সোমবার, ৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার চায় নোয়াব

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের সংবাদপত্র শিল্পে ব্যবহূত নিউজপ্রিন্ট কাগজ আমদানিতে আরোপিত ৫ শতাংশ শুল্ককর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে এই খাতের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। সংগঠনটি নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে অগ্রিম ভ্যাট (এটিভি) বাতিল, কালি, প্লেট ও প্রিন্টিং ম্যাটেরিয়াল আমদানিতে শুল্ককর প্রত্যাহার এবং বিজ্ঞাপনের অগ্রিম আয়কর (এআইটি) সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কর্তন না করার দাবি জানিয়েছে।

গতকাল রাজধানীর সেগুন বাগিচায় রাজস্ব ভবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড—এনবিআর আয়োজিত ‘প্রাক-বাজেট ২০১৬-১৭’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন সংবাদপত্র শিল্পের মালিকরা। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় মূল দাবিনামা উপস্থাপন করেন নোয়াব সভাপতি ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। আরও বক্তব্য দেন নোয়াবের সহসভাপতি ও সমকাল প্রকাশক এ কে আজাদ, সংগঠনটির সদস্য ও দৈনিক ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ইংরেজি দৈনিক দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক এ এইচ এম মোয়াজ্জেম হোসাইন এবং বণিকবার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। এ সময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের জ্যেষ্ঠ সদস্য ফরিদ উদ্দিন, সদস্য তন্দ্রা শিকদার, পারভেজ ইকবাল, ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।

প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় সংবাদপত্র মালিকদের বিভিন্ন দাবির জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, আপনারা একেক জন একেকটা প্রতিষ্ঠান। আপনাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি আছে। নোয়াবের এসব দাবি ও প্রস্তাব বিবেচনার জন্য আমি অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি তুলে ধরতে উদ্যোগ নেব।

এর আগে নোয়াব সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, দেশের সংবাদপত্র শিল্প আমরা রুগ্ন বলব না, তবে খুব প্রবল শক্তিশালীও বলব না। তারপরও বাংলাদেশের নানা উত্থান-পতনে সংবাদপত্রের একটা ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। তাই যে কোনো অবস্থায় সংবাদপত্র যাতে তার অবস্থানে থেকে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সেক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, দৈনিক পত্রিকার নিউজপ্রিন্ট কাগজ আমদানিতে বর্তমানে ৫ শতাংশ শুল্ককর ও ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর—মূসক বা ভ্যাট দিতে হয়। সব মিলিয়ে ২০ দশকি ৭৫ শতাংশ প্রকৃত শুল্ককর পরিশোধ করতে হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি টন নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে ৫৫০ মার্কিন ডলার খরচ করতে হয়। অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রতি টন নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে মূল্য দাঁড়ায় ৫৫ হাজার টাকা।

এর সঙ্গে অন্যান্য উপাদান কালি, প্লেট, কেমিক্যালের ওপরও ভ্যাট-কর দিতে হচ্ছে। এসব খাতে অর্থ ব্যয় করে পত্রিকা প্রকাশ দিন দিন অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তাই নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ককর মওকুফ করা হোক। তিনি প্রতিবেশী ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্রের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, দেশীয় নিউজপ্রিন্টের মান পত্রিকা প্রকাশের উপযোগী নয়। ভারতসহ প্রতিবেশী একাধিক দেশে নিউজপ্রিন্ট শিল্প থাকা সত্ত্বেও সংবাদপত্রের কাগজ আমদানিতে কোনো শুল্ক নেই। তিনি নিউজপ্রিন্টের বরাদ্দপত্র দুই মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে কেবলমাত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্বাক্ষরে অনুমোদনের ব্যবস্থা করতে এনবিআরের প্রতি অনুরোধ করেন।

প্রকাশক এ কে আজাদ বলেন, গত বছর সরকার সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সেই বিবেচনায় কাঁচামাল হিসেবে কাগজ আমদানিতে অন্যান্য শিল্পের ন্যায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে পারে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে অচিরেই সাংবাদিকদের নতুন ওয়েজবোর্ডের দাবি আসবে। আয় না হলে কোত্থেকে টাকা দেব? এ সময় সংবাদপত্র শিল্পের নানামুখী সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, সংবাদপত্র কোনো লাভজনক শিল্প নয়। এটিকে টিকিয়ে রাখতে সবার কাজ করা দরকার।

তাসমিমা হোসেন বলেন, সংবাদপত্র শিল্পকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা হোক। এ শিল্পের সব মেশিনারি আমদানি নির্ভর। আমরা সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সমস্যায় আছি। তবুও আমাদের ওপর এত প্রেসার কেন? আমাদের প্রেসার না দিয়ে সহানুভূতি থাকা উচিত।

দেশি কাগজ ব্যবহারের অসুবিধাসমূহ তুলে ধরে লিখিত বাজেট প্রস্তাবে নোয়াব বলেছে, সংবাদপত্রে ৪৫ জিএসএমের কাগজ ব্যবহূত হয়। কিন্তু দেশি নিউজপ্রিন্ট হয় ৪৮ থেকে ৫০ জিএসএমের। এটা আমদানি করা কাগজের তুলনায় অতি নিম্নমানের। ফলে প্রতিকেজি কাগজে পত্রিকার উৎপাদন কম হয়। এক কেজি বিদেশি কাগজে ২৪ পৃষ্ঠার একটি পত্রিকার ৮ থেকে ৯টি কপি ছাপা হয়, সেখানে দেশি কাগজে হয় ৬ থেকে ৭টি। এভাবে এককেজি কাগজে দুটি করে পত্রিকার কপি কম ছাপা হয়। এতে সংবাদপত্র শিল্পের ব্যয়ও বাড়ছে। আবার কাগজের মান খারাপ হওয়াতে রঙিন ছাপার মানও খারাপ হয়।

সর্বশেষ খবর