৯ জুন, ২০২১ ১৬:২৭

হুইপ সামশুল হককে চট্টগ্রামে অবাঞ্চিত ঘোষণা মুক্তিযোদ্ধার সম্মান সংরক্ষণ পরিষদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

হুইপ সামশুল হককে চট্টগ্রামে অবাঞ্চিত ঘোষণা মুক্তিযোদ্ধার সম্মান সংরক্ষণ পরিষদের

পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে বিতর্কিত হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, তার পুত্র নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন এবং ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাবের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে চট্টলাবাসী। মুক্তিযোদ্ধারা ছাড়াও বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সর্বস্তরের মানুষ। 

সমাবেশে তারা হুইপ ও তার বিতর্কিত পুত্রের প্রতি জুতা প্রদর্শন করে চট্টগ্রামে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। একই সাথে হুইপ ও এমপি থেকে বহিষ্কার করে কঠিন শাস্তি দাবি করেন। 

বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম নগরীতে মুক্তিযোদ্ধার সম্মান সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশে এসব দাবি করা হয়।

সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা সম্মান সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা কাজী আবু তৈয়ব বলেন, ‘হুইপ সামশুল হক, তার ছেলে শারুন এবং তাদের পরিবার লুটপাটের প্রতিবাদ করায় মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দীন আহমদকে লাঞ্চিত করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাকে অবমাননার অর্থই হচ্ছে পুরো জাতিকে অপমান করা। এ লাঞ্চনার প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধাসহ চট্টলাবাসী মাঠে নেমেছে। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিপীড়নকারীর কাছে কখনো দেশ ও জাতীয় পতকা নিরাপদ নয়। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় সংসদ থেকে মুক্তিযোদ্ধার অবমানকারীর বহিষ্কার দাবি করছি।’

কয়েকবার হুইপ পরিবারের রোষানলের শিকার হওয়া মুক্তিযোদ্ধা সামসুদ্দিন আহমদ সমাবেশে বলেন, হুইপ, তার পুত্র শারুন এবং ভাই নবাব পটিয়াতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। পটিয়ার সব প্রকল্প থেকে তারা ২০ শতাংশ হারে কমিশন নেয়। কেউ সেখানে মাথা তুলে কথা বলতে পারে না। এক সময়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি করা ব্যক্তি এখন আওয়ামী লীগের বড় নেতা। কথায় কথায় মুক্তিযোদ্ধাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, অপমান করে। আমি হুইপ সামশুলকে এমপি পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি করছি। তার পুত্র ও ভাইকে গ্রেফতারের দাবি করছি। তাদের চট্টগ্রামে প্রতিহত করবে মুক্তিযোদ্ধারা।’

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার বিকাল ৩টার আগেই অবস্থান নিতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা। এসময় পুলিশ বাধা দেয় বিক্ষোভকারীদের। পুলিশের বাধার মুখে জড়ো হতে না পেরে তারা চেরাগী পাহাড় এলাকায় অবস্থান নেন। এরপর সবাই জড়ো হয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের অভিমুখে মিছিল সহকারে রওনা হলে ফের পুলিশের বাধা মুখে পড়েন। পরে মিছিল ঘুরিয়ে ডিসি হিল, লাভলেইন, কাজীর দেউরী, আলমাস এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জহুর আহমেদ চৌধুরীর বাসভবন হয়ে ওয়াসা মোড়ে অবস্থান নেয়।

বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন এসময় লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। অংশগ্রহণকারীদের সবাই হুইপ, তার পুত্র ও পরিবারের অনিয়ম দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে জুতা প্রদর্শন করেন। মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দীন আহমদকে ‘লুঙ্গি খুলে পেটানোর’ হুমকি প্রদান করায় হুইপ সামশুলকে এমপি ও আওয়ামী লীগের সকল পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। একই সাথে পিতা পুত্রকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতাই আনার দাবি জানান। 

মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর কাছে 'জাতীয় পতাকা নিরাপদ নয়, বাপ করেছে মেশিন চুরি, পোলা সুদ খোর সংসদটা পবিত্র করো আনো নতুন ভোর, জিয়ার বিচ্ছু এরশাদের সাপ্লাই সারা দেশে ইয়াবার টাকা বাপ-বেটায় খায়’সহ নানান মুহুর্মুহু স্লোগানে দেয়া হয়। 

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধার সম্মান সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা কাজী আবু তৈয়ব ও মহাসচিব মরহুম জহুর আহম্মদ চৌধুরীরপুত্র জসিম উদ্দিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী মাহবুবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজ আলম, মুক্তিযোদ্ধা এম এ আজিজের সন্তান ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুদ্দীন খালেদ বাহার, সাবেক ছাত্রনেতা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নওশাদ মাহমুদ চৌধুরী রানা, আওয়ামী লীগ আইন বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শওগত আনোয়ার খান, মহাসচিব উত্তম কুমার বড়ুয়া, ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আলম, অর্থ-সম্পাদক সওকত মাসুম, দপ্তর সম্পাদক মনজু, নাসির খান, উজ্জ্বল চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি নওশাদ সেলিম, সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ চট্টগ্রাম মহানগরের সহ-সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে চৈতী বসু, চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা (বীর উওম খেতাব) প্রাপ্ত এর সন্তান সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম রসুল নিশান ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বেলাল উদ্দিন, মহানগরের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন দুলাল, ৬ দফা আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকার কারণে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাক-হানাদার বাহিনী কর্তৃক ৬ টুকরো করা সাবেক চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা দানেশ চন্দ্র দেব নাথের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ চট্টগ্রাম মহানগর’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পরেশ চন্দ্র দেবনাথ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দিদার প্রধান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ চট্টগ্রাম মহানগর ও থানা কমিটির নেতৃবৃন্দ যথাক্রমে ওসমান গনি, গাজী শোহেন, বাবলু মিয়া, মো. আবাস, আমিনুল, গোলাম নবী, ওসমান গনি, হাবিবুর রহমান, পিমলু, নাঈম উদদীন, আবু তাহের রিপন, জয়নাল আবেদীন, মো. বাহার প্রমুখ।

মুক্তিযোদ্ধার সম্মান সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা কাজী আবু তৈয়ব বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত হুইপের কাছ থেকে পতাকা কেড়ে নেয়া হবে না ততক্ষণ মুক্তিযোদ্ধারা আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন পটিয়ার মানুষকে জুলুম নির্যাতন থেকে রক্ষা করুন।’

সমাবেশে পটিয়া উপজেলা যুবলীগ নেতা জমির উদ্দিন বলেন, ‘বিচ্ছু সামশু বিএনপি, জাতীয় পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে এসেছে। আওয়ামী লীগের সুদিনের কোকিল সামশুর আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কোন সম্মান নেই। তাই বিচ্ছু, তার ছেলে ও পরিবারের হাতে প্রতিনিয়তই মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা লাঞ্চিত হচ্ছে। পিতা-পুত্রের হাত থেকে পটিয়া আওয়ামী লীগকে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর