শিরোনাম
২৬ আগস্ট, ২০২৪ ১৮:২৮

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বিশ্বমানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে যে শহরগুলো

অনলাইন ডেস্ক

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বিশ্বমানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে যে শহরগুলো

বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ভয়াবহতা নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা আশঙ্কা বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ক্লাইমেট সেন্ট্রাল পরিচালিত এই গবেষণা, যা নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত হয়েছে, দাবি করেছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে।

গবেষণায় বলা হচ্ছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পূর্বাভাসের চেয়ে তিন গুণ বেশি হতে পারে, যা আগে কল্পনাও করা হয়নি। বিশেষ করে, ভিয়েতনামের দক্ষিণাঞ্চল, থাইল্যান্ডের পাতায়া, চীনের উপকূলীয় এলাকা, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স, ভারতের মুম্বাই, মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া এবং ইরাকের বসরা শহরকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সবগুলো শহরই সমুদ্রের কাছাকাছি অবস্থিত এবং জনবহুল অঞ্চল হওয়ায় সেখানকার ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনাও অনেক বেশি।

ভিয়েতনাম: 
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনাম, বিশেষ করে এর দক্ষিণাঞ্চল, চরম বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। এখানে গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক অঞ্চল, পর্যটনকেন্দ্র এবং বিনোদনকেন্দ্রগুলো সমুদ্রের ক্রমবর্ধমান উচ্চতার কারণে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

থাইল্যান্ড:
পাতায়া, যা মধুচন্দ্রিমার জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য, এবং এর দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার কারণে ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়তে পারে। প্রতিবছর লাখো পর্যটকের আকর্ষণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলের জন্যও বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

চীন:
চীনের উপকূলীয় এলাকা, বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরের নিকটবর্তী শহরগুলোর এক-চতুর্থাংশ ভূমি ১০০ বছরের মধ্যে পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। চীনের এই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলিতে প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস করে, যাদের জীবন, বাসস্থান এবং জীবিকা হুমকির মুখে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র: 
নিউ অরলিন্স শহর, যা ইতিমধ্যে ২০০৫ সালের ক্যাটরিনা হারিকেনের সময় ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল, এখনো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। শহরটির প্রায় ৮০ শতাংশ অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

ভারত:
ভারতের মুম্বাই, যেখানে ২ কোটির বেশি মানুষ বাস করে, আরব সাগরের তীরে অবস্থিত হওয়ায় এ তালিকায় অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

মিসর:
আলেকজান্দ্রিয়া, যা মিসরের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার কারণে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

ইরাক:
ইরাকের বসরা শহর, যা পারস্য উপসাগরের কাছাকাছি অবস্থিত এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, এখন সমুদ্রের ক্রমবর্ধমান উচ্চতার কারণে বিপর্যয়ের শিকার হতে পারে।

পরিবেশবিষয়ক বিশেষজ্ঞ দিনা আইনেস্কো সতর্ক করেছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে এসব শহরের মানুষজন ধীরে ধীরে বাস্তুচ্যুত হতে পারে,যা শুধু তাদের বাসস্থানই নয়, বরং তাদের জীবিকা, ব্যবসা-বাণিজ্য, এবং সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, এবং ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি, দুর্ভিক্ষ ও যুদ্ধের মতো চরম পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। তাই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিকে নিছক পরিবেশ বিপর্যয় হিসেবে দেখার সুযোগ নেই; এটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা এবং মানবজীবনের জন্য এক বড় হুমকি।

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর