বুধবার, ৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

ইউপি চেয়ারম্যানের নৃশংস হামলার শিকার ইউপি মেম্বার

দিনভর রোজা থেকে দীর্ঘ ৪ কিলোমিটার পথ দৌড়েও ইউপি চেয়ারম্যানের হামলা থেকে রেহাই পেলেন না তারই পরিষদের মেম্বার। প্রাণ বাঁচাতে একটি মাদ্রাসায় আশ্রয় নিলেও ছাত্রলীগ নেতা ও চেয়ারম্যান রাসেল শত শত ছাত্রের সামনেই ফিল্মিস্টাইলে কুপিয়েছেন ইউপি মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা হাজী শাহ আলমকে (৫২)। এলজিএসপির রাস্তার টাকা আত্দসাৎ করার লিখিত অভিযোগ দায়ের করায় ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল ক্ষিপ্ত হন শ্রীনগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি মেম্বার শাহ আলমের ওপর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বিকালে রায়পুরা উপজেলার পান্থশালা ফেরিঘাট মাদ্রাসায় এ নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে। এ সময় মাদ্রাসায়ও ব্যাপক ভাঙচুর করেন হামলাকারীরা। মারাত্দক আহত অবস্থায় মেম্বার শাহ আলমকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে চেয়ারম্যান রাসেল মেম্বার শাহ আলমের ১২ সমর্থকের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করেন। জানা গেছে, রায়পুরার শ্রীনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মোরশেদ খান রাসেল একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি এলজিএসপির রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের কোনো কাজ না করেই বরাদ্দকৃত ৬০ হাজার টাকার পুরোটাই আত্দসাৎ করেন। এ ব্যাপারে ৩ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ও শ্রীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী শাহ আলম রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ইউএনও বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ২৮ জুন বিষয়টি সরেজমিনে তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে যান। সেখানে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য হাজির হন শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদের আরও সাতজন মেম্বার। জড় হয় এলাকার ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষও। এ অবস্থায় ইউপি চেয়ারম্যন ও ছাত্রলীগ নেতা রাসেল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তকাজে বাধার সৃষ্টি করেন। তারা কৃষি কর্মকর্তা ও মেম্বার হাজী শাহ আলমকে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ মারধর করতে উদ্যত হন। এ অবস্থায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিনা তদন্তে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। সাক্ষ্য দিতে আসা মেম্বারসহ অন্য লোকজনও সাক্ষ্য না দিয়েই ফিরে যান। এ ঘটনার পর এলাকার লোকজনের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরদিন ২৯ জুন চেয়ারম্যান ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের নিয়ে হাজী শাহ আলমের বাড়ি গিয়ে তাকে হুমকি প্রদান করেন। এ অবস্থায় শাহ আলমের এক ছেলে চেয়ারম্যান রাসেলকে ঘুষি মারেন। এতে হট্টগোল সৃষ্টি হলে শাহ আলম দৌড়ে গিয়ে ঘটনাটি তৎক্ষণাৎ মীমাংসা করে দেন। কিন্তু এতেও ক্ষান্ত হননি রাসেল। মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে তিনি পুনরায় সন্ত্রাসীদের নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় মেম্বার শাহ আলম ও তার প্রতিবেশীদের বাড়িঘরে হামলা চালান। তারা জয়নাল মাস্টার, প্রবাসী সাফির উদ্দিন, জামাল মিয়া, হযরত আলী, জালাল মিয়া ও মৃত বজলুর রহমানসহ ১০-১২টি বাড়িঘর ভাঙচুর করে কম-বেশি ২০ লাখ টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যান। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হলে ঘটনাটি মীমাংসার জন্য রায়পুরার এমপি ও সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ঘটনা মীমাংসার আগ পর্যন্ত উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় সোমবার হাজী শাহ আলম রোজা অবস্থায় রায়পুরা উপজেলা সদরে যান একজন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে দেখা করার জন্য। টের পেয়ে চেয়ারম্যান রাসেল সন্ত্রাসীদের নিয়ে শ্রীরামপুর রেলগেট এলাকায় শাহ আলমকে ঘেরাও করেন। বিষয়টি টের পেয়ে শাহ আলম সেখান থেকে দীর্ঘ ৪ কিলোমিটার পথ দৌড়ে মেঘনাঘাট পান্থপথে চলে যান। রাসেল সন্ত্রাসীদের নিয়ে পিছু ধাওয়া করে পান্থপথে পৌঁছালে উপায়ান্তর না দেখে শাহ আলম মাদ্রাসা মসজিদের ভিতরে ঢুকে পড়েন। তিনি মসজিদে ঢুকে ভিতর থেকে দরজার সিটকিনি লাগানোর সময় রাসেল লাথি দিয়ে মসজিদের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে শাহ আলমকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন। পরে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত মেম্বারকে উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনার পর থেকে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

 

 

সর্বশেষ খবর