৪ আগস্ট, ২০২৪ ১৫:৫১
অসহযোগ আন্দোলন

উত্তাল সারাদেশ, সংঘর্ষে নিহত ৬১

অনলাইন ডেস্ক

উত্তাল সারাদেশ, সংঘর্ষে নিহত ৬১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। ছবিটি ঝিনাইদহের।

সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন আজ রবিবার সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা) রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এসব ঘটনায় ৬১ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর নিচে তুলে ধরা হলো :

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। এতে ১১ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। রবিবার বিকেলের দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

এদিকে, সিরাজগঞ্জে সংঘর্ষ ও গুলিতে আরও সাতজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। সকাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শহরের বাজার স্টেশন, এসএস রোড, মুজিব সড়ক, রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় রিপন শীল (২৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাইম আশরাফ চৌধুরী। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক।

নিহত রিপন শীল হবিগঞ্জ শহরের অনন্তপুর এলাকার রতন শীলের পুত্র। এছাড়া অন্য আহতদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার (ওসি) নূরে আলম জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহতের খবর শুনেছি। এ ছাড়া ভাঙচুর করা হয়েছে হবিগঞ্জ- ৩ আসনের এমপি আবু জাহিরের বাসভবন।  

শেরপুর : শেরপুরে দুইজন আন্দোলনকারী নিহতের খবর পাওয়া গেছে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক সংঘর্ষ, জেলা পুলিশ সুপারের বাসভবনে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৭০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। 

নিহত দুইজন শিক্ষার্থী হলেন মাহবুব ও রবিউল ইসলাম তুষার। জানা গেছে, জেলার গোডাউন মোড়ে পুলিশের দ্রুতগতির গাড়ি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর উঠিয়ে দিলে মাহবুব ও তুষার মারা যান।

নরসিংদী : নরসিংদীতে ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। জেলার মাধবদীতে আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ নেতাসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দু’জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন জেলার সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান ও ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহীন।

ঢাকা : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং আরেকজন শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নিহত আওয়ামী লীগ নেতার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন।

ধানমন্ডির জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩)। তিনি রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে আব্দুল্লাহকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।

এদিকে, বিকালে গুলিস্তান থেকে জহির উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বাড়ি কুমিল্লায় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।

জয়পুরহাট : রবিবার দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে জয়পুরহাট শহর। সংঘর্ষে মেহেদী হাসান নামে এক আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সামসুল আলম দুদুসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, আন্দোলনকারী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বগুড়া : বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। আজ রবিবার দুপুরে দুপচাঁচিয়া উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত একজনের নাম মুনিরুল ইসলাম (৩৪)। তার বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার এলাকায়। মুনিরুল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অপরজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। এছাড়া সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৯ জন ভর্তি রয়েছেন।

মুন্সিগঞ্জ : মুন্সিগঞ্জে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।

রবিবার সকাল পৌনে ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো. আবু হেনা জামাল। তিনি বলেন, সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে দু’জন মৃত ছিল। তাদের বয়স ২২-২৫ বছর। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

রংপুর : রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সরদার হোমের (লাশ এন্ট্রি করা) ইনচার্জ মিজানুর রহমান। নিহতদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।

মাগুরা : মাগুরায় বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বিসহ চারজন নিহত হয়েছেন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের পারনান্দুয়ালী ঢাকা রোড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

রাব্বির মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান। নিহত বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

পাবনা :  অভিযোগ উঠেছে পাবনায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মিছিল থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর চালানো গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আজ রবিবার পাবনার খেয়াঘাট মোড়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মিছিল থেকে গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন। এরপর বিক্ষোভকারীরা এক আওয়ামী লীগ নেতার গাড়ি এরপর গাড়ি পুড়িয়ে দেন।  

কুমিল্লা : কুমিল্লার দেবিদ্বারে গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। রবিবার দুপুর দেড়টায় দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরো অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। নিহত ওই যুবক আব্দুল রাজ্জাক রুবেল (২৬)। তিনি দেবিদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। রুবেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান।

বরিশাল : বরিশালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। তার নাম টুটুল চৌধুরী (৬০)। তিনি বরিশাল মহানগরীর ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। রবিবার দুপুরে হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ফেনী : ফেনীতে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে পাঁচ আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। আজ দুপুর ২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী মহিপাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

ফেনী ২৫০ শয্যা জেলারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সিলেট :  সিলেটের গোলাপগঞ্জে গুলিতে দুইজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ দুইজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শাহিন আহমদ।

রবিবার বেলা আড়াইটার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত দুইজন হলেন ধারাবহর গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)।  

কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। টিটুর বাসায় দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছেন দুইজন। এছাড়া এক যুবলীগ নেতাকে হাত-পা বেধে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. একরাম উল্লাহ জানান, এ হাসপাতালে আগুনে পোড়া অঞ্জনা (৩০) নামে এক নারীসহ দুজনের লাশ আনা হয়েছে এবং চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ২০ জনকে। 

এছাড়া শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন জানান, এ হাসপাতালে একজনের (৩০) লাশ আনা হয়েছে এবং চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ৬৫ জনকে। গুরুতর আহত দুজনকে ময়মনসিংহে রেফার্ড করা হয়েছে। 

ভোলা : ভোলায় আন্দোলনকারীরা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে। পরে তারা স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিকলীগ কার্যালয় জ্বালিয়ে দেয়। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জেলা শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। 

এদিকে, ভোলা সদর নতুনবাজার এলাকায় সংঘর্ষের মাঝে পরে গুলিতে জসিম নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। পরে তার লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর