দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী নূর হোসেনকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে সম্প্রতি উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা আদালত যে নির্দেশ দিয়েছেন, সেই রায়ের কপি নূরকে পড়ে শোনাল কারা কর্তৃপক্ষ। কলকাতায় আটক বাংলাদেশের বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে গত ১৬ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা আদালত। নূরের বিরুদ্ধে থাকা সব অভিযোগ তুলে নেওয়ার পাশাপাশি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় হাকিম সন্দীপ চক্রবর্তী। একই সঙ্গে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নূরকে ফেরত পাঠানোর যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে আদালতের কাছে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেন হাকিম। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে ওই দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন না নূর।
কারা কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, আদালতে উপস্থিত না থাকায় নিয়ম মেনে নূর হোসেনকে আদালতের নির্দেশ জানানো কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তাই নূর হোসেনকে আদালতের রায়ের কপি পড়ে শোনানো হয়। আদালতের কপি শোনার পরই বেশ কিছুক্ষণ নির্লিপ্ত থাকেন তিনি। কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান ঠিক কোন সময়টায় তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। যদিও কারা কর্তৃপক্ষের তরফে নির্দিষ্ট দিন জানানো সম্ভব হয়নি।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, আদালতের নির্দেশ শোনার পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন নূর। সময়মতো খাওয়া-দাওয়া এবং নামাজ পড়লেও বেশ চুপচাপ। অন্য বন্দীদের সঙ্গেও আগের মতো গল্পগুজব করছেন না। কারা কর্তৃপক্ষের ধারণা, আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় একাধিকবার গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সামনে দেশে ফিরে বিচার ব্যবস্থার মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও এত দ্রুত তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে তা বোধহয় বুঝতে পারেননি তিনি। পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে ১৫ দিন কিংবা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। নিয়ম মেনে নূর হোসেনের বন্দী প্রত্যর্পণের কাগজপত্র চ‚ড়ান্ত হলে বিধাননগর ও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা শাসক, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ), বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)-এর সঙ্গে সমন্বয় করে দিনক্ষণ ঠিক করে নূরকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় প্রধান আসামি নূর হোসেনসহ তিনজনকে গত বছরের ১৪ জুন রাতে কৈখালি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পশ্চিমবঙ্গের বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের বিশেষ পুলিশ বাহিনী।