১৯ আগস্ট, ২০২৩ ১১:৩২

অন্ধকারাচ্ছন্ন চরে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ

অনলাইন ডেস্ক

অন্ধকারাচ্ছন্ন চরে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ

শিক্ষা উপকরণ পেয়ে উচ্ছ্বসিত বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের শিক্ষার্থীরা

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপচর চরইমারশনের বাসিন্দা কাইয়ুম কাজী। বয়স ৩৭ বছর ছুঁই ছুঁই। পেশায় একজন জেলে। বাবার অভাবের সংসারে পড়াশোনা করার মতো সুযোগ হয়নি তাঁর।

সাত ভাই-বোনের মধ্যে চতুর্থ কাইয়ুম। নাম দস্তখত করতে পারা ছাড়া একাডেমিক কোনো শিক্ষা নেই কাইয়ুমদের। এখন বিঘায় বিঘায় ধানি জমি, পুকুর ভরা মাছ আর গোয়াল ভরা গরু-মহিষ রয়েছে। সব কিছুতে পরিপূর্ণতার ছোঁয়া।

সময়ের পরিবর্তনে তাঁদের অভাব-অনটন নেই ঠিকই, কিন্তু কিছু একটার অভাব তাঁদের আছে। শিক্ষার অভাব। শিক্ষার অভাবটা ঘোচেনি এখনো। এখন কাইয়ুম স্বপ্ন দেখেন সন্তানকে শিক্ষাদীক্ষায় মানুষের মতো মানুষ করার।

নিজের সন্তানের পাশাপাশি এলাকার শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তাইতো বিচ্ছিন্ন চরইমারশনে বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে পরিচালিত নির্মাণাধীন বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের জন্য ৬ শতাংশ জমিও দান করেছেন কাইয়ুম।
জানা গেছে, চরইমারশন একটি বিচ্ছিন্ন চর। এই চরে কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। ওখানকার শিক্ষার্থীরা পাঁচ কিলোমিটার দূরের স্কুলে গিয়ে পড়ালেখা করত।

এ জন্য পাড়ি দিতে হয় একটি খালও। খেয়া পার হয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা নিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ভুগতে হতো নিরাপত্তাহীনতায়। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় সেখানকার প্রায় দেড় শতাধিক শিশু শিক্ষার্থীকে খেয়া নৌকায় পার হয়ে পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে  স্কুলে যেতে হতো। পাঠগ্রহণে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করত এই শিশুরা। পাশাপাশি এত দুর্ভোগ নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কারণে স্কুলবিমুখ হয়ে পড়ছিল বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। চিত্রটি এমন ছিল, যেন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যেত ফুল। এই কচিকাঁচা সোনামণিদের কথা চিন্তা করে  বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের মানবিক সহায়তা সংগঠন বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন চরে একটি স্কুল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বর্তমানে স্কুলটিতে ৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত পাঠ নিচ্ছে।
বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলে পড়ুয়া তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসমিয়ন আক্তারের মা সাথি বেগম বলেন, ‘চরইমারশন থেকে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরে কোড়ালিয়া এ রহমান ও ছোটবাইশদিয়া স্কুল। নদীর খেয়া পার হয়ে প্রতিদিন ওই স্কুলে যাইত ছেলেমেয়েরা। এমন দুর্ভোগের কারণে স্কুলে যাইতে চাইত না বাচ্চারা। এখানকার অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা স্কুলেই যেত না। চলতি বছরের শুরুতেই চরের পোলাপানের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ একটি স্কুল নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়। এখন প্রতিদিন বাচ্চারা বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলে যায়। আমাদের আর চিন্তা লাগে না বাচ্চাদের জন্য।’ দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসমাইলের মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘এই চরে কোনো স্কুল ছিল না। আমাদের পোলাপানের (ছেলেমেয়ের) পড়াশোনা করানো ছিল স্বপ্নের মতো। এখন স্কুল হয়েছে। নিয়মিত স্কুলে যায় ওরা। পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণ পেয়েছে। এতে বাচ্চারাও যেমন আনন্দ পায়, আমাদেরও ভালো লাগে। বসুন্ধরা গ্রুপ আগায়া না আসলে এই সুযোগ পেত না বাচ্চারা। বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য অনেক দোয়া করি।’

বসুন্ধরা গ্রুপের এমন মহতী উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানিয়ে স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, বিদ্যালয়বিহীন বিচ্ছিন্ন চরের ঝরে পড়া কোমলমতি শিশুদের কথা চিন্তা করে একটি স্কুল চালু করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ।  চলতি বছরের পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে স্কুলটিতে ৮০ জন শিশু পড়ালেখা করে। শিশুদের জন্য শিক্ষা উপকরণ দিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বাচ্চাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এখানে ভর্তি কিংবা পড়ালেখা করতে কোনো ফি লাগে না। দরিদ্র অভিভাবকরা নিশ্চিন্তে তাঁদের সন্তানদের পড়াচ্ছেন। এমন ঘটনা খুব বিরল। আমাদের মতো দরিদ্র অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার মতো মহৎ কাজ বসুন্ধরা গ্রুপই করল। তাদের সবার জন্য অনেক অনেক দোয়া ও শুভ কামনা।

শিক্ষা উপকরণ পেয়ে খুবই খুশি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী বনানী। সে বলে, ‘আমরা নতুন খাতা ও পেনসিল পেয়েছি। খুব ভালো লাগছে। জীবনের প্রথম কেউ খাতা-কলম ফ্রিতে দিল। আমরা খুব ভালোমতো পড়ালেখা করব। ভালো মানুষ হব।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘চরইমারশন দীর্ঘদিন ধরেই একটি অবহেলিত এলাকা। এখানকার ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া থেকে অনেক দূরে ছিল। এরা জীবনের শুরুই করে মাছ ধরার মধ্য দিয়ে অথবা পরিবারের সঙ্গে অন্যান্য কাজ করে। এখানকার ছেলেমেয়েদের কেউ পড়ালেখা করতে চাইলে পাঁচ কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়তে হয়। বিদ্যালয়ে যেতে একটি খেয়া পার হতে হতো। এদের জন্য যদি আমরা স্কুল প্রতিষ্ঠা করে শতভাগ শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে না পারি, সেটি আমাদের জাতির জন্য ক্ষতি। এ ব্যাপারে বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে এসেছে। এখানে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা বসুন্ধরা গ্রুপকে সাধুবাদ জানাই। রাঙ্গাবালীতে বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর