২০ জানুয়ারি, ২০২৪ ২১:৫৯

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়ার ৪০ বছর পর যোগদানের চিঠি

অনলাইন ডেস্ক

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়ার ৪০ বছর পর যোগদানের চিঠি

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে ষাটোর্ধ্ব দীনবন্ধু ভট্টাচার্য, অচিন্ত্য আদক এবং কালীধন বন্ধ্যোপাধ্যায়

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের চাকরির জন্য যখন আবেদন করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার দীনবন্ধু ভট্টাচার্য তখন তিনি যুবক। বহু কাঠ-খড় পোড়ানোর পর অবশেষে বৃহস্পতিবার এসেছে সেই বহুপ্রতীক্ষিত চাকরির চিঠি। দীনবন্ধু ভট্টাচার্যের বয়স এখন ৬৪।

আশির দশকের কথা। প্রাথমিক শিক্ষকের পদে চাকরির জন্য পরীক্ষাও দিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ হয়নি বলে অভিযোগ। দায়ের হয় মামলা, তবে সুরাহা হয়নি। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পর নিয়োগের চিঠি এসেছে বটে কিন্তু তার মাঝেই পেরিয়ে গেছে প্রায় ৪০ বছর।

দীনবন্ধু  ভট্টাচার্য একা নন, তার মতো আরও ৬২ জন রয়েছেন, যারা দীর্ঘ লড়াইয়ের পর চাকরির চিঠি পেয়েছেন বটে কিন্তু তারা ‘অবসর নেওয়ার’ বয়সসীমা অতিক্রম করেছেন।

চাকরির চিঠি হাতে পেয়ে কী করতে হবে প্রথমে বুঝতেই পারেননি দীনবন্ধু ভট্টাচার্য।

তিনি বলেছেন, “প্রাথমিক শিক্ষকের জন্য যখন পরীক্ষা দিয়েছিলাম তখন আমি যুবক। সদ্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক। চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে করতে এখন আমার বয়স ৬৪। গতকাল হাতে অ্যাপয়েন্টমেন্টের চিঠি পেয়েছি। আমি একা নয়, আমার মতো ৬৬জন এই চিঠি পেয়েছে। এর মধ্যে ৪জন তো বেঁচেই নেই।’

চিঠি হাতে তিনি ছুটে গিয়েছিলেন, পান্ডুয়ার চক্র বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে। তার মতো আরও একাধিক ব্যক্তিই ছুটে যান সেখানে, চিঠির ‘মর্মার্থ বুঝতে’।

ঘটনা প্রবাহ :

বাম আমলে ১৯৮৩ সালে শিক্ষক নিয়োগের চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিলেন দীনবন্ধু ভট্টাচার্য, অচিন্ত্য আদক, কালীধন বন্দ্যোপাধ্যায় মতো আরও অনেকেই। চাকরির জন্য ইন্টার্ভিউও হয়েছিল সে বছর।

“তখন আমার বয়স ২৭-২৮ হবে। প্রাথমিক শিক্ষকের জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ইন্টার্ভিউয়ের পর আমাদের নির্বাচনও হয়, কিন্তু সেই প্যানেল বাতিল হয়ে যায়। আমরা সেই বছরই আদালতের দ্বারস্থ হই। সমস্ত কিছু বিক্রি করে এতদিন সেই মামলা চালিয়েছি,’’বলেছেন কালীদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনিও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের চিঠি পেয়েছেন হুগলি জেলা পরিষদের কাছ থেকে।

নিয়োগ সংক্রান্ত ওই মামলা চলছিল কলকাতা হাইকোর্টে। দীর্ঘ সময় ধরে মামলা চলে। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের আগস্ট মাস থেকে তাদের চাকরিতে নিয়োগ করার কথা বলেছে আদালত।

“১৯৮৩ সালে জুনিয়র বেসিক ট্রেনিং দেওয়া হত। ওই বছর সারা রাজ্য জুড়ে যে নিয়োগ হয়, সে সময় কেউ কেউ নিযুক্ত হয়েছেন, কেউবা হননি। সে সময় নিয়ম ছিল ৬০ শতাংশ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিকাক্ষক নেওয়া হবে, এবং বাকি যাদের প্রশিক্ষণ নেই কিন্তু যোগ্য তাদের নেওয়া যেতে পারে,“ বলেছেন রাজ্যের নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহন দাস পণ্ডিত।

তার কথায়, “অন্যদিকে, মামলাকারীদের দাবি ছিল, যারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তাদের সবাইকে প্রাথমিক শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করতে হবে। এই দাবি জানিয়ে তারা আদালতের দ্বারস্থ হন,’।

“৩০ বছর পর ওই মামলার যে রায় বেরোয় ২০১৪ সালে সেটা রাজ্য সরকার মানতে চায়নি, তাই সেই মামলা আবারও চলতে থাকে। অবশেষে ২০ ডিসেম্বর হাই কোর্ট নির্দেশ দেয় চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগের। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে আদালতকে জানানোই হয়নি আবেদনকারীদের বয়সসীমা ৬০ অতিক্রম করেছে এবং ৪জন বেঁচে নেই।”

তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন, শিক্ষা দফতরের অনুমোদন ছাড়া কীভাবে জেলা পরিষদের নিয়োগের চিঠি পাঠায়।

“রাজ্য সরকারের উচিত ছিল খোঁজখবর নিয়ে আদালতকে সঠিক তথ্য দেওয়া। সেটা তারা করেনি। বরং রাতারাতি নিয়োগের চিঠি পাঠিয়েছে,” বলেছেন তিনি।

এ বিষয়ে অবশ্য বিশেষ মন্তব্য করতে চাননি হুগলি জেলা পরিষদের কেউ।

নিয়োগপত্রে সই রয়েছে হুগলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন শিল্পা নন্দীর। জেলা পরিষদের তৃণমূলের সদস্যের দাবি, আদালতের রায় সংক্রান্ত নথিতে নাম ঠিকানার উল্লেখ থাকলেও বয়সের কথা বলা নেই।

অন্যদিকে মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের ওই জেলা পরিষদের সদস্য সুবীর মুখোপাধ্যায়ও।

জেলা পরিষদের সদস্য সুবীর  মুখোপাধ্যায় বলেন, “কোর্টের নিয়োগ সংক্রান্ত রায় অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমার আর কিছু বলার নেই।”

সূত্র : বিবিসি বাংলা

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর