বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন

তিন মাসে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এ সময় খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোকে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রভিশন রাখতে হয়েছে। মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি। খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়েছে আট হাজার কোটি টাকার বেশি। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এখন মোট খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বছরের প্রথম প্রান্তিকে খেলাপির পরিমাণ বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়। তবে তার পরিমাণ অনেক বেশি হলে সেটা শঙ্কার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি অবনতির কারণেই খেলাপির পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে পুরো ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যার পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ব্যাংকগুলো অবলোপন করেছে ৪১ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৪৮ কোটি টাকা। সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোও খেলাপি এবং অবলোপনে রয়েছে একই কাতারে। গত ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে মোট অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত মার্চ পর্যন্ত তা ৪১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। শতভাগ প্রভিশন রেখে ঋণের রাইট অফ করার নিয়ম থাকলেও অনেক ব্যাংক প্রভিশনও রাখেনি। রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকেরই প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। রাইট অফ করা ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ৩৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। এরপরই জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। প্রথম প্রান্তিকে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা হয়েছে। বেসরকারি খাতের ৩৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২০ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা হয়েছে। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময়ে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। সে সময় অবলোপন করা ঋণ ছিল আরও ১৫ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রকৃত খেলাপি ছিল ৩৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন গত সাত বছরে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে সাড়ে ৬২ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম ও ভুয়া এলসির মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে ব্যাংক খাত থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ঋণ মন্দ হিসেবে চিহ্নিত হলেও তা আদায় করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে অবলোপন করতেই ব্যাংকের আগ্রহ বেশি। এর সঙ্গে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাই জড়িত। গত কয়েক বছরে অবলোপনের হার কেন বাড়ছে তা খতিয়ে দেখা উচিত। একই সঙ্গে আর যেন এমনভাবে অবলোপন করা না হয়, সে জন্য নজর রাখা উচিত।

সর্বশেষ খবর