বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

৬ যুগ পর ফেসবুকে স্বজনদের দেখা পেলেন হায়দার

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

৬ যুগ পর ফেসবুকে স্বজনদের দেখা পেলেন হায়দার

সিনেমায় তো প্রায়ই এ রকম হয়। ১৫-২০ বছর পর হারিয়ে যাওয়া মা-ছেলের কিংবা ভাইয়ের সঙ্গে বোনের দেখা হয়। ছোটবেলায় গাওয়া একটি গানের মাধ্যমে খুঁজে পায় পরিবারের একজন আরেকজনকে। এখন অবশ্য ডিজিটাল যুগ, তাই খুঁজে পাওয়ার তরিকাও ভিন্ন। ফেসবুকের কল্যাণে জীবনের ৮৫ বছরে এসে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেলেন মো. আলী হায়দার। প্রায় ১৫ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি। সেই থেকে ঘরছাড়া। প্রায় ৬ যুগ পর গত সোমবার রাতে মামা-ভাগিনার মিলন ঘটে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭০ বছর আগে আলী হায়দার এসেছিলেন বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রাম এলাকায়। তখন তার বয়স ছিল ১৪-১৫ বছর। চান্দগ্রাম বাজারটিও এখনকার মতো ছিল না। এখানে আসার পর এলাকার অনেকের বাড়িতে গরু-মহিষ চরিয়ে জীবিকা চালাতেন। বছর তিনেক আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই কাজ করতে পারতেন না। খালি জায়গায় পড়ে থাকতেন। বয়সের ভারে স্পষ্ট করে কথা বলতেও পারেন না। এ অবস্থায় মধ্য চান্দগ্রামের ব্যবসায়ী সোনা মিয়া চান্দগ্রাম বাজারের একটি খালি দোকানকোঠায় তার থাকার ব্যবস্থা করেন। তাদের বাড়ি থেকে পাঠানো হতো খাবার। জানা গেছে, নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার কুলছড়ি গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর প্রথম পক্ষের দ্বিতীয় পুত্র আলী হায়দার। মা মারা গেলে বাবা আবার বিয়ে করেন। সৎ মায়ের সংসারে আপন মায়ের অভাব পূরণ হয়নি। এ সময় আলী হায়দার ও তার বড় ভাই নাদেরুজ্জামান বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান।

আলী হায়দার চলে যান ভারতে। বড় ভাই নাদেরুজ্জামানের আর খোঁজ মেলেনি। দুই ভাই চলে যাওয়ার পর একমাত্র ছোট বোন সাফিয়া বেগমও মামার বাড়ি চলে যান। প্রায় চার মাস ভারতে ঘোরাঘুরি করার পর মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রাম এলাকায় চলে আসেন আলী হায়দার।

 

এদিকে সোনা মিয়ার ছেলে কলেজ পড়ুয়া আখতার আহমদ আলী হায়দারকে নিয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দেন। এই স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে আলী হায়দারের আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ মেলে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার বড়লেখার চান্দগ্রামে আসেন আলী হায়দারের ছোট বোন সাফিয়া বেগমের ছেলে আবদুর রহিম। মামা-ভাগিনার মিলনে তখন এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আবদুর রহিম বলেন, ‘আমরা তো ধরে নিয়েছিলাম মামা মারা গেছেন। আখতারের পরিবার ও ফেসুবকের কল্যাণে তাকে ফিরে পেয়েছি।’

সোনা মিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করে দেওয়া হয়েছে। সোমবার রাতেই তারা নোয়াখালী চলে গেছেন।

সর্বশেষ খবর