৬ জুলাই, ২০২৪ ১৮:০০

মিথ্যাচার ও অপপ্রচারকারীদের বিপক্ষে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের শক্ত অবস্থান নিতে হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিথ্যাচার ও অপপ্রচারকারীদের বিপক্ষে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের শক্ত অবস্থান নিতে হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

মিথ্যাচার ও অপপ্রচারকারীদের বিপক্ষে চলচ্চিত্রের শিল্পী,পরিচালক, প্রযোজকসহ সংশ্লিষ্টদের শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর সার্কিট হাউজ রোডের তথ্য ভবন মিলনায়তনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। 

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাউসার আহাম্মদ। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ, সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের আহ্বায়ক খোরশেদ আলম খসরু, চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া, অনুদান কমিটির সদস্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী, চলচ্চিত্র অনুদানের স্ক্রিপ্ট বাছাই কমিটির সদস্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার এবং স্ক্রিপ্ট বাছাই কমিটির সদস্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ফাল্গুনী হামিদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ এবং চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, শিল্পী সমাজ, নাগরিক সমাজ এবং ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির সবাই অসত্যগুলোর প্রতিবাদ করুন। সরকার কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিলে, সরকারের কোন ব্যর্থতা-বিচ্যুতি থাকলে অবশ্যই আপনারা তুলে ধরবেন, সমালোচনা করবেন, বিরোধিতা করবেন। কিন্তু যারা মিথ্যা কথা বলে, অর্ধসত্য বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে, দেশকে আত্মঘাতী একটা অবস্থায় নিয়ে যাবে তাদের মুখোশ উন্মোচন করুন, তাদের বিরুদ্ধে আপনারা প্রতিবাদ করুন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে সব বিষয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সঠিক তথ্য দেওয়া হবে। সেগুলো নিয়ে মিথ্যাচার যারা করছে, যারা অপপ্রচার ও গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিপক্ষে আপনারা শক্ত অবস্থান নেবেন।

দেশের চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের উদ্দেশে এ সময় প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এ দেশে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কিছু কিছু গোষ্ঠী আছে যারা অপতথ্য ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধিতা থাকতে পারে, ভিন্ন মত থাকতে পারে। কিন্তু অসত্য কথা বলে, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করলে সেখানে শিল্পী সমাজ এবং ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির যারা আছেন তাদেরও কিছু দায়িত্ব পালন করার আছে এবং আপনাদের কাছে এখানে কিছু অবদান আমরা চাই।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে সই করা সমঝোতা স্মারকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সমঝোতা স্মারকের বিষয়গুলো নিয়ে যেভাবে মিথ্যাচার শুরু হলো এবং যেভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করা শুরু হলো, এসব জায়গাতে শিল্পী সমাজ এবং ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির সাথে সম্পৃক্ত যারা তাদের সামগ্রিকভাবে দেশের এবং মানুষের স্বার্থে সত্যের পক্ষে অবদান রাখতে হবে। একটা সমাজে যদি সত্য হারিয়ে যায়, মিথ্যা যদি সামনে চলে আসে তাহলে সেটা কারো জন্যই মঙ্গল নিয়ে আসবে না। অপপ্রচারকারীরা বলে দিচ্ছে বাংলাদেশের বুক চিরে ভারতে ট্রেন চলে যাবে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে এবং এখান দিয়ে অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে চলে যাবে, বাংলাদেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে, যেটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা। এটিকে প্রতিরোধ করতে হবে। 

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও যোগ করেন, সমঝোতা স্মারকে পরিষ্কারভাবে বলা আছে একটা রিজিওনাল কানেক্টিভিটি আমরা করছি। বাংলাদেশের সাথে নেপাল ও ভুটানের ৫০ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা আছে, রফতানি করি আমরা। বাংলাদেশের পণ্য ভারতের মধ্য দিয়ে গিয়ে নেপাল-ভুটানে প্রবেশ করে। আমরা যদি সরাসরি ট্রেন লাইন করতে পারি, তাহলে আমাদের ব্যবসা ও রপ্তানি প্রসার ঘটবে। সমঝোতা স্মারকে সেটিও আমরা নিয়ে এসেছি যে, নেপাল ও ভুটানে আমরা ভারতের মধ্য দিয়ে যাবো।

তিনি আরও বলেন, ভারতের গ্রিড লাইন ব্যবহার করে আমরা নেপাল থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে আসছি। এই মুহূর্তে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির সমঝোতা হলেও নেপালে ৭২ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে, যেটা এখন তারা চাহিদা নেই বলে উৎপাদন করে না। কিন্তু আমাদের চাহিদা আছে। আমরা যদি নেপাল থেকে ক্লিন এনার্জি আমদানি করতে পারি, তাহলে আমরা জীবাশ্ম জালানির ব্যবহার কমিয়ে ক্লিন এনার্জি আনতে পারবো। যেটা বাংলাদেশ, ভারত, নেপালপসহ গোটা পৃথিবীর জন্য ভালো, সেটা কিভাবে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে হয়? 

চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে অবদান রাখতে চান, প্রণোদনা দিতে চান। আমরা চাই প্রণোদনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ভালো চলচ্চিত্র যাতে নির্মাণ হয়। এ লক্ষ্য অর্জনে আমাদের যা কিছু করতে হয় তা আমরা করবো। অনুদানের চলচ্চিত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা আরও স্বচ্ছতা ও বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে চাই। এক্ষেত্রে সংখ্যার চেয়ে গুণগতমানের দিকে আমরা মনোযোগ দিতে চাই। এজন্য বাছাই প্রক্রিয়া আরও উন্নত করা হবে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হবে। শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠিতদের প্রণোদনা দেওয়া হবে সেটি নয়, নতুনদের কাছে আমরা পৌঁছাতে চাই, তারা যাতে সুযোগ পেয়ে নিজেদের দাঁড় করাতে পারে।

তিনি আরো বলেন, অনুদানের চলচ্চিত্র নিয়ে একটি চলচ্চিত্র উৎসব করা যায় কিনা সেটিও বিবেচনা করা হবে। সরকারি অনুদান যেটা প্রণোদনের আকারে দেওয়া হচ্ছে এটা সংশ্লিষ্টদের একটা সক্ষমতার স্বীকৃতি। অনুদানের চলচ্চিত্রগুলো নির্মাণ হয়ে গেলে সেগুলো নিয়ে একটি অ্যাওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেটিও সরকার বিবেচনা করবে। এটি সৃজনশীল নির্মাতাদের আরও উৎসাহিত করবে। চলচ্চিত্র নিয়ে গবেষণার বিষয়টিও এক্ষেত্রে পর্যালোচনা করা হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করা, তুলে ধরা এবং ব্র্যান্ডিং করার জন্য চলচ্চিত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য চলচ্চিত্রকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে আরও মনোযোগ দেয়ার জন্য আলাদা বিভাগ বা কাউন্সিল করার বিষয়টি সরকার ভেবে দেখবে। দেশের চলচ্চিত্রের যে সম্ভাবনা আছে, সেটা কাজে লাগানোর জন্য বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি, এফডিসি এবং যে জায়গাগুলো আছে, সেখানে আমাদের যা বিনিয়োগ করতে হয়, যা তৈরি করতে হয়, সেটা সরকার করবে। একইসাথে নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, পশ্চিমবঙ্গ এমনকি পাকিস্তানের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বাজার আমরা ধরতে চাই।

উল্লেখ্য, চলচ্চিত্র শিল্পে মেধা ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা এবং বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মানবীয় মূল্যবোধসম্পন্ন জীবনমুখী, রুচিশীল ও শিল্পমানসমৃদ্ধ চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান প্রদান নীতিমালা, ২০২০ (সংশোধিত) এর ভিত্তিতে সরকারি অনুদান প্রদান করা হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৬টি স্বল্পদৈর্ঘ্যসহ মোট ২৬টি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য মোট ১৫ কোটি ২০ লাখ টাকা অনুদান প্রদানের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শাখায় ২টি, শিশুতোষ শাখায় ২টি, প্রামাণ্যচিত্র শাখায় ২টি এবং সাধারণ শাখায় ১৪টি চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান প্রদান করা হয়েছে। অপরদিকে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শাখায় ২টি, শিশুতোষ শাখায় ১টি এবং সাধারণ শাখায় ৩টি চলচ্চিত্র নির্মাণ অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর