‘ক্লাসিক’ ভিডিও গেম টেট্রিসের অবাস্তব (অলীক) ‘কিল স্ক্রিন’-এ পৌঁছে গেছে ১৩ বছর বয়সী কিশোর উইলিস গিবসন।
গেল বছরের ২১ ডিসেম্বর একটি সরাসরি সম্প্রচারে গেমটির ১৫৭তম লেভেলে ‘গেম এন্ডিং গ্লিচ’ এ পৌঁছে দর্শকদের তাক লাগিয়ে দেয় উইলিস গিবসন। যেটি এর আগে কেউই কখনো দেখেনি।
একজন সাধারণ গেমারের ধারণা ছিল যে ৩৫ বছর পর টেট্রিসের প্রকৃত নিনটেনডো ভার্সনে অর্জন করার মতো আর কিছুই নেই। কিন্তু উইলিস গিবসনকে একজন সাধারণ গেমার হিসেবে ধরে নিলে হবে না। এই বালক অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছে। সে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এই ক্লাসিক ধাঁধার খেলাটিকে ‘ব্রেক’ করতে পেরেছে।গেমটি চালু হওয়ার প্রায় ৪০ বছর পর একজন মানুষ বৈধভাবে গেমটিকে হারিয়ে দিল-যা কেউই আগে করতে পারেনি। কিন্তু গিবসনের এই অর্জনেই বাকিরা থেমে থাকছে না। তারা এখন চেষ্টা করছে আরও উচ্চ ফলাফল অর্জন করতে। পাশাপাশি চেষ্টা করছে ‘কিল স্ক্রিন’ ত্রুটি এড়িয়ে গিয়ে যত বেশি সম্ভব সময় নিয়ে গেমটি খেলে যাওয়ার।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৪ সালে সোভিয়েতের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এলেক্সি পাজিতিনভ প্রথম এই গেমটি ডিজাইন করেন। তারপর এটি বিভিন্ন মাধ্যমে ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল বিখ্যাত এনইএস কার্টিজ গেম। পৃথিবীব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক গেমারদের কাছে টেট্রিস সবসময়ই ছিল আকর্ষণীয়। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে গেমারদের ধারণা ছিল গেমটির ২৯তম লেভেলই হয়তো এটির সর্বোচ্চ লেভেল। এই লেভেলে এসে গেমটির পড়ন্ত ব্লকগুলোর গতি এতটাই বেড়ে যেত যে, এনইএস কন্ট্রোলার ব্যবহার করে ব্লকগুলোকে ডানে বামে নড়াচড়া করানো বেশ কঠিন হয়ে যেতো-যা নিশ্চিত করতো গেমারদের পরাজয়। কিন্তু এটি আসলে গেমের ‘কিল স্ক্রিন’ (যেখানে কোডিং-এর ভুলের কারণে গেমটি থেমে যায়) নয়। গেমটির ২৯তম লেভেলে কোনো ত্রুটি ছিল না। কিন্তু যেহেতু এই লেভেলে ব্লকগুলোর গতির সাথে মানিয়ে নেওয়া অনেক কঠিন ছিল, তাই অনেকেই ধরে নিত ২৯তম লেভেলই হয়তো গেমটির ‘কিল স্ক্রিন’।
কিন্তু ২২ বছর পর টেট্রিসের জগৎ বদলে গেল ভিডিও গেমিং-এর প্রথমদিককার পেশাদার প্রতিযোগিতামূলক গেমারদের জন্য। ২০১০ সালে থর অকল্যান্ড গেমটির ৩০তম লেভেলে পৌঁছাতে সক্ষম হন। তিনি ব্যবহার করেছিলেন ‘হাইপারট্যাপিং’ পদ্ধতি যেখানে একজন গেমার তার আঙ্গুলগুলোকে এমনভাবে কম্পিত করেন, যার ফলে কন্ট্রোলার গেমের নির্দিষ্ট গতির থেকেও দ্রুত চালনা করা যায়। সেখান থেকে অন্যান্য পেশাদার গেমাররা অকল্যান্ডের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যান, যেখানে তারা নতুন নতুন ‘স্পিডরানিং’ কন্ট্রোলার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।
যার ফলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে গেমাররা আগের অকল্পনীয় ১৪৮তম লেভেলে পৌঁছে যান, যেটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গেমটির সর্বোচ্চ লেভেল ধরা হতো।
এদিকে, একটি এআই প্রোগ্রাম অবশেষে টেট্রিসের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠে, যেটিতে গেমটিকে কোডিং ও র্যাম ব্যবহার করে কিছুটা উন্নত করা হয় উচ্চ ফলাফলের আশায়। পাশাপাশি কিছু আগ্রহী ব্যক্তি গাণিতিক হিসেব-নিকেশ কষতে থাকেন, যাতে তারা ধরতে পারেন কীভাবে একজন মানুষে গেমটিকে হারাতে পারে।
২০২৩ সাল শেষ হওয়ার আগেই, পুরাতন টেট্রিস প্লেয়াররা ধরে নেন, একজন নিবেদিতপ্রাণ গেমারের পক্ষেই নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণের মাধ্যমে এই গেমকে হারানো সম্ভব। ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর গিবসন এটা করে দেখিয়েছে। সে গেমটির ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যে কিনা সত্যিকারের ‘কিল স্ক্রিন’ অর্জন করতে সক্ষম হয়। গেমটি চালু হওয়ার প্রায় ৪০ বছর পর এটা করে দেখিয়েছেন গিবসন। যা এর আগে কেউই করতে পারেনি।
টেট্রিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মায়া রজার্স জানিয়েছেন, যেহেতু আমরা এই বছরেই টেট্রিসের ৪০ বছরপূর্তি পালন করছি, এই ধরনের অর্জন আমাদের কাছে গেমটির প্রতি আগ্রহীদের আবেগ ও নিবেদনকেই ফুটিয়ে তোলে।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত