রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

২০ দলের বৈঠকে যায়নি জামায়াত, নানা প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন ইস্যুতে গতকাল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের বৈঠক ডাকা হলেও তাতে যোগ দেয়নি জামায়াতে ইসলামী। একইভাবে বৈঠকে অংশ নেয়নি আরেক শরিক ইসলামী ঐক্যজোট। এ নিয়ে জোটের ভিতরে-বাইরে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। জোটের প্রধান শরিক বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিশও নির্বাচনে আলাদা প্রার্থী দেওয়ায় জোটে অনৈক্য দেখা দিয়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত ২০-দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভাপতিত্ব করেন। এতে জোটের শরিক দলের মহাসচিব পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গত উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে শীতল সম্পর্কের সূত্রপাত। সর্বশেষ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী দেওয়া নিয়েও জোটের মধ্যে সমঝোতা হয়নি। এবার জামায়াত পৃথক প্রার্থী দিয়েছে এবং এ ব্যাপারে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার আগ্রহই দেখায়নি। জানা যায়, জামায়াত অন্তত ৩০টি, ইসলামী ঐক্যজোট ২টি এবং খেলাফত মজলিশ ৬ পৌরসভায় জোটের বাইরে গিয়ে পৃথক প্রার্থী দিয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি কোনো ছাড় দেয়নি। অবশ্য বিএনপি চট্টগ্রামে এলডিপি এবং কুষ্টিয়ায় জাতীয় পার্টিকে (কাজী জাফর) ছাড় দেয়। এ প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামায়াত বা জোটের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো ফাটল ধরবে না। বৈঠকে জামায়াতের অনুপস্থিতি নানা কারণে হতে পারে। তারা হয়তো নিরাপত্তার কারণে আসতে পারেননি। এ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। জামায়াতের সঙ্গে ভোটের আগের দিনেও সমঝোতা হতে পারে। এটা নির্ভর করবে স্থানীয় নেতৃত্বের ওপর। তৃণমূল যেভাবে চাইবে, সেভাবেই হবে। এটা নিয়ে ভুল বোঝাবোঝির কোনো সুযোগ নেই। ইসলামী ঐক্যজোট নরসিংদী এবং বগুড়া পৌরসভায় প্রার্থী দেয়। এর মধ্যে নরসিংদীতে তাদের প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হলেও বগুড়ায় তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী। তিনি বলেন, ‘আমরা আগে স্থানীয় নির্বাচন করতাম না।

এবার প্রথম স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছি। বিএনপির কাছে কোনো পৌরসভায় সমর্থন চাইনি। আমরা দলগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রার্থী দিয়েছি, সেই প্রার্থী নির্বাচন করবে।’

বিএনপির সূত্রগুলো জানিয়েছে, কেন্দ্রীয়ভাবে এ ব্যাপারে সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা তারা দেখছেন না। এ নিয়ে কারও-ই আলোচনার আগ্রহ নেই। তাই সাংগঠনিক সম্পাদকদের স্থানীয়ভাবে জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে জামায়াত কোথাও তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেনি। বিএনপি ও জামায়াত পৃথকভাবে নির্বাচন করছে।

বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন কারণে মনোনয়নপত্র বাতিলের কারণে যে কয়টি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী নেই, সেখানে জামায়াতকে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জোটের ঐক্যের স্বার্থে বিএনপি আগ বাড়িয়ে এ সিদ্ধান্ত নিলেও জামায়াত কোথাও বিএনপিকে ছাড় দিতে রাজি হয়নি।

বিএনপির হাইকমান্ডের ধারণা, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সরকার ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে পৌরসভাগুলোতে তাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করবে। তবে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে- এমন পরিবেশ তৈরি হলে ভোটের আগের দিনও জোটগতভাবে একক প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি জোর চেষ্টা করবে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ভোটের আগের দিনও জামায়াত যদি বলে, তারা বিএনপি প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে, তাতেই হবে। 

এদিকে গতকাল গুলশান কার্যালয়ে মহাসচিবদের বৈঠকে জামায়াত অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে নিরাপত্তাজনিত কারণ বলা হয়েছে। জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, জামায়াত আগেই জানিয়েছিল আসবে না। নিরাপত্তার কারণে হয়তো আসতে পারবে না। তাই আসেনি। এ নিয়ে জোটে কোনো সমস্যা হয়নি।

বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা বলেন, জামায়াত কেন আসেনি, এ নিয়ে জোটের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের সঙ্গে জামায়াতের কথা হয়েছে। না আসার কারণও বলা হয়েছে। ইসলামী ঐক্যজোটের না আসার প্রসঙ্গ এলেও বিএনপির পক্ষ থেকে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। অবশ্য ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান বলেন, তাদের ময়মনসিংহ জেলা সম্মেলন ছিল, তাই কেউ যেতে পারেননি।

 

সর্বশেষ খবর