বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

অর্ধশত ইউপিতে নেই বিএনপির প্রার্থী

প্রাণনাশের হুমকি, নির্বাচন বর্জনে তৃণমূলের চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে আসতে চাপ বাড়ছে বিএনপিতে। প্রথম ধাপে ব্যাপক সহিংসতার ভীতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের। প্রথম ধাপে ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। নিত্যনতুন মামলায় জড়ানো হচ্ছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের। সামনের নির্বাচন নিয়েও শঙ্কায় তারা। তাই নির্বাচন বর্জন করতে জেলা ও উপজেলা নেতারা দলের হাইকমান্ডের কাছে অনুরোধ করেছে। এ নিয়ে ভাবছেন দলের নীতি-নির্ধারকরাও। নির্বাচন থেকে বেরিয়ে আসার লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছেন তারা। ৭১১টির মধ্যে অর্ধশত ইউপিতেও জয় পায়নি দলটি। তাই এ নির্বাচনে থাকা না থাকা সমানই বলে মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীরা। এসব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সর্বশেষ তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অর্ধশত ইউপিতে প্রার্থীই দিতে পারেনি বিএনপি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলায় অন্তত ৪০টি ইউপিতে প্রার্থী নেই। সেখানে পাহাড়িদের ভয়ে শুধু বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলও বেশ কয়েকটিতে প্রার্থী দিতে পারেনি। এ ছাড়া গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ২টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩টি, নীলফামারীর ডিমলা ও ঝিনাইদহে ১টি করে ইউপিতে প্রার্থী দিতে পারেনি দলটি। অবশ্য রাঙামাটিতে সবকটি ইউপিতেই ভোট স্থগিত রেখেছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপির অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের সশস্ত্র মহড়ার কারণে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়েই যেতে পারেননি বিএনপির প্রার্থীরা। নির্বাচনের শুরু থেকেই প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে প্রার্থীসহ তার পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় প্রশাসনও নেতা-কর্মীদের এলাকায় থাকতে দেয় না। প্রচারণাও চালাতে পারছেন না ধানের শীষের প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সুষ্ঠু নির্বাচন দূরের কথা, বিএনপি নেতা-কর্মীদের এলাকাতেই থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দিন যতই যাচ্ছে নির্বাচনের পরিবেশ ততই নষ্ট হচ্ছে। প্রথম ধাপের সহিংসতা এখনো পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এ সহিংসতা হলেও মামলা হচ্ছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ নির্বাচনের জনমতের কোনো প্রতিফলন নেই। সরকারের কুিসত চেহারা আরও বেশি ফুটে উঠছে। আমাদের কাছে মাঠ পর্যায় থেকে চাপও আসছে, যাতে আমরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াই। কারণ, এ নির্বাচনকে ঘিরে হামলা-মামলা দিন দিন বাড়ছেই। প্রতীক নিয়ে কেউ কেউ নির্বাচন করতেও চাচ্ছে না। তবে প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হলেই যে নির্যাতনের মাত্রা কমত, তা-ও নয়।’

তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে ধানের শীষের প্রতীক পান আবুল হোসেন খান। দলীয় প্রতীক পেয়েও তিনি ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। একই উপজেলার বহরপুর ও জঙ্গল ইউনিয়নে বিএনপির টিকিট পান যথাক্রমে সিরাজুল ইসলাম ও ইউসুফ হোসেন। কিন্তু তারা ক্ষমতাসীন দলের ভয়ে মনোনয়নপত্র জমাই দেননি।  জানা যায়, রাঙামাটি জেলার ৪৯টি ইউপির মধ্যে অন্তত ৩০টিতেই প্রার্থী দিতে পারেনি বিএনপি। যদিও গতকাল নির্বাচন কমিশন ৪৯টির সবগুলো ইউপিতেই ভোট স্থগিত রেখেছে। ওইসব ইউপির নির্বাচন পরে অনুষ্ঠিত হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বেশ কয়েকটিতে প্রার্থী দিতে পারেনি। এমনকি সেখানে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীকেও সমর্থন দেওয়ার সুযোগ নেই। জেলা বিএনপির সভাপতি শাহ আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। এখানে নানাভাবে প্রার্থীদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ কারণেই বিএনপি কোনো প্রার্থী দিতে পারেনি। পাহাড়িরা নানাভাবে সমস্যা করছে।’

খাগড়াছড়িতে ৩৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টিতে কোনো প্রার্থী নেই বিএনপির। পানছড়ির লৌগাং দিঘীনালার বাবুচড়া ইউনিয়নসহ ৩টি ইউপিতে বিএনপির কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীও নেই। ইউপিডিএফ ও জেএসডির আধিপত্য ওই এলাকায়। বান্দরবানের ৩৬টির মধ্যে ৪টিতে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। সেখানেও পাহাড়ি সমস্যাই প্রধান সমস্যা বলে মনে করেন স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, ইউপি নির্বাচন মড়ার উপর খাড়ার ঘা। এমনিতেই বিএনপি নেতা-কর্মীরা হামলা মামলায় পর্যুদস্ত। এর মধ্যে নির্বাচনের সহিংসতায় আবারও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের নতুন নতুন মামলায় জড়ানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নিজেরাই সহিংসতা ঘটিয়ে তার দায় দিচ্ছে বিএনপির ওপর।

বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, ‘তৃতীয় ধাপে ৬৮৩টির মধ্যে বিএনপি ৬৩৬টিতে প্রার্থী দিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি জোটের শরিক দলগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বাধার কারণে প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

সর্বশেষ খবর