৮ জুলাই, ২০২৩ ১০:৫২

রূপালীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করল বসুন্ধরা গ্রুপ

অনলাইন ডেস্ক

রূপালীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করল বসুন্ধরা গ্রুপ

দিনমজুর বাবার অভাব-অনটনের সংসারেই বড় হয়েছেন সুইটি। পরিবারের বড় মেয়ে হয়েও পড়ালেখা করার তেমন সুযোগ পাননি তিনি। ১৬ বছর বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। স্বামীর সংসারে গিয়েও পাননি সুখের দেখা।

স্বামী আব্দুর রাজ্জাক ইটভাটায় কাজ করেন। যে টাকা মজুরি পান, তা নিয়েই জোড়াতালির সংসার। নিজের জায়গা বলতে শুধু থাকার জন্য একটা ঘর। নিজের হাতে ইট বানান সুইটির স্বামী, কিন্তু সেই ইটের ঘরে থাকার সৌভাগ্য নেই তাঁদের।

সেলাইয়ের কাজ কিছুটা শিখেছিলেন সুইটি। ভুলেও গিয়েছিলেন চর্চার অভাবে। জানতে পারলেন, কালের কণ্ঠ শুভসংঘ বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় সেলাই প্রশিক্ষণ দেবে আবার সেলাই মেশিনও দেবে বিনা পয়সায়। ভর্তি হওয়ার জন্য ছুটে গেলেন।

সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ শিখলেন। সুইটি বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারে নাই মা-বাবা। অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিছে। ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করার। ভাবছিলাম স্বামীর সংসারে গিয়ে পড়াশোনা করব।

সেখানেও অভাব আমার পিছু ছাড়ে নাই। তাই এখন আমিও মাঝেমধ্যে শ্রমিকের কাজ করি। ইটভাটায় কাজের কোনো নিশ্চয়তা নাই। এই আছে আবার এই নাই। ভাবছি নির্দিষ্ট কোনো কাজ করে পরিবারের পাশে থাকব। সে জন্য শুভসংঘ সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এসে সেলাইয়ের কাজ শিখেছি। আজ আমি বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন পেয়েছি। সেলাইয়ের কাজ করে উপার্জিত টাকা দিয়ে ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ জোগাড় করব। এই সেলাই মেশিন এখন আমার ঘুরে দাঁড়ানোর হাতিয়ার। নিজে শিক্ষিত হতে পারিনি। আমার সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করব। দোয়া করি বসুন্ধরা গ্রুপের সবার জন্য। তাঁরা আমার পরিবারকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়েছেন।’

বিরামপুর উপজেলার কাটলা দাউদপুরের বাসিন্দা ফরিদা। স্বামী-সন্তান আর শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে তাঁর সংসার। একেবারেই দরিদ্র পরিবারের বাসিন্দা হওয়ায় ছেলেমেয়ের পড়াশোনা করাতে পারছিলেন না কোনোভাবে। বাধ্য হয়েই মানুষের বাসায় বাসায় কাজ শুরু করেন। পরে ফরিদা নিজ উদ্যোগে সেলাইয়ের কাজ শেখেন, কিন্তু সেলাই মেশিন কেনার মতো সামর্থ্য তাঁর নেই। অর্ডারের জামাকাপড় নিয়ে এসে সেলাই করেন পাশের বাড়ি থেকে। সেই সেলাইয়ের কাজের টাকা দিয়ে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চালান। স্বামী মোতালেব অটো চালিয়ে যা রোজগার করেন, তা দিয়ে ছয়জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। শুভসংঘের মাধ্যমে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে জানতে পেরে কাজ জানা থাকা সত্ত্বেও নতুন অনেক কিছু শেখার জন্য সেখানে ভর্তি হন। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি সেলাই মেশিনও পেয়ে যান। ফরিদা বলেন, ‘আমার এত দিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। নিজের একটা সেলাই মেশিন হবে, কত দিনের সেই ইচ্ছা ও স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করল বসুন্ধরা গ্রুপ। এখন আর চিন্তা নেই। সন্তানদের নিশ্চিন্তে পড়াতে পারব। ধন্যবাদ বসুন্ধরা গ্রুপকে।’

রুপা মনির বয়স অল্প হলেও স্বপ্ন দেখে আকাশ ছোঁয়ার। পরিবারের বড় মেয়ে রুপা বাবার কাছে বড্ড আদরের। বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায় সে। বাবা রশিদুল ইসলাম অটোচালক। নিত্য অভাবের সংসার। দুই বেলা খাবার জোটাতেই যাদের সারা দিন লেগে যায়, তাদের জন্য ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখা দুঃস্বপ্নই বটে। সেই দুঃস্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করতে দিনরাত পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত রুপা মনি। তাকে ডাক্তার হতেই হবে। স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। বাবা রশিদুল ইসলামও অটো চালিয়ে মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চান। রুপা বলে, ‘অভাবের সংসারেও বাবা আমার পড়াশোনায় কোনো বাধা আসতে দেন না। মাস ফুরোবার আগেই তার হাত খালি হয়ে যায়। সারা জীবন তিনি কেবল কষ্টই করে যাচ্ছেন আমাদের জন্য। আমি বড় হয়ে বাবার পাশে, পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই। পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম কিছু একটা করব। একদিন বাবা জানালেন বিনা পয়সায় সেলাই শেখাবে বসুন্ধরা গ্রুপ। দেরি না করে ভর্তি হয়েছি শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। কাজ শিখেছি। একটা সেলাই মেশিনও পেয়েছি বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে। এখন সেলাইয়ের কাজ করে পড়াশোনার পাশাপাশি বাবাকে সহযোগিতা করতে পারব। আমি নিশ্চিন্তে বলতে পারি, বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতায় আমি আমার স্বপ্ন পূরণের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেলাম। বসুন্ধরা যেমন দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে, আমিও বড় হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করতে চাই।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর