মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

‘রমজানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন রমজান ও ঈদুল ফিতরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। গতকাল সকালে ডিএমপি সদর দফতরে আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক সভায় তিনি এ কথা বলেন। ডিএমপি সূত্র জানায়, রমজান ও ঈদুল ফিতরে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সকালে ডিএমপি সদর দফতরে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ডিএমপির বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সভায় প্রধান অতিথি ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, রমজান ও ঈদুল ফিতরে ঢাকা মহানগরীর চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ যে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে পুলিশ জিরো টলারেন্সে থাকবে। মহানগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতারা যাতে নিশ্চিন্তে কেনাকাটা করতে পারে সে জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। ঈদের আগেই রাজধানীর সব মার্কেট ও শপিং মলে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট দোকান মালিক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে। কেনাকাটার সময় মার্কেটে জাল নোট পরীক্ষা করার যন্ত্র বসানো হবে, যেন জাল নোট ছড়িয়ে না পড়ে।

বৈঠকে ডিএমপি কমিশনার যানবাহন ও ট্রাফিক ব্যবস্থা সম্পর্কে বলেন, বাস, লঞ্চ ও রেলওয়ে টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুলিশের পাশাপাশি কমিউনিটি ট্রাফিক পুলিশিং ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে বিভিন্ন টার্মিনালের পুলিশ ফাঁড়িগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স  মোতায়েন করা হবে। যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা যাবে না। ফুটপাথে, রাস্তার পাশে জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন হয় এমনভাবে গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। যে কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে ও হেলপার দিয়ে যাতে গাড়ি চালাতে না পারে  সে জন্য বাস ছাড়ার আগে প্রত্যেক টার্মিনালে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেকিং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে  নৌ-পুলিশ ও ডিএমপির উদ্যোগে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে  যৌথ  নৌ-টহল ব্যবস্থা থাকবে, পাশাপাশি সার্বিক মনিটরিং করার জন্য একটি পুলিশ কন্ট্রোল রুম থাকবে। ঈদে লঞ্চ মালিকদের সতর্ক করে তিনি বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস  দেখে লঞ্চ ছাড়তে হবে এবং  নৌকা দিয়ে  যেন কোনো যাত্রী লঞ্চে না উঠতে পারে সে বিষয়েও পুলিশ বিশেষ নজর রাখবে। লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রী যেন বহন না করতে পারে এবং ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন যেন চলাচল করতে না পারে সেক্ষেত্রেও থাকবে ডিএমপির বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ ছাড়া ডিএমপির আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকে আরও বলা হয়, রমজান মাস ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থের লেন-দেন ও স্থানান্তর বাড়বে। তাই কোনো ব্যক্তি, সংস্থা, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থ স্থানান্তরের জন্য পুলিশের সহায়তা প্রয়োজন মনে করলে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করবে। থানা অপারগ হলে পুলিশ অ্যাস্কর্ট প্রত্যাশী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে আবদুল গণি রোডে অবস্থিত পুলিশ কন্ট্রোল রুমে গাড়ি পাঠালে মানি অ্যাস্কর্টে পুলিশি সহায়তা পাওয়া যাবে।

ডিএমপি কমিশনার ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি ওই সভায় গার্মেন্ট মালিকদের অনুরোধ করে বলেন, সময়মতো গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করা হলে সে সময় শ্রমিক আন্দোলন ও কোনো প্রকার নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটবে না। এ উপলক্ষে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা করে তিনি বলেন, ডিএমপির পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের মাধ্যমে বাজার মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন কোনোভাবেই দ্রব্যের মূল্য বাড়াতে না পারে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।

রমজান ও ঈদে মলম পার্টি ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা যেন কোনো প্রকার অপতত্পরতা চালাতে না পারে সে জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা থাকবে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, অপরিচিত কোনো ব্যক্তি মোবাইলে হুমকি বা চাঁদা দাবি করলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে হবে। মোবাইলে হুমকি ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট তত্পর রয়েছে। সেই সঙ্গে ঈদের ছুটিতে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তাদের নিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখে ছুটিতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সবাই মিলে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

সর্বশেষ খবর