বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
বেপরোয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ

ছয় মাসে দুই শতাধিক আহত কার্যক্রম স্থগিত

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেপরোয়া, বেসামাল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। সিট ভাগাভাগি, বগি দখল, চিকা মারা, কটূক্তি, এমনকি ‘পান থেকে চুন খসলে’ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। ছয় মাসে ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজনের অনুসারীরা কমপক্ষে ২০ বার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন। বেসামাল চবি ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে মঙ্গলবার রাতে কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। একই সঙ্গে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেওয়া হয়েছে। তবে কার্যক্রম স্থগিতের এক ঘণ্টার মধ্যেই ফের দফায় দফায় সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগ। এ সময় সংঘর্ষে কমপক্ষে ছয়জন আহত হন। চবি প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী বলেন, দোষীদের কখনো দলীয় মাপকাঠিতে বিবেচনা করে বিচার করা হয় না। সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার অপরাধে ছয় মাসে ২৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে চবি কর্তৃপক্ষ। ছাত্রলীগে ‘অনুপ্রবেশকারী শিবির’ এবং ‘জুনিয়রদের ভুল বোঝাবুঝি’ সংঘাতের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে চবি ছাত্রলীগ সভাপতি আলমগীর টিপু বলেন, ছাত্রলীগ কখনো সংঘাতকে সমর্থন করে না। ছয় মাসে বিভিন্ন অপরাধে ২০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চবি ছাত্রলীগ। চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। একটি গ্রুপ এ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

জানা যায়, গত বছর ২১ জুলাই চসিক মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী আলমগীর টিপুকে সভাপতি ও সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ফজলে রাব্বি সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটি ঘোষণার পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে দুই গ্রুপ। এ সময় সিট ভাগাভাগি, বগি দখল, চিকা মারা, বান্ধবীকে অশালীন মন্তব্য এবং জুনিয়রদের মধ্যে কটূক্তি করা নিয়ে একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় গ্রুপ কমপক্ষে ২০ বার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে দুই শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। সংঘর্ষের পর একে অন্যের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চবি ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা বলেন, আধিপত্য বিস্তার, পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকা, ছাত্রলীগে শিবিরের অনুপ্রবেশ, স্থানীয় রাজনীতির প্রভাব, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতিতে ছাত্রলীগকে ব্যবহার এবং প্রশাসনের সিদ্ধান্তহীনতা ছাত্রলীগের বেপরোয়া হওয়ার অন্যতম কারণ। এসব নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

কার্যক্রম স্থগিত : নিয়ন্ত্রণহীন চবি ছাত্রলীগের লাগাম টানতে মঙ্গলবার রাতে দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। একই সঙ্গে চবি ছাত্রলীগ সভাপতি আলমগীর টিপু ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজনকে কেন বহিষ্কার করা হবে না— তিন কার্যদিবসের মধ্যে তার কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশনাও দিয়েছে কেন্দ্র। চবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করার কথা স্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ।

কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের পর ফের সংঘর্ষ : এদিকে, চবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিতের পর ফের দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনুসারীরা। মঙ্গলবার গভীর রাতে সোহরাওয়ার্দী হলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা হলের কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করেন। এ ঘটনার জেরে গতকাল কয়েক দফায় সংঘাত হয়। হাটহাজারী থানার ওসি (তদন্ত) মো. সালাউদ্দিন বলেন, ছাত্রলীগ সমর্থক মো. আরাফাতের জন্মদিন উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনুসারীরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় তারা হলের কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সংঘর্ষের কারণ অনুসন্ধানে কমিটি : চবি ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে চার সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনকে এবং সচিব করা হয়েছে সহকারী প্রক্টর হেলাল উদ্দিন আহমেদকে। কমিটির সদস্য রয়েছেন সহকারী প্রক্টর মিজানুর রহমান ও শহিদুল ইসলাম।

সর্বশেষ খবর