১৩ মে, ২০২৪ ১৫:৩০

রনোকে গার্ড অফ অনার প্রদান ও অশ্রুসিক্ত বিদায়

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

রনোকে গার্ড অফ অনার প্রদান ও অশ্রুসিক্ত বিদায়

গার্ড অফ অনার ও শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আকবর খান রনোকে অশ্রুসিক্ত বিদায় জানিয়েছেন স্বজনরা। 

সোমবার বেলা ১১টার দিকে  কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাকে গার্ড অফ অনার ও শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করা হয়। এরপর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণসংস্কৃতি ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি), গণজাগরণ মঞ্চ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ প্রভৃতি রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

জানা যায়,গত শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হায়দার আকবর খান রনো। বনানীতে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে বলে জানান হায়দার আকবর খান রনোর মেয়ে সুলতানা।

তার মৃত্যুতে এদিন শোক দিবস ঘোষণা করেছে সিপিবি। এদিন সারা দেশের পার্টি কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও হায়দার আকবর খানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা।

সিপিবির সভাপতি শাহ আলম বলেন, একে একে ষাটের দশকের প্রজন্ম চলে যাচ্ছেন। যে দশকটি ছিল বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক দশক, এই প্রজন্মের ওপর ভর করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই দশকের প্রজন্ম চলে যাচ্ছেন, কিন্তু এদেশের স্বপ্ন পূর্ণ হচ্ছে না, এটাই হল জাতির জন্য বিপদজনক অবস্থা। হায়দার আকবর খান যেটা দিয়ে গেছেন। যে আদর্শ ধারণ করেছেন, সেই আদর্শ অবিনাশী। তার আদর্শের পথ, সেটাই হল মানবমুক্তির পথ। এটাই আমরা বিশ্বাস করি। এই পতাকা আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। একদিন অবশ্যই সমাজতন্ত্রের জয় হবে। তাই হায়দার আকবর খান রনো যে লড়াই করেছেন, সে লড়াই আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।

উল্লেখ্য, হায়দার আকবর খান রনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে জড়িত হন। ১৯৬২ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তার সক্রিয় রাজনীতি শুরু। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৬৯ সালে তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনের শীর্ষস্থানীয় নেতা হিসেবে উঠে আসেন। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক। ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

১৯৭০ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রণাঙ্গনের সৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও নেতা ছিলেন তিনি। হায়দার আকবর খান রনো ১৯৮২-১৯৯০ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন ও ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও নেতা ছিলেন।

২০১০ সালে মতভিন্নতার কারণে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ছেড়ে হায়দার আকবর খান সিপিবিতে যোগ দেন। ২০১২ সালে তাকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। এরপর তিনি সিপিবির উপদেষ্টা হন।

২০২২ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তার ২৫টি বই প্রকাশ হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- ‘শতাব্দী পেরিয়ে’, ‘ফরাসী বিপ্লব থেকে অক্টোবর বিপ্লব’, ‘পুঁজিবাদের মৃত্যুঘণ্টা’, ‘সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের সত্তর বছর’, ‘মার্কসবাদের প্রথম পাঠ’, ‘মার্কসীয় অর্থনীতি’, ‘গ্রাম শহরের গরীব মানুষ জোট বাঁধো’, ‘মার্কসবাদ ও সশস্ত্র সংগ্রাম’, ‘কোয়ান্টাম জগৎ- কিছু বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক প্রশ্ন’, ‘রবীন্দ্রনাথ শ্রেণি দৃষ্টিকোণ থেকে’, ‘মানুষের কবি রবীন্দ্রনাথ’, ‘বাংলা সাহিত্যে প্রগতির ধারা’, ‘পলাশী থেকে মুক্তিযুদ্ধ’, ‘স্তালিন প্রসঙ্গে’, ‘অক্টোবর বিপ্লবের তাৎপর্য ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর