১১ জুলাই, ২০২৪ ০৯:৫৪

পুরুষদের আত্মহত্যার জন্য নারীদের দায়ী করলেন দক্ষিণ কোরীয় রাজনীতিক

অনলাইন ডেস্ক

পুরুষদের আত্মহত্যার জন্য নারীদের দায়ী করলেন দক্ষিণ কোরীয় রাজনীতিক

ফাইল ছবি

পুরুষদের আত্মহত্যা বাড়ার জন্য নারীদের দায়ী করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার এক রাজনীতিবিদ। দেশটির রাজধানী সিউলের সিটি কাউন্সিলর কিম কি-ডাক বলেছেন, সমাজে নারীদের কর্তৃত্ব বাড়তে থাকায় পুরুষদের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। তবে কোনও প্রমাণ দেওয়া ছাড়াই এমন মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন কোরীয় এই রাজনীতিবিদ।

এক প্রতিবেদনে কিম-কি ডাক যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, কয়েক বছর ধরে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় পুরুষদের জন্য চাকরি পাওয়া এবং তাদের বিয়ের জন্য মেয়ে পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া সম্প্রতি নারীপ্রধান সমাজে বদলে যেতে শুরু করেছে। এই বদল পুরুষদের আত্মহত্যার চেষ্টা বাড়ার জন্য আংশিকভাবে দায়ী হতে পারে।

বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়াতেই আত্মহত্যার হার সবেচেয়ে বেশি। তাছাড়া লিঙ্গ সমতার দিকে থেকেও দেশটির রেকর্ড খুবই খারাপ। কাউন্সিলর কিমের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। দেশটিতে পুরুষ রাজনীতিবিদদের এ ধরনের একাধিক মন্তব্যের তালিকায় নতুন করে যোগ হল কিমের এই মন্তব্য।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রাজনীতিবিদ কিম-কি-ডাক সিউলের হান নদীর সেতু এলাকায় কয়েকটি আত্মহত্যার চেষ্টা সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের সময় ওই মন্তব্য করেন।

আত্মহত্যার তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন সিটি কাউন্সিলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, নদীতে আত্মহত্যার চেষ্টার সংখ্যা ২০১৮ সালের ৪৩০ জন থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ১০৩৫ জন হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষের অনুপাত ৬৭% থেকে বেড়ে ৭৭% হয়েছে।

এই পরিসংখ্যান তুলে ধরতে গিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করে কাউন্সিলর কিম এর পেছনে নারীদের দায়ী করেন। তবে আত্মহত্যা প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞরা এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সিউলর ইওনসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ের অধ্যাপক সং হান বলেন, যথেষ্ট প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের দাবি করা খুবই বিপজ্জনক ও বোকামি। তিনি বলেন, গোটা বিশ্বেই নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি। যুক্তরাজ্যসহ অনেকে দেশে ৫০ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ আত্মহত্যা।

অধ্যাপক সং হান বলেন, পুরুষদের আত্মহত্যার চেষ্টা বেশি হারে বেড়ে যেতে থাকার কারণ নিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে গবেষণা করা উচিত। কাউন্সিলর এটিকে লিঙ্গ সংঘাত হিসেবে তুলে ধরেছেন, এটি খুবই দুঃখজনক।

দক্ষিণ কোরিয়ায় পূর্ণ সময়ের কাজের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সংখ্যায় যথেষ্ট সংখ্যায় পার্থক্য আছে। নারীরা অসোনুপাতিক হারে অস্থায়ী বা পার্ট টাইম কাজ করছে। বেতনের ক্ষেত্রে তারতম্য কমে আসছে। তবে তারপরও নারীরা গড়ে পুরুষদের চেয়ে ২৯ শতাংশ কম বেতন পেয়ে থাকে।

সম্প্রতি কয়েক বছরে দক্ষিণ কোরিয়ায় নারীবাদ বিরোধী আন্দোলন বেড়েছে। কিছু তরুণ বলছে, নারীদের জীবন মান উন্নয়নের চেষ্টায় তাদের সুযোগ সুবিধা কমেছে।

তরুণ সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিল রেখেই কাউন্সিলর কিমের প্রতিবেদনে উপসংহার টেনে বলা হয়েছে, নারী প্রধান প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য লিঙ্গ সমতা নিয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে যাতে নারী ও পুরুষ উভয়েই সমান সুযোগ পেতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’ এ এই প্রতিবেদনের তীব্র সমালোচনা করছে মানুষ। তারা একে ‘অপ্রমাণিত’ ও ‘নারীবিদ্বেষী’ আখ্যা দিয়েছে।

সূত্র- বিবিসি।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর