২২ আগস্ট, ২০২২ ১২:৪৩

কথার কথা

ইকবাল খন্দকার

কথার কথা

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক বড়ভাই বললেন- কী জামানা আসলো! কথা বইলাও কোনো শান্তি নাই। বলি একটা, মানুষ বোঝে আরেকটা। বলি নরমাল কথা, মানুষ অর্থ তোলে অ্যাবনরমাল। অথচ বাঙালির কথা বলাটাই সার। শুধু দুধে-ভাতে বাঙালি না, গল্পে-কথায়ও বাঙালি। কিন্তু এই কথা বলেই যদি শান্তি না পাই, যদি একটা বললে মানুষ আরেকটা বোঝে, তাহলে তো মুখ সেলাই করে রাখা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। আমি বললাম- সব ঠিক আছে। কিন্তু আসল ঘটনা খুলে না বললে বুঝবো কীভাবে, কী হয়েছে বা হতে যাচ্ছে? বড়ভাই বললেন- কী আর হবে! তোর ভাবি আমাকে হুমকি দিচ্ছে। বলছে- আমাকে নাকি লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করে ফেলবে। যেহেতু লাকড়ির দাম অনেক বেশি বেড়ে গেছে। আমি অবাক হয়ে বললাম- একটা মানুষকে লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করা কীভাবে সম্ভব? এটা কি আদৌ সম্ভব? বড়ভাই বললেন- অবশ্যই সম্ভব। কারণ, লাকড়িও এক ধরনের জ¦ালানি। আমি বললাম- সেটা না হয় মানলাম। কিন্তু আপনাকে লাকড়ি হিসেবে কেন ব্যবহার করবে? কীভাবে ব্যবহার করবে? বড়ভাই পানসে কিসিমের একটা হাসি দিয়ে বললেন- ওই যে বললাম, আজকাল কথা বইলাও শান্তি নাই, বলি একটা, মানুষ বোঝে আরেকটা; এটাই হলো আসল সমস্যা। আরেকটু ভেঙে বলি- আমি আমার বউয়ের সামনে বলেছিলাম, দিন দিন আমি শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছি। ব্যস, বউ ধরে নিলো সত্যিই আমি বুঝি ‘কাঠ’ হয়ে যাচ্ছি বা হয়ে গেছি। অতএব আমাকে জ্বালানি বা লাকড়ি হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব দিতেই পারে। কিন্তু আমি তো ‘কাঠ’ দিয়ে লাকড়ি বা জ্বালানি বোঝাইনি। আমি তো বলেছিলাম কথার কথা। ঠিক কিনা? আমার এক প্রতিবেশী বললেন- আমার পাশের ফ্ল্যাটের এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আজ যা-তা লেভেলের ঝগড়া হয়েছে। দুজন দুজনের গায়ে কেবল হাত দেওয়াটা বাকি রেখেছি। সময় মতো বাড়িওয়ালা এগিয়ে না আসলে অঘটন ঘটে যেতে পারতো। আমি জানতে চাইলাম- কী নিয়ে ঝগড়া হলো? প্রতিবেশী বললেন- কী নিয়ে আবার! কথা নিয়ে। আমি বললাম একটা, ভদ্রলোক বুঝলো আরেকটা। আমি বললাম- আপনি কী বললেন আর উনি কী বুঝলেন? প্রতিবেশী বললেন- আমার বউ প্রায়ই ছাদে কাপড় শুকাতে দেয়। আবার অনেক সময় দিতে পারে না, যেহেতু খালি থাকে না। অন্যদের শুকাতে দেওয়া কাপড়ে রশি ভরে থাকে। তো গতকাল বউ আমাকে জিজ্ঞাসা করলো ছাদের কী খবর। অন্যদের কাপড়চোপড়ে ভরে আছে নাকি খালি আছে। আমি সংক্ষেপে বললাম- ছাদ খালি। সঙ্গে সঙ্গে পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রলোক এগিয়ে এসে ঝগড়া বাধিয়ে দিল এই বলে, আমি নাকি তার টাক মাথা নিয়ে খোঁটা দিয়েছি। আসলে আমার জানা ছিল না, ‘ছাদ খালি’ বললে টাক মাথা বোঝায়। কী একটা দুরবস্থা! আমার এক বন্ধু বললো- মানুষের মাথা আজকাল কেন এত মোটা হয়ে যাচ্ছে, বুঝি না। অদ্ভুত ব্যাপার, কোনটা কথার আসল অর্থ আর কোনটা রূপক অর্থ, একদমই বুঝতে পারে না। আমি বললাম- এত ভূমিকা না দিয়ে কী হয়েছে একটু বলে ফেললে ভালো হয়। বন্ধু বললো- আমি সেদিন একজনকে ফোনে বললাম, যে পরিমাণ গরম পড়েছে, উফ! মনে হচ্ছে সৌদি আরবের মরুভূমিতে আছি। সঙ্গে সঙ্গে ওপাশ থেকে আবদার আসলো, এক কাজ করেন, উট বা দুম্বার সঙ্গে একটা সেলফি তুলে পাঠান। কী সাংঘাতিক অবস্থা বল তো! গরমের কারণে বলেছিলাম আমি আরবের মরুভূমিতে আছি। তার মানে তো এই না যে, সত্যি সত্যি আছি আর পাশেই উট-দুম্বা আছে। আমি বললাম- তা তো বটেই। এ ছাড়া উট-দুম্বা থাকলেই কী, এরা তো আর তোর সঙ্গে সেলফি তুলবে না। সেলফি তুললে ঠোঁট চোক্ষা করতে হয় না? উট-দুম্বা কি ঠোঁট চোক্ষা করতে পারে? পারে না কিন্তু। আমার এক ছোটভাই বললো- কথার কথা হিসেবে মানুষ অনেক কথাই বলে। সব কথা বিশ্বাস করতে হয় না। যারা বিশ্বাস করে, তারা মজা করে ভাত খেতে পারে না। দেখা যায় খেতে বসে গরম ভাত, অথচ মুখে লোকমা তোলার আগে ভাত আর গরম থাকে না। বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। আমি ছোটভাইয়ের কথার মর্মার্থ বোঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু বুঝতে ব্যর্থ হলাম এবং অনুরোধ করলাম বুঝিয়ে বলার জন্য। ছোটভাই বললো- বুঝিয়ে বলার আসলে কিছু নেই। আমার ছোটভাইকে ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খেতে দিলেই হলো। এই ভাত আর তার পেটে যেতে চায় না। কারণ, সে ভাত খাওয়া বাদ দিয়ে শুধু কাঁটা গোনে। ওই যে শুনেছে- ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা। আসলে সে গুনে বের করার চেষ্টা করে কাঁটা সত্যিই তিরিশটা কি না। অথচ এটা যে কথার কথা, এটা তাকে কে বোঝাবে? আমাদের সবার বোঝানো শেষ। এখন ইলিশ মাছ নিজে যদি বোঝায়, তাহলে সেটা ভিন্ন কথা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর