৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০৯:১১

প্রশাসনের চোখ তফসিলে

গ্রহণযোগ্য ভোটের পক্ষে সিভিল ব্যুরোক্র্যাসি ও পুলিশ

ওয়াজেদ হীরা

প্রশাসনের চোখ তফসিলে

প্রতীকী ছবি

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চলতি অক্টোবর নিয়ে রাজনৈতিকভাবে নানা ধরনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেকের মতে, এ মাস হতে পারে রাজনীতির জন্য ‘টার্নিং পয়েন্ট’। তবে সচিবালয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেটি নিয়ে একেবারেই ভাবছেন না। কোনো নির্দিষ্ট মাস নয় বরং প্রশাসনের কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার দিকে তাকিয়ে আছেন। তফসিল কবে হবে, ঠিকমতো হবে কি না সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখছেন। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে অক্টোবর মাসকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক দল এবং বিশ্লেষকরা। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থান এবং দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে রাজনীতিতে নানা ধরনের শঙ্কা বাড়িয়েছে। অনেক বিশ্লেষক ইতোমধ্যে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানে আপাত কোনো আপস বা পরিবর্তনের ইঙ্গিত তারা দেখছেন না। ফলে শেষ পর্যন্ত ঠিক কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এদিকে, সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক আলোচনার চেয়ে দাফতরিক কাজেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ভোট নিয়ে আগ্রহ থাকলেও রাজনৈতিক কর্মসূচির ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে নারাজ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনে সবাই নানা বিষয়ে সতর্ক থাকেন। তবে কেউ উদ্বেগের কথা আমাদের সেভাবে জানাননি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের শনিবার-রবিবার বলে কিছু নেই। অনেকেই অক্টোবর মাস নিয়ে নানা কথা বলতে পারেন। এখানে কর্মকর্তাদের এটা নিয়ে ভাবারও কিছু নেই। রাজনৈতিক বিষয়ে কর্মকর্তারা বিচলিত নন বরং বিভিন্ন ব্যাচের কার প্রমোশন হলো কার হলো না এসব নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে হ্যাঁ, যেহেতু সামনে ভোট, কোন প্রক্রিয়ায় হতে যাচ্ছে, তার খোঁজ অনেকে নিতে পারেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিব বলেন, ডিসি-ইউএনওর কাজ একটু চ্যালেঞ্জিং। অনেক মন্ত্রণালয়ের কাজ সমন্বয় করতে হয়, অনেক বিষয় দেখতে হয়। তফসিলের পর ভোট সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সেটি কবে হবে সে বিষয়ে সবাই খোঁজ রাখছেন। কোন মাসে রাজনীতির কী কর্মসূচি সেসব ভাবার সময় নেই। রংপুর বিভাগের অধীন এক জেলা প্রশাসক জানান, এ অঞ্চলের মানুষ শান্তিপ্রিয়। রাজনৈতিক নানা শঙ্কা থাকতে পারে। তবে আমরা সেরকম কোনো আভাস পাচ্ছি না। ভোটের তফসিল হলে পরিস্থিতি কেমন থাকবে, তা বোঝার চেষ্টা করছি। সচিবালয়ের বিভিন্ন ক্যাডার কর্মকর্তারা সামনে কবে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) সভা আছে সে বিষয়ে খোঁজ রাখছেন। অনেকেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সিনিয়রদের দফতরে যাতায়াত বাড়িয়েছেন। বিশেষ করে উপসচিব হওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা বেশি হচ্ছে সচিবালয়ে। সেখানে রাজনৈতিক আলোচনার খুব একটা দেখা যায়নি। ২২ ব্যাচের এক কর্মকর্তা সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব বলেন, পাঁচ বছর পরে ভোট। আলোচনা থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে আমাদের ব্যাচের পদোন্নতির পর এসব নিয়ে কারও মধ্যে কোনো ভাবনা নেই। ঠিকমতো ভোট বা তফসিল হয়ে গেলে আমাদের নিয়মিত কাজও স্বাভাবিক গতিতেই হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন/অভ্যন্তরীণ নিয়োগ ও নবনিয়োগ অধিশাখার অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অক্টোবর নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে যে উদ্বেগের কথা শোনা যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশাসনের মধ্যে কোনো ধরনের উদ্বেগ নেই। মাঠ প্রশাসন থেকে এখনো এরকম কিছু শুনিনি। তবে নির্বাচন নিয়ে একটা প্রস্তুতি আছে। নির্বাচন কমিশন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ডাকা শুরু করেছে। জাতীয় নির্বাচনের জন্য অনেক প্রস্তুতি থাকে, সে প্রস্তুতিটা কীভাবে নেবে সেটা নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে চিন্তা থাকতে পারে। রাজনৈতিক কোনো উদ্বেগ আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো ধরনের দুশ্চিন্তা নেই, থাকার কথাও নয়। সরকারি চাকরিজীবীদের সবসময়ই কোনো না কোনো দলীয় সরকারের অধীনে কাজ করতে হয়। নির্বাচন এলে নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দেয় সে অনুযায়ী কাজ করে। উল্লেখ্য, চলতি মাসের শেষে বা নভেম্বরে আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যেই প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে।

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর