বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

ডিমিউচুয়ালাইজেশন কার্যকরের মাধ্যমে নতুন কাঠামোয় যাচ্ছে শেয়ারবাজার

ডিমিউচুয়ালাইজেশন কার্যকরের মাধ্যমে নতুন কাঠামোয় যাচ্ছে শেয়ারবাজার

নতুন কাঠামোয় যাচ্ছে শেয়ারবাজার। শেয়ারবাজার থেকে অর্জিত লভ্যাংশ এখন পাবেন বিনিয়োগকারীরা। বহুল আলোচিত মালিকানা বিন্যস্তকরণ বা ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন কার্যকরের মাধ্যমে আমূল কাঠামো পরিবর্তন হচ্ছে স্টক এঙ্চেঞ্জের। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান থেকে মুনাফাভিত্তিক কোম্পানিতে রূপান্তরিত হবে। এর লাভ-লোকসান শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বণ্টন হবে। এ ছাড়া স্টক এঙ্চেঞ্জ পরিচালনায় বর্তমান সদস্যদের প্রভাব থাকবে না। এমনকি পাঁচ বছর পর বর্তমান সদস্যদের বাইরেও অন্য যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্রোকারেজ সেবাভিত্তিক ব্যবসা করার লাইসেন্স নিতে ও ব্যবসা করার সুযোগ পাবেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইন পাসের পর আজ থেকেই ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জে (ডিএসই) এ পদ্ধতি কার্যকর হচ্ছে। চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জে (সিএসই) অতিশীঘ্রই এ পদ্ধতি চালু করা হবে। জানা গেছে, এত দিন একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল ডিএসই। কিন্তু অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ লভ্যাংশ জমা হয়। এ ছাড়া এর পরিচালনা পর্ষদে শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টরা থাকায় বাজার প্রভাবিত করে বিভিন্ন শেয়ার কারসাজির অভিযোগ ওঠে। ২০১০ সালে বড় ধরনের কারসাজির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি এ অভিযোগ পেয়ে শেয়ারবাজার পদ্ধতিকে ডিমিউচুয়ালাইজেশনের সুপারিশ করে। ওই সুপারিশে সরকার এ আইন পাস করে। নতুন পদ্ধতি চালু হলে স্বাধীন পরিচালকদের মধ্য থেকেই স্টক এঙ্চেঞ্জের চেয়ারম্যান হবেন। তবে পরিচালনা পর্ষদ ভোটের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচন করবে। দুই স্টক এঙ্চেঞ্জের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ, এঙ্চেঞ্জগুলোয় কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সিকিউরিটিজে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করাই মূল কাজ হবে। ডমিউচুয়ালাইজেশন হলে ডিএসই ও সিএসইর পরিচালনা পর্ষদে নিজেদের শেয়ারহোল্ডারদের পাশাপাশি স্বাধীন পরিচালক থাকবে। তবে স্বাধীন পরিচালকের সংখ্যা বেশি হবে। এ ছাড়া স্টক এঙ্চেঞ্জের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একজন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হবে, যিনি স্বাধীন পরিচালকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন।

চেয়ারম্যান পদের জন্য শেয়ারবাজারের ওপর সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষ ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। গতকাল ডিএসইর সদস্যদের মধ্যে চারজন পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন; বাকি নয় সদস্য স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত হবেন। নতুন কমিটি ডিমিউচুয়ালাইজেশন পদ্ধতিতে বাজার পরিচালনা করবে। ডিএসইর সব সদস্য লভ্যাংশ পেলেও একক নিয়ন্ত্রণ হারাবেন। ফলে কারসাজির আশঙ্কা কমে যাবে। ডিমিউচুয়ালাইজেশন পদ্ধতি কার্যকর হওয়ায় কোনো ব্রোকারেজ হাউস কোনো ধরনের অপরাধ করলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে না। বাতিল করলে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আগে যে কোনো সময় লাইসেন্স বাতিল করতে পারত। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হাউসগুলোকে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করতে পারবে। অপরাধ অনুযায়ী সর্বোচ্চ এ জরিমানা হতে পারে ১০ কোটি টাকা। শেয়ারবাজারের লেনদেনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে সরকার স্টক এঙ্চেঞ্জকে ডিমিউচুয়ালাইজড করার উদ্যোগ নেয়।

১৯৯৬ সালের পর ২০০৯ ও ২০১০ সালের শেয়ার কারসাজির সঙ্গেও স্টক এঙ্চেঞ্জের পরিচালকরা জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর ফলে নতুন এ পদ্ধতি কার্যকর হতে যাচ্ছে শেয়ারবাজারে। ডিমিউচুয়ালাইজেশন পদ্ধতি নিয়ে ২০১০ সালের শেয়ার কারসাজি তদন্তে গঠিত কমিটির চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, দীর্ঘ সময় পর এ পদ্ধতি চালু হয়েছে এটা খুবই ভালো। কিছু জটিলতা থাকলেও বাজারের জন্য ইতিবাচক এ পদ্ধতি। এর ফলে কারসাজি ঘটার আশঙ্কা কমে যাবে।

 

সর্বশেষ খবর