রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নারীদের দুর্গাপূজা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কথায় আছে যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। নারীরা যদি মহাকাশে পাড়ি দিতে পারেন, আস্ত একটা বিমান এক দেশ থেকে অন্য  দেশে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারেন, তবে বারোয়ারি পূজার ঝামেলাই বা কেন সামলাতে পারবেন না? অবশ্যই পারবেন। ঠিকঠাকভাবে দুর্গাপূজার সব দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এতদিন যেখানে পুরুষদের আধিপত্য ছিল, এখন সেখানেও নারীরা ভাগ বসাচ্ছেন। চাঁদা তোলা থেকে শুরু করে প্রতিমা কিনতে যাওয়া-নারীরাই নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছেন। দেখতে দেখতে এ বছর ২৯-এ পড়ল নর্দানপার্ক দুর্গাপূজা সমিতির পূজা। আজ থেকে ২৮ বছর আগে কয়েকটি পরিবার নিয়ে শুরু হয়েছিল এই পূজা। সেই পরম্পরাকেই সযত্নে এগিয়ে নিয়ে চলছে এখনকার নারীরা। শুরুর দিনে যারা এই পূজার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা অনেকেই আজ নেই। উত্তর কলকাতার ডানলপের এই পূজা পরিবারে এসেছেন নতুনরাও। তারাও মানিয়ে নিয়েছেন এই পরম্পরাকে। এই পূজা কমিটির সেক্রেটারি শিপ্রা রায় জানিয়েছেন ‘সব পাড়ায় পূজা হয়। আমরা চেষ্টা করেই দেখি না পারি কি না! যেমন ভাবা তেমন কাজ। তারপর থেকেই শুরু পূজা, এখনো চলছে। প্রায় ২০০ পরিবার রয়েছে। চাঁদা তোলা থেকে শুরু করে বাজার করা সবকিছু নারীরাই করেন। তবে প্রতিমা বিসর্জনের সময় বাড়ির পুরুষরা পাশে থাকেন। ঢাকের বোলেই মাকে বিদায় জানানো হয়। এখানকার প্রতিমা বরাবরই সাবেকি হয়-একচালা। নবমীর দিন প্রায় ৫০০ জন ভোগ খান সেখানে। পূজার চার দিনই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এই পূজার আরেকটি অবচ্ছেদ্য বিষয় হলো ধুনচি নাচ। প্রতিবছরই ধুনচি নাচের ব্যবস্থা থাকে। নতুন প্রজন্মও তাতে অংশ নেয়। শিবরামপুরের সমন্বয় পার্ক দুর্গাপূজার বয়স বেশি নয়, তাহলেও অল্প সময়ের মধ্যে নজর কেড়েছেন এই পূজার নারী উদ্যোক্তারা। ছোট্ট পাড়া কিন্তু উৎসাহের কোনো কমতি নেই। অল্প পরিসরেই গুছিয়ে পূজা করেন এখানকার নারীরা। পূজার চার দিন ধরেই চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। পাড়ায় ছোট বড় সবাই তাতে অংশ নেন। ধুনচি নাচ তো রয়েছেই। নারীদের ধুনচি নাচ এই পূজার বিশেষ আকর্ষণ। প্রতিবছর সাবেকি প্রতিমা হলেও এবারে থিম পূজায় মেতেছেন উদ্যোক্তারা। পূজা কমিটির সেক্রেটারি শিলা বসু এবং সীমা দত্ত জানিয়েছেন আমরা খুব আন্তরিকতার সঙ্গে সবাইকে নিয়েই পূজা করি। মহালয়ার সময় থেকেই পূজার আনন্দ শুরু হয়ে গেছে। অষ্টমীর দিন আমরা সবাই মিলেই প্যান্ডেলে অঞ্জলি দিই। তাছাড়া দুর্গাপূজা শুধু বাঙালির একচেটিয়া অধিকার এটা আর এখন বলা যাবে না। সব ধর্মের মানুষই তাতে অংশ নেয়। অন্যদিকে ৫৮ বছরে পড়ল বেহালার রায় বাহাদুর রোডের নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাবের পূজা। প্রথম থেকেই পূজার দায়িত্ব নারীদের হাতে। এমনিতেই বেহালার পূজার ভিড় সামলাতে হিমশিম খায় পূজা কর্তারা। সেখানে এই পূজা মণ্ডুপের ভিড় সামলান নারীরাই। পূজার খুঁটিনাটি সব কিছুই তাদের হাতে। চাঁদা কাটা থেকে পূজার বায়না, প্রতিমা নিয়ে আসা। পূজার উদ্যোক্তা কণা ঘোষ জানিয়েছেন এবার আমরা প্রকৃতির আরাধনা করছি পূজার মাধ্যমে। গাছপালা কেটে দেওয়ার  ফলে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বাঁশঝাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। তাই সেই বাঁশ দিয়েই মণ্ডুপের রূপ দেওয়া হচ্ছে।

আর কয়েকটা দিন পরেই মা দুর্গা আসছেন তাই তার পথ চেয়েই বসে আছেন এই নারীরা।

সর্বশেষ খবর