১০ নভেম্বর, ২০২২ ১৯:০৫

ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি করলে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে : হানিফ

অনলাইন ডেস্ক

ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি করলে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে : হানিফ

বক্তব্য দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ

২০১৩ সালের মতো কোনো নাশকতা, ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি করলে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে বলে বিএনপিকে সতর্ক করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি। 

বিএনপিকে সহিংসতার পথ পরিহারের আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, ‘রাস্তায় নেমে গাড়িতে আগুন দেবেন তা হতে পারে না। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করুন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনো দলের কর্মসূচিতে আমাদের বাধা নেই। স্বাধীনভাবে যেখানে খুশি সরকারের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলছেন। সকাল-বিকাল টেলিভিশন টকশোতে সরকারের সমালোচনা করছেন। প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে মিথ্যাচার করছেন। আর বলেন গণতন্ত্র নেই। সরকার সহনশীলতার পরিচয় দিচ্ছে। মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করবেন, গাড়ি ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও করবেন আর সরকার মামলা দিলে বলবেন দমন পীড়ন হচ্ছে- এ আশা করবেন না।’

কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত যৌথ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

‘বিএনপি সরকার পতনে মরিয়া হয়ে গেছে’ উল্লেখ করে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘আগামী বছরে সংকট কাটার পর সব স্বাভাবিক হয়ে গেলে বিএনপি নামক সন্ত্রাসী, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির পক্ষে মানুষ থাকবে না। এজন্য তারা এখন মরিয়া হয়ে গেছে। যেকোনোভাবেই হোক সরকার পতন ঘটাতে চায়। বিএনপি নেতারা বলেন- এক দফা এক দাবি সরকারের পতন। মামা বাড়ির আবদার।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে এটা বুঝতে হবে, আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল। এই দেশের যা কিছু অর্জন সব আওয়ামী লীগের হাত ধরে। পাকিস্তানিদের শোষণের বিরুদ্ধে, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ৭৩ বছরের মধ্যে সবমিলিয়ে কুড়ি বছর ক্ষমতায়। বাকিটা সময় আমরা বিরোধী দলে ছিলাম। আন্দোলন সংগ্রাম করে আমরা ক্ষমতায় এসেছি।’

‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা বন্ধ না করায় বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় হলো, তখন থেকেই বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলন করছে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেছে। দেশের বিচারব্যবস্থা স্বাধীন। এখন মামলা চলমান থাকলে ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দিতে হবে। এই মামলা বন্ধ না করাই আমাদের অপরাধ।’

তিনি বলেন, ‘যখন যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধীদের ফাঁসির রায় হয়েছে তখন বিএনপি-জামায়াত মিলে আন্দোলন শুরু করেছিল। কী তান্ডব তারা চালিয়েছিল? গাড়ি, ট্রেনে, সরকারি স্থাপনায় আগুন দিয়ে ধ্বংস করেছে। মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিলো একটাই, বাংলাদেশ পুড়ে ছারখার হয়ে যাক, ধ্বংস হোক। তবুও শেখ হাসিনার সরকার যেন ক্ষমতায় না থাকে। এখনো সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছে।’

‘আওয়ামী লীগ সরকার সংকটের মধ্যেও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আইএমএফ-এর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছিলেন, তারা বলেছেন দেশ যেভাবে চলছে এত করে শঙ্কার কোনো কারণ নেই। বর্তমান এর চেয়ে খারাপ অবস্থায় গেলেও বাংলাদেশ শ্রীলংকার মতো হবে না। এটা আইএমএফ এর প্রতিনিধি বলেছে।’

‘বিএনপি শাসনামলে দেশের রিজার্ভ ৩ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার থাকার পরও দেশ ধ্বংস হয়নি। আইএমএফ হিসাব করে বলেছে, বাংলাদেশে ৩৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ এখনো আছে। ৩৪ বিলিয়ন ডলার থাকার পরও দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে?’, বিএনপি নেতাদের প্রতি এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।

হানিফ বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পেয়েছি অর্থনৈতিক মুক্তি। টানা ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে। এই সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। উন্নয়ন, অগ্রগতিতে সরকার যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে নিচ্ছে ঠিক তখন স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বিএনপি এবং জামায়াত চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে।’

বিএনপি নেতারা বলেন, ‘খালেদা জিয়া গণতন্ত্র, মানবতার মা। যে খালেদা জিয়া পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করতে পারেন, তিনি কখনো মানবতার মা হতে পারেন না বরং মানবতার শত্রু। ২০১৫ সালে যখন অবরোধের ঘোষণা দিলেন তখন মানুষ এসব পালন করে না দেখে পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছেন। এদেশের মানুষ গণতন্ত্র হত্যাকারীদের কখনো বিশ্বাস করে না। ক্ষমতায়ও দেখতে চায় না।’ 

আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘দুই বছর করোনা বিপর্যয়ের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এর প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়েছে। রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে ডিসেম্বরে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি আসবে। এই সুযোগে বিএনপি মাঠে নেমে ষড়যন্ত্র করছে।’

‘বিএনপি দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য আন্দোলন করছে’ এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ করে কত মানুষ হয়? চট্টগ্রাম জেলাতেই ৯১ লাখ মানুষের বসবাস। এর ১০ শতাংশ করলেও তো ৯ লাখ মানুষ হয়। আর ৫০-৬০ হাজার লোকের জনসভা করে মির্জা ফখরুলরা বলেন, জনগণ তাদের সাথে আছে। মিথ্যাচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এসব কথা মানুষকে বুঝাতে হবে।’

যৌথসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খানম এমপি, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
    
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর