যে সংস্কারে জাতির কল্যাণ হয় বিএনপির পক্ষ থেকে সেটিই বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে শুরু হওয়া বৈঠকের চা বিরতিতে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংস্কার নিয়ে সিরিয়াস বলেই ঐকমত্য তৈরিতে আলোচনা চালাচ্ছে বিএনপি। এ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দফাওয়ারি আলোচনা হচ্ছে। আমরা বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এগুলোর ওপর বিস্তারিত আলোচনা চলছে। সংবিধান সংস্কার দিয়ে শুরু করেছি, তারপর জুডিশিয়ারি হবে, এরপরে নির্বাচন ব্যবস্থা হবে। আমরা আলোচনা চালিয়ে যেতে চাই। আজকে যদি শেষ করতে না পারি, পরেও আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, আমরা বোঝাতে চাচ্ছি, সংস্কারের বিষয়ে কতটা সিরিয়াস বিএনপি। সংবিধান সংস্কারের মধ্যে ১৩১টা প্রস্তাব আছে, স্পেডশিটে আমরা পেয়েছিলাম মাত্র ৭০টা দফা। দফাওয়ারি আলোচনা চলছে। সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে প্রজাতন্ত্র ও রাষ্ট্রের মূলনীতি, মৌলিক অধিকারের বিষয়ে দফায় দফায় আলোচনা করব। মোটাদাগে সংবিধান সংস্কারের মৌলিক বিষয়ে তারা যে প্রস্তাবনাগুলো দিয়েছেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করব একটা জায়গায় আসার জন্য।
তিনি আরও বলেন, আর যেসব বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি সেগুলো ২৫টির মতো একমত ও আংশিক একমত হয়েছি। বাকি অধিকাংশ বিষয়ে স্পেডশিটে (রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চিঠি) আমরা একমত হতে পারিনি। স্প্রেডশিটে বিভ্রান্ত সৃষ্টি ও মিসলিড করা হয়েছে। ১৩১ দফার মধ্য বিস্তারিত আলাপ আছে। কমিশনের মৌলিক প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে আলাপ করে ঐকমত্যে আসার চেষ্টা করা হবে। যে সংস্কারে জাতির কল্যাণ হয় সেটিই বিবেচনা করা হবে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুডিশিয়ারিতে অল্প বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করছি আমাদের অনেকটা মিসলিড করার মতো হয়েছে। বিস্তারিত মতামত দিতে গিয়ে দেখা গেছে, দেড়শর বেশি দফা ছিল, যার মধ্যে আমরা ৮৯টি দফার বিষয়ে বিস্তারিত মতামত দিয়েছি। যে সমস্ত বিষয়ে হ্যাঁ-না জবাব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেখানে গিয়ে দেখলাম বিস্তর ফারাক।
তিনি বলেন. যেমন বলা আছে, আর্টিকেল ৯৫ সংশোধনী ব্যতিরেকে এখনই যদি বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়ার জন্য বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ জারি করা হয়, সেটার ক্ষেত্রে বর্তমান সংবিধানের অবস্থা বহাল রেখে বিচারক নিয়োগের অধ্যাদেশ ও তার অধীনে কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও আইনটার মধ্যে লেখা আছে, কাউন্সিল গঠন করতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিএনপি চায়, কিন্তু প্রক্রিয়া যেন সাংবিধানিকভাবে হয়। বিচারক নিয়োগের অধ্যাদেশের ক্ষমতাসহ সকল সংস্কার সাংবিধানিকভাবে হওয়া উচিত।
এই বিএনপি নেতা বলেন, যাই হোক না কেন, সেটা আনকনস্টিটিউশনাল (অসাংবিধানিক) হবে যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা কনস্টিটিউশনে (সংবিধান) গৃহীত না হচ্ছে। কারণ সেখানে অধ্যাদেশ করার মতো ক্ষমতা জুডিশিয়ারিকে দেওয়া হয়নি। সবকিছু বিধি মাফিক হওয়া উচিত।
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে বিএনপির চার সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
বিডি প্রতিদিন/কেএ