বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
পোশাকশিল্পে নতুন সম্ভাবনা ‘নিট পল্লী’

১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে শান্তিনগর চরে

রুহুল আমিন রাসেল

১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে শান্তিনগর চরে

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের নতুন সম্ভাবনা এখন শান্তিনগর চরের ‘নিট পল্লী’ প্রকল্প। অত্যন্ত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এ প্রকল্প গড়ে উঠছে নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও সোনারগাঁ এলাকায় তিন নদীর মোহনায় জেগে উঠা চরে। এ প্রকল্পে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন পোশাকশিল্প মালিকরা। প্রতিবছর ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের নিট পোশাক পণ্য রপ্তানি করে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তবে সম্ভাবনার এই ‘নিট পল্লী’ প্রকল্প গত ১ বছর ধরে এগোচ্ছে ধীরগতিতে, পুরোপুরি বাস্তবায়নে আরও ২ বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বেজা। নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) প্রস্তাবিত এ ‘নিট পল্লী’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রীর কার‌্যালয়ের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

শান্তিনগর চরে ১ হাজার ৪৫০ একরের বিশাল এ ‘নিট পল্লী’ এখন সরকারের অগ্রাধিকার-মূলক। এ প্রকল্প ঘিরে ‘নিট পল্লী’র পাশাপাশি শান্তিনগর চর হতে পারে একটি অসাধারণ পর্যটন এলাকা। এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএ প্রথম সহসভাপতি এস. এম. আসলাম সানি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শান্তিনগর চরে পূর্ণাঙ্গ ‘নিট পল্লী’ গড়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিকাশমান অর্থনীতিতে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে চাই। এক্ষেত্রে সরকার যত দ্রুত আমাদের হাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে জমি বুঝিয়ে দেবে, ততই দ্রুতগতিতে আমরা ‘নিট পল্লী’ গড়তে সক্ষম হব। এই প্রকল্পটি অতিদ্রুত সম্পন্ন করা যাবে বলেও মত দেন তিনি।

তবে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা ধীরগতি আছে। সেখানে নদী ভাঙন নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। আদালতেরও কিছু নির্দেশনা আছে। আদালতের নির্দেশনার বাইরে আমরা কিছু করতে পারব না। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে শান্তিনগর চরের জমিগুলো টুকরো-টুকরো। তবে কিছু জমি আমাদের হাতে পেয়েছি। আরও জমি লাগবে। বিষয়টি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন কাজ করছে। সব মিলিয়ে পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আরও দুই বছর সময় লাগবে বলে জানান তিনি। এর আগে ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর ‘নিট পল্লী’ স্থাপনে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মারকলিপি দেয় বিকেএমইএ। ওই স্মারকলিপিতে বিকিএমইএ বলেছে, শান্তিনগর চরে গড়ে উঠা কম-বেশি প্রায় ১ হাজার একর জমিতে ‘নিট পল্লী’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন/প্রতিস্থাপন, কর্মসংস্থান, রপ্তানি ও বেকারত্ব দূরীকরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে পুরো এলাকাটি কেন্দ্রীয় বর্জ্যশোধনাগার বা সিইটিপি তৈরি, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমানো এবং গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে কয়লার মাধ্যমে বয়লার পরিচালনা করে স্টিম সরবরাহ করা, শ্রমিকদের জন্য ডরমিটরি নির্মাণ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, পুরো চরকে পর্যটনশিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা, একটি ফায়ার স্টেশন গড়ে তোলা, বিশ্ব মানের ৫ তারকা হোটেল নির্মাণ, হেলিপ্যাড ও অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রস্তাব দিয়েছে বিকেএমইএ। সিঙ্গাপুরের ন্যায় শান্তিনগর চরকে কেন্দ্র করে একাধিক ইনল্যান্ড কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করে লোডিং-আনলোডিংয়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে বলেও জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। বিকেএমইএ আরও বলেছে, শান্তিনগর চর (সরকারি খাস জমি) অঞ্চলটিকে ‘নিট পল্লী’ হিসেবে গড়ে তুলতে বিকেএমইএ’র নামে বরাদ্দ করতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নির্দেশনা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান। এক্ষেত্রে বিকেএমইএ প্রয়োজনে আরও অধিক জায়গা অধিগ্রহণ করে নিট পল্লীর জন্য জায়গা সম্প্রসারণ করারও প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে শীতলক্ষ্যা নদীটি নিট শিল্পের ডাইংয়ের বর্জ্য থেকে দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে নিট শিল্পের বিকাশের প্রক্রিয়াটি আরও দ্রুত হবে। দেশের অর্থনীতি ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।  প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের এই মেয়াদের ৫ বছরে তৈরি পোশাক পণ্যের মোট রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর