বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
অবকাঠামো উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

পায়রা বন্দরের কাজ শুরু হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পায়রা বন্দরের কাজ শুরু হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে

সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে ভারত, চীন, নেদারল্যান্ডসসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশের আগ্রহ থাকলেও প্রাথমিক পর‌্যায়ের কাজ শুরু হবে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নেই। এ লক্ষ্যে আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হচ্ছে। এটি অনুমোদন হলে চলতি অর্থবছর থেকেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের পুরো অর্থই দেওয়া হবে সরকারি তহবিল থেকে।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্র পরিসরে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম শুরু করার মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।

এর মধ্যে রয়েছে : জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে পায়রা বন্দরের যোগাযোগ স্থাপনে রজপাড়া পর্যন্ত ৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার চারলেন সড়ক নির্মাণ, ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি সেতু নির্মাণ, বন্দরের জন্য ৬ হাজার ৬৯ একর ভূমি অধিগ্রহণ, এক লাখ বর্গফুট আয়তনের ওয়্যারহাউস নির্মাণ, রামনাবাদ থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার নৌপথ ড্রেজিং, ৫০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ৫তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ এবং বন্দর সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামসহ বেশকিছু প্রতিরক্ষামূলক কার্যক্রম।

কর্মকর্তারা জানান, পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে তিন বছরে, যার মেয়াদ শেষ হবে ২০১৮ সালে। এর মধ্যে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫৩০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, পরের অর্থবছর ৪৯৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছর ১০০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে ১৬ একর জায়গার ওপর সীমিত ভৌত অবকাঠামো সুবিধা যেমন : পন্টুন, ক্রেন, নিরাপত্তা ভবন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ইত্যাদি উন্নয়নের মাধ্যমে বন্দর টার্মিনাল তৈরি করা হলেও এখনো পণ্য ওঠানামা বা খালাস করা হচ্ছে না। তবে পূর্ণাঙ্গ পায়রা বন্দর ব্যবস্থা গড়ে ওঠা না পর্যন্ত বহির্নোঙ্গরে বাণিজ্যিক জাহাজ আনার মাধ্যমে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে পণ্য খালাসের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এতে আরও উলে­খ করা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯৫ শতাংশ কার্গো ওঠানামা করে। চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন এলাকায় আবাসিক ও শিল্প স্থাপনা গড়ে ওঠায় এ বন্দরের আর উন্নয়নের পর‌্যাপ্ত জায়গা নেই। অন্যদিকে পশুর নদীতে পলি পড়ার কারণে নদীর নাব্যতা হারাচ্ছে ফলে মংলা বন্দরে জাহাজ চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এ দুটি বন্দর দিয়ে দেশের প্রায় সিংহ ভাগ পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রয়োজন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক পর‌্যায়ে পায়রা বন্দরে অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রস্তাবটি প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের ব্যাপারে মতামতে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (ভৌত অবকাঠামো বিভাগ) আরাস্তু খান উলে­খ করেন, পায়রা দেশের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর। এর অবস্থান দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দরের অবকাঠামো সুবিধাদি সৃষ্টি করা হলে দেশের অভ্যন্তরে এবং উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য প্রসারে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রসঙ্গত, সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে নেদারল্যান্ডস সরকার। পাশাপাশি পায়রা বন্দর নির্মাণে চীন ও ভারতেরও আগ্রহ রয়েছে। ডেনমার্কের একটি কোম্পানিও বিনিয়োগ করতে চাইছে এই সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পে।

সর্বশেষ খবর