নাম তার বেনজীর হোসেন (৪০)। ফেসবুকে নিজেকে পরিচয় দেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী হিসেবে। এছাড়া পেশায় তিনি বৈমানিক- এমন পরিচয়ে এক নারীর সঙ্গে গড়ে তোলেন প্রেমের সম্পর্ক। বছর চারেক আগে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া ওই নারীকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার প্রলোভন দেখান। এরপর ওই নারীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ১ কোটি ৯ লাখ টাকা।
তবে তিনি বৈমানিক নন, নন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসীও। আসলে এই বেনজীর হোসেন বাংলাদেশের নড়াইল জেলার বাসিন্দা।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী মামলা দায়ের করেছেন। মামলা তদন্ত করে নড়াইল থেকে অভিযুক্ত বেনজীরকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা। গত বছরের নভেম্বরে ভুক্তভোগী নারী রাজধানীর ওয়ারী থানায় মামলা করার কিছুদিনের মধ্যে বেনজীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।সিটিটিসি আদালতে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলেছে, বিয়ে করার ফাঁদে ফেলে বেনজীর ভুক্তভোগী নারীর কাছ থেকে ১ কোটি ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
জানা গেছে, গত বছর মে মাসে ভুক্তভোগী নারী ফেসবুকে শহীদ হাসান নামের একজনের কাছ থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পান। ফেসবুকে বন্ধু হওয়ার পর শহীদ হাসানের সঙ্গে মেসেঞ্জারে কথা চলতে থাকে তার। মূলত শহীদ হাসান নামক ব্যক্তিই বেনজীর হোসেন। তিনি নিজেকে একজন পাইলট পরিচয় দেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক বলে জানান। বাস করেন নিউইয়র্ক শহরে। কথার এক পর্যায়ে নানা আবেগপ্রবণ কথাবার্তায় নারীকে ফাঁদে ফেলেন। তখন তার সঙ্গে মেসেঞ্জারে নিয়মিত কথা হয় ওই নারীর। একপর্যায়ে প্রতারক তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং বিয়ে করে তিনি তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাবেন বলে আশ্বাস দেন। এরপর তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যেতে পাসপোর্ট করানোর জন্য ওই নারীর কাছ থেকে একের পর এক টাকা নিতে থাকেন প্রতারক বেনজীর।
এদিকে ব্যাংকঋণসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে নেওয়া ধারের টাকা পরিশোধের চাপ সামলাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ওই নারী আসামির সঙ্গে আপস করেছেন। এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি একটি ব্যাংকে চাকরি করতাম। কিন্তু প্রতারকের খপ্পরে পড়ে চাকরি হারিয়েছি। কোটি টাকা হারানোর পর আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। টাকা শোধ করতে পারছিলাম না। বাধ্য হয়ে আমি ৬০ লাখ টাকায় আসামির সঙ্গে আপস করেছি। আমি সেই টাকা বুঝে পেয়েছি।
ভুক্তভোগী নারী দাবি করেন, আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা করানোসহ নানা অজুহাতে টাকা চান প্রতারক। বিশ্বাস করে তিনি টাকা দিতে থাকেন। একটা পর্যায়ে তিনি ৩৭ ভরি স্বর্ণালংকার বিক্রি করেন। নিজের নামে থাকা সঞ্চয়পত্র ভাঙেন, ব্যাংক থেকে ঋণ করেন। ওই নারী বলেন, ‘আমার সঞ্চয় করা যাবতীয় অর্থ আমি তাঁকে পাঠিয়েছি। একটা পর্যায়ের আমি মায়ের কাছ থেকে, নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে ধার করে তাঁকে দিই। এমনও হয়েছে যে আমি নিজের রক্ত বিক্রি করেছি, কিডনি বিক্রিরও সিদ্ধান্ত নিই।’
ভুক্তভোগী নারী আরও দাবি করেন, এই সম্পর্কের জেরে গত বছরের শেষ দিকে তিনি চাকরি থেকেও ইস্তফা দেন। তাঁকে বলা হয়েছিল, যেকোনো দিন বাংলাদেশে এসে তাঁকে বিয়ে করে আমেরিকায় নিয়ে যাবেন তিনি।
ভুক্তভোগী নারী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, বৈমানিক পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশে এসে তাঁকে বিয়ে করে আমেরিকায় নেওয়ার কথা বলেছিলেন। ছয় মাস পার হওয়ার পর না আসায় তিনি তাঁর দেওয়া ঠিকানা খুঁজতে খুলনায় যান। কিন্তু শহীদ হাসান নামের কোনো ব্যক্তি সেখানে বসবাস করেন না। এ তথ্য মেসেঞ্জারে জানানোর পর প্রতারক তাকে বলেন, একান্ত মুহূর্তের সব ভিডিও তার কাছে আছে। বাড়াবাড়ি করলে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেগুলো ফাঁস করে দেবেন। এরপর থানায় মামলা করেন ওই নারী।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির সাইবার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সুমন জানান, ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে আসামির আপস হওয়ার বিষয়ে তিনি জানেন না। তদন্তে ওই নারীর কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্যের সত্যতা পেয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল