বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

৫০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়তে চায় রূপালী ব্যাংক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

৫০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়তে চায় রূপালী ব্যাংক

মূলধন ঘাটতি পূরণে ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়তে চাইছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক। পরিচালনা পর্ষদ গত বছর বিষয়টি অনুমোদনও করেছে। তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ না পাওয়ায় বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারছে না রাষ্ট্রীয় এই ব্যাংকটি। রূপালী ব্যাংক বলেছে, আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নীতিমালা ‘ব্যাসেল-৩’ অনুযায়ী ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে যে পরিমাণ মূলধন থাকা উচিত, তার চেয়ে প্রায় ৫৪৭ কোটি টাকা কম রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণ করতেই এখন তারা বাজারে বন্ড ছাড়তে চাইছে। বর্তমানে ব্যাংকটির মূলধনের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। বন্ড ছাড়ার প্রস্তাবে মূলধন বাড়ানোর একটি কর্মপরিকল্পনাও দিয়েছে ব্যাংকটি। কর্তৃপক্ষ বলেছে, বন্ড ছাড়তে সরকার অনুমোদন দিলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মধ্যে ব্যাংকটির মোট মূলধন ২ হাজার ৩০২ কোটি টাকায় উন্নীত হবে। মূলধন বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকটি আরও বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে। ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড ঋণ বাড়াতে পারবে। এলসি খোলার ক্ষেত্রে বিদেশি ব্যাংক থেকে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে। একক ঋণগ্রহীতার সীমা বাড়বে। ফলে ক্যামেলস রেটিংয়ে ব্যাংকটির রেটিং আরও ভালো হবে, যা আমানত বাড়াতে সহায়তা করবে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠিও লিখেছেন রূপালী ব্যাংকের এমডি (অতিরিক্ত দায়িত্বে) দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী। গত ১৬ জুলাই পাঠানো ওই চিঠিতে বন্ড ছাড়ার অনুমোদনের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘আপনাদের নির্দেশনায় গত বছরের ১৩ জুলাই ব্যাংক প্রশাসনের অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং রূপালী ব্যাংককে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু অদ্যাবধি এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়নি।’ চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা। তবে এ ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।  সূত্র জানায়, ‘ব্যাসেল-৩’ অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ হারে অর্থ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ছাড়া ঝুঁকি এড়াতে পর্যায়ক্রমে মূলধন সংরক্ষণের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। রূপালী ব্যাংক বলছে, ২০১৯ সালের মধ্যে ব্যাসেল-৩ অনুসারে ন্যূনতম মূলধন ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের স্থলে সাড়ে ১২ শতাংশ এবং আরও ৩ শতাংশ হারে (লেভারেজ রেশিও) সংরক্ষণ করতে হবে। সে জন্যই তাদের মূলধন বাড়ানো প্রয়োজন। রূপালী ব্যাংক যে বন্ড ছাড়তে চাইছে তার বার্ষিক সুদের হার ১০ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশের মধ্যে নির্ধারিত হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়েছে, ৫০০ কোটি টাকা বন্ড ছেড়ে তোলার পর সেখান থেকে সিআরআর (ক্যাশ রিজার্ভ রিকোয়ারমেন্ট) হিসেবে ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখা হবে। অবশিষ্ট ৪৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা হবে। বিভিন্ন খাতে ট্রেজারি বন্ড ও সাবর্ডিনেট বন্ডে ব্যাংকটির ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ রয়েছে বলেও জানানো হয়। ব্যাংকটি আরও বলেছে, শেয়ারের বিপরীতে ডিভিডেন্ট দিতে গেলে ব্যয় অনেক বেশি। ব্যাংকটির গড় ডিভিডেন্ট প্রদানের হার ১৫ শতাংশ। করসহ প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ডিভিডেন্ট দিলে ব্যয় হয় ২৮ টাকার কিছু বেশি। অন্যদিকে বন্ডের বিপরীতে সুদ প্রদানজনিত ব্যয় কর হিসাবায়নের আগেই দেওয়া হয়। ফলে বন্ডের বিপরীতে প্রতি ১০০ টাকায় বার্ষিক সুদের হার পড়বে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ডিভিডেন্টের  চেয়ে তুলনামূলক কম হবে।

সর্বশেষ খবর