প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত ঝুঁকি থাকলে তা আরও সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না। নিজেকে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বড় সমর্থক দাবি করে তিনি বলেন, ‘রামপাল এখন বিতর্কে পরিণত হয়েছে। এটা সঠিক কারণে হতে পারে, বেঠিক কারণেও হতে পারে। এর মানে এই নয় যে পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ থাকলে তা পুরোপুরি বিবেচনা করা হবে না। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে পক্ষে ও বিপক্ষে অনেক মত আছে। তবে এই রামপালের কারণে দেশের বিদ্যুৎ খাত অনেক উন্নত হবে। খুলনা ও যশোর অঞ্চল শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে। বিদ্যুৎ খাতের বৃহৎ প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অবশ্যই বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে হবে।’
গতকাল মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে দেশের প্রাচীন বাণিজ্য সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘জ্বালানি খাতের মেগা প্রকল্পে অর্থায়নে প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব তারিক-উল-ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. এম ফউজুল কবির খান। ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেন, ইনফ্রাসট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট তানভির এ সিদ্দিকী, রিভারস্টোন ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফ আহমেদ, ডিসিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি হুমায়ুন রশিদ, সাবেক সভাপতি রাশেদ মাকসুদ খান প্রমুখ।
সাবেক আমলা ড. মশিউর রহমান বলেন, বড় বড় প্রকল্পের অর্থায়ন নিশ্চিত করার জন্য সরকার ‘দীর্ঘমেয়াদি বন্ড ব্যবস্থা চালু’ করতে পারে সরকার। জনগণকে এ ধরনের বন্ডে বিনিয়োগ করার বিষয়ে উৎসাহিত করার জন্য সরকারের পদক্ষেপ প্রয়োজন। তবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য বিদ্যমান কর নীতিমালাকে যুগোপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক হতে হবে। তিনি ৬ থেকে ৮ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি দেশের বর্তমান অর্থনীতির জন্য খুব বেশি উদ্বেগের বিষয় নয় বলেও মন্তব্য করেন।তিনি বলেন, ‘আমার কাছে যে তথ্য আছে তা হলো, সুন্দরবনের সংরক্ষিত অঞ্চলের চার থেকে ছয় মাইল দূরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হবে। তবে সেখানে যদি কোনো ইস্যু থাকে, তাহলে তা আরও সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব তারিক-উল-ইসলাম বলেন, ২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন বিদ্যুতের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তবে আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেয়, যার আলোকে এখন অনেক মেগা প্রকল্প হচ্ছে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সরকার মোট বিদ্যুতের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ দেশীয় উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকার পরিবেশগত ঝুঁকির সব বিষয় মূল্যায়ন করেছে। রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলে সুন্দরবনের ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই।
ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, বলিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ ছাড়া শিল্পায়নের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। তার মতে, সময়মতো অর্থায়ন নিশ্চিত না করার কারণে অনেক সময় স্থ্থানীয় ও জয়েন্ট ভেঞ্চার উদ্যোগ ব্যাহত হচ্ছে।
ডিসিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি হুমায়ুন রশিদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত জ্বালানি আমদানির বিষয়টি ভবিষ্যতে আরও বেশি ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে পড়বে। তাই ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের দেশীয়ভাবে উৎপাদনকৃত কয়লা ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বেশি মনোযোগী হতে হবে।