৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৯:৪২
ফুলপুর পৌরসভা নির্বাচন

ফুরফুরা মেজাজে আওয়ামী লীগ, দলীয় কোন্দলে বিএনপি

ফুলপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

ফুরফুরা মেজাজে আওয়ামী লীগ, দলীয় কোন্দলে বিএনপি

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ফুলপুর পৌরসভা নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের দৌড়ঝাপের যেন শেষ নেই। প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরছেন তারা। আর সিনেমার গানের সাথে মিলিয়ে নামকরা গায়কদের দিয়ে গান বানিয়ে রাস্তাঘাটে প্রচারণা করছেন তারা।

সর্বত্র প্রচারণায় মুখরিত, নির্বাচনী আমেজ ও সাজ সাজ রব বিরাজ করছে পৌরসভায়। হাট-বাজার, রাস্তার মোড় ও পাড়া-মহল্লায় সর্বত্রই ঝুলছে প্রার্থীদের ছবি ও প্রতীক সম্বলিত পোস্টার।

সরেজমিন ঘুরে ও ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে নৌকাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে এবার আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। তারা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। রবিবার বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এফবিসিসিআই’র সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের নেতৃত্বে একদল কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ফুলপুরে আসেন এবং নৌকা প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বাবু শশধর সেনের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন।

তাদের আগমনে এলাকায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে দলীয় নেতাকর্মীরা জানান। কিন্তু সেই তুলনায় বিএনপি অনেকটাই পিছিয়ে। তাছাড়া দলীয় কোন্দলও তাদের মধ্যে স্পষ্ট। এখন পর্যন্ত দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের পক্ষে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। ফুলপুর পৌরসভা নির্বাচনে এবার ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শশধর সেন (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. আমিনুল হক (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহজাহান (জগ), বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রকিবুল হাসান সোহেল (নারিকেল গাছ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এইচ ইউসুফ (মোবাইল)।

জানা যায়, দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে গত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছিল। তবে বিদ্রোহী থাকলেও জয় ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল বিএনপি। এবারের নির্বাচনেও বিদ্রোহী মাঠে থাকায় দলীয় প্রার্থীদের কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

দুই দলের দুই প্রার্থী ছাড়াও সাবেক দুইবারের মেয়র, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে বিদ্রোহী হওয়া মো. শাহজাহান এবারও মাঠ ছাড়ছেন না। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন তিনি। আর বিএনপির বিদ্রোহী হয়ে মাঠে রয়েছেন বিএনপির সদস্য রকিবুল হাসান সোহেল।

গত নির্বাচনে তিনি না থাকলেও এর আগের নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মাঠে ছিলেন। তখন তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এই নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় বৃহস্পতিবার সোহেলকে পুনরায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। দুই দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এইচ ইউসুফ মেয়র পদে মাঠে রয়েছেন ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী মো. আমিনুল হক (ধানের শীষ) আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী শশধর সেনকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে ভোট দুইভাগ হয়ে তখন পরাজয় হয় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর। এবার অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে বিএনপি চাচ্ছে তাদের পদ ধরে রাখতে আর আওয়ামী লীগ চাচ্ছে পদটি পুনরুদ্ধার করতে।

তাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছেন নৌকাকে বিজয়ী করতে। তারা বর্তমানে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন।

অপরদিকে, দলীয় কোন্দল ও বিএনপির একটি গ্রুপের নীরবতায় প্রচারে পিছিয়ে রয়েছে বিএনপি। নির্বাচনের আর মাত্র ৫ দিন বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত বিএনপি মনোনীত মো. আমিনুল হকের ধানের শীষের পক্ষে একজন বড় নেতাসহ উল্লেখযোগ্য কিছু নেতাকে প্রকাশ্যে ভোট চাইতে বা গণসংযোগ করতে দেখছে না ফুলপুর পৌরবাসী।

এনিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীসহ তৃণমূলের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে এবং দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে বিএনপিতে। অভিযোগ উঠেছে, বিএনপির একটি গ্রুপের নেতা কর্মীরা ধানের শীষের নির্বাচন না করে নীরব থেকে গোপনে বিদ্রোহী প্রার্থীকে সহযোগিতা করছে। তারা এখন পর্যন্ত ধানের শীষের পক্ষে কোনো প্রচারণায় নামেননি। এমন হলে ধানের শীষ প্রতীকের এই আসন ধরে রাখা কঠিন হবে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শশধর সেন বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে গতবার নৌকার পরাজয় হয়েছিল। তবে এবার জনপ্রিয়তা শীর্ষে থাকায় ও আমার পক্ষে দলের সবাই কাজ করার কারণে এসব কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র জগ প্রতীকের প্রার্থী মো. শাহজাহান বলেন, দুইবার মেয়র থাকায় জনগণের কল্যাণে অনেক কাজ করেছি। এলাকায় আমার প্রচুর জনপ্রিয়তা রয়েছে। আশা করি মানুষ আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন।

বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মো. আমিনুল হক বলেন, গত পাঁচ বছর এলাকার রাস্তাঘাটসহ প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। এতে আমার বিশ্বাস, চলমান উন্নয়নকে অব্যাহত রাখতে জনগণের রায় ধানের শীষের পক্ষেই যাবে।

তবে বিএনপির বিদ্রোহী নারিকেল গাছ প্রতীকের প্রার্থী রকিবুল হাসান সোহেল বলেন, আমার পরিবারের ও নিজের জনপ্রিয়তার কারণে আমার জয় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নারিকেল গাছ প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করলে শুধু আশ্বাস নয় হবে বাস্তব সমাধান ও পরিকল্পিত উন্নয়ন।

অপরদিকে, মোবাইল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এইচ ইউসুফ বলেন, তারুণ্যের প্রথম ভোট হোক উন্নয়নের স্বার্থে ও জনগণের পক্ষে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও দরিদ্র, অসহায়, অস্বচ্ছল মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌরবাসী ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবেন।

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চতুর্থ ধাপে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হবে ফুলপুর পৌরসভায়। ৫ মেয়র প্রার্থী ছাড়াও ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৪৪ জন ও সংরক্ষিত ৩টি ওয়ার্ডে ১৩ জন নারী প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর