শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

শিশুরা সব ভোটের লাইনে!

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার ৫টি এবং বরুড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে গতকাল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কেন্দ্রে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ কেন্দ্রে সাংবাদিক দেখে শিশুদের ভোটার লাইনে দাঁড় করানো হচ্ছে। এ দৃশ্য দেখা গেছে সদর দক্ষিণ উপজেলার জোড়কানন পূর্ব ইউনিয়নের রাজেশপুর, জগতপুরে। জোড়কানন পশ্চিম ইউনিয়নের কালিকাপুর, বাটপাড়া, সুয়াগাজী ও রঘুরামপুর কেন্দ্রে। রঘুরামপুর কেন্দ্রের কয়েকজন নারী ভোটার জানান, তারা কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন তাদের ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। রাজেশপুর কেন্দ্রে নৌকার সিল মারা ২০০ ব্যালট পেপার নিয়ে বসে আছেন এক সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার। সিলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু লোক এসে জোর করে ব্যালটে সিল মেরেছেন। সাংবাদিক দেখে সরে গেছেন। সুয়াগাজী কেন্দ্রেও একই দৃশ্য দেখা যায়। সেখানে ৩০০ ব্যালট বাতিল করা হয়। এ ছাড়া সারা দিন বিভিন্ন কেন্দ্র দখলের অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে বেশি অনিয়ম হলেও সদর দক্ষিণ উপজেলায় কোনো কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়নি।  এদিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত ৫ প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেন।

দুপুর  পৌনে ৩টার দিকে তারা সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। তারা হলেন— পেরুল দক্ষিণ ইউপির মাসুদ করিম, চৌয়ারার ইসমাইল হোসেন মজুমদার, বারপাড়ার মোস্তফা কামাল, পশ্চিম জোড়কাননের মোস্তফা  মোরশেদ চৌধুরী এবং পূর্ব জোড়কাননের মো. শাহনেওয়াজ। সংবাদ সম্মেলনে তারা আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপি, ব্যালট পেপার ছিনতাই এবং তাদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেন। এ ছাড়া কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার আরও দুজন ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তারা হচ্ছেন— চৌয়ারা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এটিএম ইদ্রিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা নূর হোসেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া অন্য সব প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেন।

এদিকে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আদ্রা ইউপির পেরপেটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের কাছে নৌকার প্রার্থী মনজুর হোসেন মজুমদারের চাচা নাজিম উদ্দিনের বাড়ি  থেকে ২৫টি ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রার্থীর  ছেলে হাছান জামিলসহ ১৬ জন বহিরাগতকে আটক করা হয়। তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল কেন্দ্র দখলের। এ সময় পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান ও সাদেকুর রহমানের নেতৃত্বে তাদের আটক করা হয়। এ সময় প্রার্থী মনজুর হোসেন মজুমদার তার লোকদের ছাড়াতে বিভিন্ন দিকে ফোন করতে থাকেন। 

মনজুর হোসেন মজুমদারের উত্কণ্ঠা দেখে পেরপেটি গ্রামের কামাল হোসেন মজা করে বলেন, এই দখলের সময়ে ক্ষমতাসীন দলের লোক হয়েও মনজুর হোসেন মজুমদার তার লোকদের ছাড়াতে পারছেন না। বরুড়া আসনে সরকার দলীয় এমপি থাকলে তাকে এই হয়রানিতে পড়তে হতো না! এখানের এমপি জাপা থেকে নির্বাচিত।

এদিকে বরুড়া উপজেলার চিতড্ডা ইউনিয়নের মুকুন্দপুর ও বংগুয়া কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। একই উপজেলার ৩ নম্বর  খোশবাস ইউপির আরিফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়  কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমর্থকদের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। দুই উপজেলার মধ্যে সদর দক্ষিণ উপজেলা থেকে বরুড়া উপজেলায় নির্বাচন তুলনামূলক সুষ্ঠু হয়েছে বলে ভোটাররা জানান।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর