ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ানো এখন আর শুধু ১৫০ কোটি মুসলমানের দায়িত্ব নয়, বরং ৭০০ কোটি মানবিক হৃদয়ের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি আয়োজিত ফিলিস্তিন সংহতি সমাবেশে বক্তব্যকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সমাবেশে তিনি বলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনে যা করছে তা কোনও যুদ্ধ নয়, এটি গণহত্যা। নির্বিচারে, নৃশংস উপায়ে এবং ঠাণ্ডা মাথায় গণহত্যা করা হচ্ছে। সেখানে যে গণহত্যা হচ্ছে তার একটি পক্ষ হলো পুঁজিবাদী পক্ষ। যারা ফ্যাসিবাদের রূপ ধারণ করেছে।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘের অকার্যকর উপস্থিতি উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিবেক বলে আর কিছু পৃথিবীতে অবশিষ্ট নেই। আছে শুধু একদিকে ক্ষমতাবান শোষক, অত্যাচারী আর অন্যদিকে আছে ক্ষমতাহীন অত্যাচারিত। ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ানো এখন আর শুধু ১৫০ কোটি মুসলমানের দায়িত্ব না, বরং ৭০০ কোটি মানবিক হৃদয়ের দায়িত্ব।
সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনকে মুছে ফেলতে এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। সেখানে যাদের মারা হচ্ছে তার ৭০ শতাংশই নারী এবং শিশু। শিশুদের মেরে ফেলা হচ্ছে, যাতে তারা ভবিষ্যতে ইসরায়েলকে প্রতিরোধ করতে না পারে। যুদ্ধবিরতির সব ধরনের নীতিমালা ভূলুণ্ঠিত করে ইসরায়েল আবার হত্যাযজ্ঞ শুরু করছে। পূর্বে ইসরায়েলের এই হত্যাযজ্ঞের পৃষ্ঠপোষক ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, আর এখন সেই পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করতে চাইলে ভারতের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। আবার ভারতের সাম্রাজ্যবাদ রুখতে আমেরিকার কোলে বসা যাবে না। আর আমেরিকার কোলে উঠলে ভারত আর আমেরিকা দুটোর সাম্রাজ্যই এখানে চলতে পারে।
এসময় ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিরোধকে ন্যায়সংগত উল্লেখ করে পাঁচটি দাবি তোলার জন্য জনগণকে আহবান করে ফিলিস্তিনি সংহতি কমিটি। দাবিগুলো হলো-ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদার ইসরায়েলি নারকীয় আগ্রাসন ও গণহত্যা অনতিবিলম্বে বন্ধ করা। ইসরায়েলি দখলদারি ও নিয়ন্ত্রণের পরিপূর্ণ অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিনের উভয় অংশের মানুষের জানমাল, জীবন-জীবিকা, নিরাপত্তা, পরিপূর্ণ মানবাধিকার এবং মর্যাদা রক্ষার ব্যবস্থা করা। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন চুক্তি, প্রস্তাব ও শর্ত/মানদণ্ড অনুযায়ী স্বাধীন ও সার্বভৌম প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা। অবিলম্বে ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের গোপন ও পরোক্ষ সব সম্পর্ক ও লেনদেন ছেদ করার স্বচ্ছ ব্যবস্থা নেওয়া এবং ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে বাংলাদেশকে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা ও জাতিসংঘে দৃঢ় ও স্বচ্ছ ভূমিকা নেওয়া।
সমাবেশে সম্প্রতি বাংলাদেশে পণ্য বর্জনের আন্দোলনের অজুহাতে উচ্ছৃঙ্খল দাঙ্গাবাজরা দেশের বিভিন্ন স্থানে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাটের ঘটনার জন্য দায়ী সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা প্রমুখ।
সমাবেশে ফিলিস্তিনিদের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বিবর্তন সংস্কৃতি কেন্দ্র নাটক প্রদর্শন করে। কবিতা আবৃত্তি করেন কবি হাসান ফকরী। সমাবেশে বাম সংগঠনগুলোর নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে মিছিল করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ