বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঋণ নিলে ফেরত দিতে হবে

মো. শফিকুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এসআইবিএল

আলী রিয়াজ

ঋণ নিলে ফেরত দিতে হবে

মো. শফিকুর রহমান

অর্থিক খাতের নানাবিধ সংকটের মধ্যেও দেশের অগ্রগতি আশাব্যাঞ্জক। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় আমাদের অবকাঠামো দুর্বলতা বড় বাধা। এই বাধা কাটাতে পারলে দেশের প্রবৃদ্ধি কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। দেশের অর্থনীতি ঠিক রাখতে ঋণ নিয়ে ফেরত দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে সবাইকে। দেশের অর্থনীতি, ব্যাংকিং খাতসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুর রহমান। রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে দীর্ঘ ৩৮ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতাপুষ্ট এই ব্যাংকার বর্তমানে এসআইবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বে ব্যাংকটি সক্ষমতার দিক থেকে দেশের প্রথম সারির ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে শফিকুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং খাতে এখন বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োগের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ আমাদের হাতে আছে। এই অর্থ বিনিয়োগে আনতে হবে। এজন্য চাই সরকারের সঠিক নীতি সহায়তা। বিনিয়োগ বাড়নোর জন্য সব ধরনের সুযোগ ও সুবিধা দিতে হবে। সুযোগ-সুবিধা না থাকলে কোন উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করবেন না। টাকা নিয়ে বসে থাকলে প্রবৃদ্ধি হবে না, কর্মসংস্থান হবে না। তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগের জন্য আমাদের বড় বাধা অবকাঠামো। এরমধ্যে জ্বালানি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সংকট সবচেয়ে বেশি। এই দুটি সমস্যার সমাধান করতে পারলে শিল্পখাতে একটি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। হবিগঞ্জে গ্যাস সুবিধার কারণে সেখানে অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করেছেন। গত কয়েক বছরে সেখানে একটি শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছে। এর একমাত্র কারণ সেখানে গ্যাস সংযোগ পাওয়া সহজ। এমন সুবিধা দিলে দেশের সব এলকায় শিল্প গড়ে উঠবে। এসআইবিএলের এমডি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আর্থিক অন্তর্ভূক্তিমুলক নীতি গ্রহণ করেছে। এই নীতির কারণে দেশের কয়েক লাখ প্রান্তিক মানুষ ব্যাংকিং সেবার আওতায় এসেছে, যা দেশে অর্থনীতিতে বিরাট ভুমিকা রাখতে পারে। তবে এজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকগুলো এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প), ক্ষুদ্র ঋণসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে যদি মানুষের কাছে যেতে পারে তবে অনেক বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। চলতি বছর ছিটমহল বিনিময়ের পর বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো সেখানে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে প্রমাণ হয় আমাদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম কত দ্রুত এগোচ্ছে।

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উচ্চ সুদ হার নিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। আমাদের দেশের কিছু মানুষ আছে যারা মনে করেন ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ফেরত দেব না। এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। ব্যাংক বিনিয়োগ করার জন্য বসে আছে। উদ্যোক্তরা ঋণ নিয়ে ব্যবসা করবে। যারা ঋণ নিয়ে ফেরত দিতে চান না তাদের কারণেই বড় একটি অংশ খেলাপিতে পরিণত হয়। এই খেলাপি ঋণ আদায় করে বিনিয়োগে নিয়ে আসতে পারলে ব্যাংকের সুদ হারও সিঙ্গেল ডিজেটে নেমে যাবে। এজন্য সবার সহযোগিতা দরকার। এছাড়া বিভিন্ন সময় এলসি ঋণের ক্ষেত্রেও  অনিয়মের কথা শোনা যায়। গত দুই তিন বছরে এটা কমছে। তবুও এই সমস্যাও রয়ে গেছে। এ ধরনের অনিয়মের সঙ্গে ব্যাংকের কতিপয় পরিচালক, কর্মকর্তাদের সাথে ঋণ গ্রহীতার অবৈধ যোগাযোগ থাকে। এই অনিয়ম ঠেকাতে সব ব্যাংকের সতর্ক থাকা উচিৎ। এসব বিষয়ে এসআইবিএল কঠোরভাবে সতর্ক রয়েছে। এসআইবিএল কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও গ্রাহক সেবার ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাংক বর্তমানে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। গ্রাহকবান্ধব ব্যাংক হিসেবে আমরা নিজেদেরকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। সারাদেশে এসআইবিএলের ১০৮টি শাখায় অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রয়েছে ফলে ব্যাংক গ্রাহকরা আগের চেয়ে অনেক কম সময়ে ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছে। বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং খাতে তীব্র প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে, এর মধ্যেও আমরা সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের ১৮ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছি, যেটা অন্য কোন ব্যাংক দিতে পারেনি। আমাদের সারাদেশের পাঁচশর বেশি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা রয়েছে। ঋণ প্রদান ও আদায়ের ক্ষেত্রে আমাদের সফলতা যে কোনো ব্যাংকের তুলনায় ভালো।   

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর