বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উন্নয় একাত্মভাবে কাজ করছি

মেজর (অব.) ডা. মো. রেজাউল হক, চেয়ারম্যান, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড

আলী রিয়াজ

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উন্নয় একাত্মভাবে কাজ করছি

দীর্ঘ ২২ বছর প্রবাস জীবন ছেড়ে বাংলাদেশের মানুষের সেবায় দেশে এসেছি। প্রবাসে অনেক ভালো থাকতে পারতাম। কিন্তু দেশের মাটির টানে ফিরে এসেছি। সেনা অফিসার হিসেবে চাকরি শুরু করে জীবনবাজি রেখে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সেই অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই এখন সংগ্রাম করছি। আগামীর বাংলাদেশ, অর্থনৈতিক মুক্তি, ব্যাংকিংসহ নানা বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ডা. মো. রেজাউল হক। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রবাসে থেকেই সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। বাংলাদেশের কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিকে নিয়ে ১৯৯৫ সালে যাত্রা করে আমাদের ব্যাংক। বর্তমানে দেশের শীর্ষ স্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের অন্যতম আমাদের ব্যাংকের সারা দেশে ১১১টি শাখা রয়েছে। শুধু বাণিজ্য নয় মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় আমি ব্যক্তিগতভাবে সারা দেশে স্বাস্থ্য ক্যাম্প পরিচালনা করছি।

রেজাউল হক আরও বলেন, বাংলাদেশে দ্বিতীয় প্রজম্নোর ব্যাংক হিসেবে এসআইবিএল সবার উপরে রয়েছে। প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবায় সুবিধা দিয়ে গ্রাহকদের  মানবিক বিবেচনায় রেখে ব্যবসা করি। গত বছর কোনো ব্যাংকই ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দেয়নি। সেখানে এসআইবিএল ১৮ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের ৩৫ শতাংশের বেশি এসএমই এবং মাইক্রোফিন্যান্সে দিয়েছি। এখন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। সফট লোন পেলে আমরা মাইক্রোফিন্যান্সে আরও বেশি বিনিয়োগ করব।

দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংক সব সময়ই সহনশীল। বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় এসআইবিএলের ঋণ বিতরণ ও আদায় নিয়ে প্রশংসা করেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রমের সঙ্গে একাÍভাবে কাজ করছি। সেজন্য এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে এগিয়ে আছি। রংপুরে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের চুক্তি করেছি। শুধু ব্যবসা নয় মানুষের সেবায় কাজ করার উদ্দেশ্য নিয়ে এসআইবিএলের যাত্রা। চেয়ারম্যান হিসেবে আমাদের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে আমাকে।

ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ১৯৮৯ সালে প্রথম ব্যাংকের অনুমোদন পেলেও সেটি কার্যক্রমে যায়নি। পরবর্তীতে সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক হিসেবে আবারও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাভ করি। যে ব্যাংকের প্রায় সব উদ্যোক্তাই ছিলাম প্রবাসী নাগরিকরা। সৌদি আরবের কয়েকজন উদ্যোক্তা নিয়ে বাংলাদেশি আবেদনকারীদের মধ্যে আমি ছিলাম দ্বিতীয়। ১৯৯৫ সালে উদ্বোধন করা হয় এই ব্যাংকের। পরে ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড করা হয়। ২০০১ সালে প্রবাস জীবন ছেড়ে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে চলে আসি। নিজের দীর্ঘ কর্মজীবনের শুরুর কথা স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সিভিলিয়ান ডাক্তার হিসেবে চাকরি শুরু করে চট্টগ্রামের রামগড় হাসপাতালে পরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল ১ নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার্সে কাজ করেছি। পরে এই হাসপাতালটি ভারতের সাবরুম হরিণা আর্মি ক্যাম্পে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭৩ সালে ক্যাপ্টেন এবং ১৯৭৭ সালে মেজর পদে উন্নীত হই। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে সিরিয়ার গোলান হাইট এলাকায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রেরিত সামরিক মেডিকেল টিমে কাজ করেছি। ১৯৮৩ সালে সৌদি আরবের চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে হাসপাতালে মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়েছি। সেখানে বসেই মনে হয়েছে আমার দেশের মানুষের জন্য কিছু করা। সেই চিন্তা থেকেই বাংলাদেশে আসি। মানুষকে আর্থিক সচ্ছলতায় ভূমিকা রাখার উদ্দেশ্যেই ব্যাংক স্থাপন করার চিন্তা। তবে দেশের দরিদ্র মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যাই। চিকিৎসক হিসেবে স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করছি। সারা দেশে দরিদ্র মানুষের বিনামূল্যে ঠোঁট কাটা, তালু কাটা চিকিৎসায় ক্যাম্প পরিচালনা করছি। এযাবৎকালে মানিকগঞ্জ, বাঞ্ছারামপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ ১৪টি ক্যাম্প পরিচালনা করেছি। এসআইবিএল চেয়ারম্যান বলেন, শুধু ব্যক্তি উদ্যোগে নয়, দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়েছি। রাজনৈতিক অস্থিরতায় পেট্রলবোমায় আহত ব্যক্তিদের সহায়তা করতে আমরা আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। ঢামেকের বার্ন ইউনিটে বিছানাপত্র কিনে দিয়েছি। রেজাউল হক বলেন, এখন এসআইবিএল ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক ও ডায়ালাইসিস সেন্টার করছি। গ্রিনরোডে হাসপাতালটি চালু করা হয়েছে। এর একমাত্র উদ্দেশ্য দেশের জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া।

সর্বশেষ খবর