাজনৈতিক দলের ভূমিকা" শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে অত্যাবশকীয় সংস্কার ও নির্বাচন প্রকৃয়াকে পাশাপাশি রাখার দাবি জানিয়েছে, রাজনৈতিক শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজ। পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এছাড়াও বৈঠকে উঠে আসে সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ে নেওয়ার তাগিদ দেয়া হয়। এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে মিলিনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় ও খান ফাউন্ডেশন।
মঈন খান বলেন, এই সরকারকে ম্যান্ডেড দিয়েছে ছাত্র-জনতা। আজকে ৫৩ বছর পরে ছাত্র-জনতা যা করছে তা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। যা কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারেনি। এর কারণও যৌক্তিক - কারণ আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় দিতে চেয়েছিলাম। আমরা ১৭ টি জীবন দিয়েছি আর ছাত্ররা ১৭ দিনে ১৭শ জীবন দিয়েছে। এ কারণেই তারা সফল হতে পেরেছে।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, গণতন্ত্র পূর্ণরূপান্তর করতে সুনির্দিষ্ট কিছু সংস্কার প্রয়োজন। কারণ সব সংস্কার নয়, এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার ও নির্বাচনকে পাশাপাশি নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে অন্তঃবর্তীকালীন সরকারের উচিত হবে পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কাঠামো পরিবর্তন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
বিএনপি যুগ্ন মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়, জনগণই দিবে অন্য কেউ নয়। এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব একটা সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। বর্তমান সরকারের উচিৎ এই মুহূর্তে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা; কারণ কেনো পাইপলাইন ছাড়া যে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে দেশ চালানো অসম্ভব।
বিএনপির এ নেতা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, একটি কুচক্রী মহল ছাত্রদের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্র করছে; এটা হতে দেয়া যাবে না। এসব ব্যাপারে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মহাসচিব সাইফুল হক বলেন, আমাদের লড়াইটা ছিল ১৬ বছরের আর ছাত্র-জনতার আন্দোলন শেষ হলো ৩৬ দিনে। ১৬ বছরে আমরা অনেক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে সরকার পতনের যে পেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিলাম, ছাত্ররা এসে শেষ ধাক্কা দিয়েছে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ছাত্র-জনতার জয় পুরো দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এখন পুরোপুরি গণতন্ত্র ফেরাতে সংস্কার জরুরি। দেশে একটা নির্বাচন ভালোভাবে করতে হলে প্রশাসনকে সাজিয়ে জনবান্ধব পুলিশ গড়ে তুলতে হবে। পুলিশ, সিভিল এডমিনিস্ট্রেশন সব রিসাইকল করে নতুন করে সাজাতে হবে।
মান্না বলেন, একটি উপযোগী ভোট করতে কতোটা সময় লাগতে পারে সে হিসেব করেই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সময় নিতে হবে। কোথায় কোথায় অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাজ করতে হবে; তা খুঁজে বের করে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সবাই মিলে রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশ সংস্কারের কাজে এগিয়ে যেতে হবে। নির্বাচনের টাইমফ্রেম বেঁধে দেয়া এই মুহূর্তে ঠিক হবে না। ড. ইউনুসেরও উচিত হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই দেশ সংস্কারের কাজ করা। ড. ইউনূসের সরকারে কোনো রাজনৈতিক দলের না থাকার কারনে নতুন সংকট সৃষ্টি হওয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পরে আমরা এখন স্বস্তির মধ্যে আছি। তবে অনেক পাপিষ্ঠ আমাদের আশ-পাশে ঘুরছে। মাঠে ময়দানে জাতীয় পাটি ঘুরে বেড়াচ্ছে; যারা ছাত্র- জনতার আন্দোলন বিবৃতি দিয়ে সমর্থন দিয়েছিল মাঠে নামেনি। তারা পতিত স্বৈরাচারের সঙ্গে মিলে নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছিল। এখন এসব শত্রুদের পরিত্যাগ করতে হবে। আন্দোলনে সকল শহীদের পরিবারকে খুঁজে বের করে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। এই সরকারকে চাপাচাপি করা যাবে না, তাদের সস্কারের সময় দিয়ে তাদের কাজে সহায়তা করতে হবে।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরু বলেন, এই আন্দোলন ২০০৮ সালে আমরাই লিড দিয়েছিলাম। এখনকার মতো ভুক্তভুগীদের সহায়তা করতে পারিনি এটা অত্যন্ত কষ্টের। ধারাবাহিক ভাবে এ আন্দোলনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্পৃতা সমান। গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতে মতো মেজর রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত আন্দোলনের ফল শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়।
দি হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ নতুন করে স্বাধীন হওয়ার পরে এখন পরিবর্তন কিভাবে তা নিয়ে ভাবতে হবে। তবে পরিবর্তন কারো মধ্যেই তেমন হয়নি। ক্ষমতার অপব্যাবহার কমাতে হবে, অতীতের স্বৈরাচার শাসকের পতন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন খোলসে আত্নপ্রকাশ করতে হবে; যদি তারা গণতন্ত্রকে দেশে আবার দেশে ফিরিয়ে আনতে চায়।
এই মুহূর্তে বিএনপিকে সবচেয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে সব পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের দায়বদ্ধ হবেন সকল নাগরিকের কাছে। কাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে তাদের হলফনামা পরীক্ষা করে মনোনয়ন নিশ্চিত করুন। বিএনপির জন্য এবারের নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হবে অত্যন্ত কঠিন। তাই তাদের ধৈর্য্য ধরে অন্তবতীকালীন সরকারকে তারা সহায়তা করুক। কারণ এই সরকার ব্যর্থ হলে বিপ্লবের সকল অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে। তবে এই মুহূর্তেই একটা নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ সামনে এনে সংবিধান সংশোধন জরুরি।
দি মিলিনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারপার্সন, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এডভোকেট রোখসানা খন্দকারের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রর সাবেক মহাসচিব নূর খান লিটন, সাংবাদিক আাশরাফ কায়সার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ফেমার সাবেক সভাপতি মুনিরা খান, মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিা ইসলাম তুলি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে সহ-সভাপতি তানিয়া রব, ড. শায়ন্ত সাখাওয়াতসহ অনেকে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত