বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিদ্রোহের কবলে নৌকা নীরব বিএনপি

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্, শ্রীপুর থেকে ফিরে

বিদ্রোহের কবলে নৌকা নীরব বিএনপি

রাজধানীর পাশের জেলা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আট ইউনিয়নে নির্বাচনী উৎসব চলছে। আগামী ২৩ এপ্রিল এসব ইউনিয়ন পরিষদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন উপলক্ষে শ্রীপুরের গ্রামে গ্রামে শুধু পোস্টার আর পোস্টার। গাজীপুরের শ্রীপুরকে বলা হয় আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এখানে যে কোনো ভোটে এগিয়ে থাকেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই। তবে এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গতকাল পর্যন্ত মাঠের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় নৌকা মার্কার বিপরীতে কথা বলছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী। এর কারণ প্রার্থী মনোনয়নে অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং সঠিক ব্যক্তির হাতে নৌকা না দেওয়া। ফলে উপজেলার আট ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপির একক প্রার্থী থাকলেও নির্বাচনী মাঠে তেমন একটা সরব নেই। আট ইউনিয়নের দু-একটিতে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থীকে মাঠে পাওয়া গেলেও অন্যদের তেমন দেখা মেলে না। গতকাল শ্রীপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এসব চিত্র। গতকাল দুপুরে গোসিঙ্গা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. শাহজাহান সরকারকে সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করতে দেখা গেছে। গোসিঙ্গা মাদ্রাসার সামনেই দেখা হয় শাহজাহান সরকারের সঙ্গে। এ সময় তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নৌকার বিজয় নিশ্চিত দেখে অন্য প্রার্থীরা আবোল-তাবোল বকছেন। তিনি বলেন, আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। আর আমার সহ-সভাপতি বরকত উল্লাহ খোকা নৌকা চেয়ে না পেয়ে এখন আমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় সব নেতা-কর্মী আমার পক্ষে কাজ করছেন। বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষের প্রার্থী (বর্তমান চেয়ারম্যান) খন্দকার আসাদুজ্জামান দুপুরের দিকে মাটিয়াগাড়া এলাকায় গণসংযোগকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আশঙ্কায় রয়েছি সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে। সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমি আবারও চেয়ারম্যান হব। এলাকায় গণসংযোগ করছেন তিনি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস প্রতীকের বরকত উল্লাহ খোকা কর্ণপুর, লতিফপুর, নারায়ণপুরসহ কয়েকটি এলাকায় গণসংযোগ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, তার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে নৌকার লোকজন। তার কর্মীদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করছে। কিন্তু এক দিন করলে পরদিন আর আসে না। কারণ তাদের হুমকি দেওয়া হয়।

এদিকে শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। এখানে আওয়ামী ঘরানার না হয়েও পেয়েছেন নৌকা প্রতীক। আর এতেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ। গতকাল দুপুর ২টার দিকে বরমী বাজারে নিজস্ব কার্যালয়ে দেখা হয় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শামছুল হক বাদল সরকারের সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নৌকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌকা। এটা আমার একার কোনো সম্পদ নয়। নৌকার বিজয় নিশ্চিত। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী মো. রাজ্জাক বেপারীর সঙ্গে গতকাল বিকাল ৩টার দিকে বরমী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা হয়। এ সময় তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার কর্মী-সমর্থকদের মারধর করায় এখন কেউ সাহস করে প্রচারণায় নামতে চাচ্ছেন না। তিনি বলেন, আমার পক্ষে গণসংযোগ করে অনেকে হামলার শিকার হচ্ছেন। নৌকার প্রার্থীর উপস্থিতিতে এসব হামলার ঘটনা ঘটে। তবে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন বাদল সরকার। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী ধানের শীষের আক্তারুজ্জামান শামীম আহমেদ গণসংযোগে ব্যস্ত ছিলেন বরমী বাজারের বিভিন্ন এলাকায়। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো বাধা-বিঘ্ন হচ্ছে না। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যেই ধাক্কাধাক্কি হচ্ছে। শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল আলম প্রধান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের বিজয় নিশ্চিত করতে দলীয় নেতা-কর্মীরা রাত-দিন পরিশ্রম করছেন।

সাধারণ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে আমরা ভোট প্রার্থনা করছি।

শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাজাহান ফকির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপির প্রার্থীদের সরকারদলীয় লোকজন নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। কয়েকটি ইউনিয়নে আমাদের প্রার্থী ঘর থেকে বের হতেই পারছেন না।

সর্বশেষ খবর