ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপেও ধরাশায়ী হয়েছেন একাধিক বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীর প্রার্থী। এর মধ্যে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ছোট ভাই গোলাম সারোয়ার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃতীয় হয়েছেন। অন্যদিকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানের মেয়ের প্রার্থী মো. আবুল কাশেম রাজও হয়েছেন তৃতীয়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কাপ-পিরিচ প্রতীকে নির্বাচন করে তৃতীয় হয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ভাই গোলাম সারোয়ার। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। এ ছাড়া তিনি ওই উপজেলা পরিষদে টানা তিন মেয়াদে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, সদর দক্ষিণ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাই বাবলু। তিনি হেলিকপ্টার প্রতীকে পেয়েছেন ২০ হাজার ৮৬৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান রিপন পেয়েছেন আনারস প্রতীকে ১৪ হাজার ৭৯০ ভোট। তৃতীয় হয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ভাই গোলাম সারোয়ার। তিনি পেয়েছেন ১৪ হাজার ৩১৪ ভোট। স্থানীয়রা জানান, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পরিবারের জনবিচ্ছিন্নতা, নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন না করা এবং তাদের অহংকারের কারণে সারোয়ারের ভরাডুবি হয়েছে। বিশেষ করে নাঙ্গলকোট, লালমাই ও সদর দক্ষিণ উপজেলায় তাদের পরিবারের সদস্য ও যোগ্যতাহীন লোকজনকে বেশি মূল্যায়ন করেছেন। এ ছাড়া এলাকায় উন্নয়ন না করায়ও মানুষ ক্ষুব্ধ ছিল। গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুকসুদপুর উপজেলায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানের মেয়ে কানতারা খানের প্রার্থী ব্যবসায়ী আবুল কাশেম রাজ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২৮ হাজার ৫৪২ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। এ উপজেলায় মো. কাবির খান ৫৪ হাজার ৫৫৪ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এই উপজেলায় ৪২ হাজার ৮১১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন এম এম মহিউদ্দিন আহমেদ। মুকসুদপুরে উপজেলা নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজের পক্ষে মাঠে ছিলেন ফারুক খানের মেয়ে কানতারা খান। তিনি সরাসরি রাজের প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেন। এ ছাড়া শরীয়তপুর সদরে সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর চাচাতো ভাই বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়া, গাইবান্ধা সদর উপজেলায় সংসদ সদস্য শাহ সারোয়ার কবীরের প্রার্থী মো. ইস্তেকুর রহমান সরকার, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি-সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ শিকদার পরাজিত হয়েছেন।হারলেন সাবেক এমপি : ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন জাফর আলম। কিন্তু ২০২৪ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের কাছে হেরে যান তিনি। সেই পরাজয়ের পর এবার তিনি এমপি থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু এখানেও জিততে পারলেন না সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলম। দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান তিনি।
বিএনপির বহিষ্কৃত নেতার কাছে ধরাশায়ী আওয়ামী লীগের ৫ নেতা : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পাঁচ নেতাকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফু। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপির মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফু চিংড়ি মাছ প্রতীকে পেয়েছেন ২৫ হাজার ১৫৯ ভোট। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম। তিনি ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ২১ হাজার ৭৫১ ভোট। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ মোটরসাইকেল প্রতীকে ২০ হাজার ৫৬৩ ভোট, জেলা আওয়ামী লীগের অপর সাংগঠনিক সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল দোয়াত-কলম প্রতীকে ১৭ হাজার ৯৪২ ভোট, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল হেলিকপ্টার প্রতীকে ১৭ হাজার ৪৭ ভোট এবং জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন চৌধুরী আনারস প্রতীকে ৩ হাজার ৩৭৬ ভোট পেয়েছেন।