রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দোকানদার ছাড়াই দোকান

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

সমাজে যখন সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, তখনই ব্যতিক্রম এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর গিলাবাড়ী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান-ই-হাবিব। দোকানির পরিবর্তে একটি কাগজে পণ্যের মূল্য তালিকা লিখে তা পণ্যের ঝুড়িতে লাগানো আছে। প্রয়োজনীয় পণ্যটি সংগ্রহের পর নিজ দায়িত্বেই দাম পরিশোধ করে শিশুরা। তাতে খাতা, কলম, পেনসিল, রাবার, স্কেল, পেনসিল কাটার, বিস্কুট সাজিয়ে রাখা। প্রতি ঝুড়িতে পণ্যের দাম লিখে দেওয়া রয়েছে। সেখানে একটা কৌটা রাখা। শিশুরা আসছে, যে যার দরকারমতো ঝুড়ি থেকে খাতা, কলম, পেনসিল বা রাবার তুলে নিয়ে কাগজে লেখা দাম দেখে ওই কৌটার মধ্যে নির্দিষ্ট টাকা ফেলে চলে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, এটা কোনো দোকান নয়, এটা শিশুদের সততাচর্চার একটা কেন্দ্র।

সরেজমিন দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনের বারান্দায় টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে খাতা, পেনসিল, কলম, জ্যামিতি বক্স, বিস্কুটসহ বিভিন্ন পণ্য। দোকান আছে, ক্রেতাও আছে কিন্তু নেই শুধু বিক্রেতা। শিক্ষার্থীরা নিজেদের ইচ্ছামতো পণ্য নিচ্ছে আর দাম পরিশোধ করছে। গত ২২ আগস্ট ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গিলাবাড়ী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে এ শিক্ষাপণ্য কেনার ব্যতিক্রমী দোকান চালু করা হয়। এ দোকানে কোনো বিক্রেতা নেই।

স্কুলের শিক্ষক ও দোকানটির দেখভালকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২২ আগস্ট প্রধান শিক্ষক আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের নিয়ে একটা সভা করেন। সেখানে তিনি শিশুদের মধ্যে সততার বোধ জাগানোর জন্য ‘গুডনেস শপ’ নামের এই দোকান চালুর ঘোষণা দেন। ওইদিনই খাতা, কলম, পেনসিল, রাবার, স্কেল, পেনসিল কাটার, বিস্কুট আনিয়ে দোকানটি চালু করা হয়। এ দোকানে কেনা দামেই সব জিনিস বিক্রি করা হয়। কোনো লাভ করা হয় না। বিক্রির পর জমা হওয়া টাকা গুনে আবার নতুন করে পণ্য কিনে আনা হয়।’ ওই দোকানে স্কেল কিনতে আসা ষষ্ঠ শ্রেণির লিয়া বলে, ‘বাইরের দোকান থেকে এ দোকানে দাম কম। তা ছাড়া কেউ টাকা চাচ্ছে না, আমি নিজেই টাকা দিয়ে চলে যাচ্ছি। এজন্য আমার খুব মজা লাগে।’

বিদ্যালয়ের সপ্তম, অষ্টম, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিম, রনি, আসমা, মনিরুজ্জামান ও রিচি আক্তার বলে, ‘আমাদের ক্ষুধা লাগলেই এখান থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিস্কুট কিনে এর মূল্য বাক্সে রেখে দিই। এখানে বাকিতে পণ্য নেওয়ার সুযোগ নেই। যদি টাকা না থাকে তাহলে শিক্ষকদের কাছ থেকে ধার নিয়ে খাবার কেনার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এখানে কাগজ, কলম, স্কেল বাইরের থেকে অনেক কম দামে পাওয়া যায়। বাইরের থেকে এখানে পণ্যের দাম ২-৩ টাকা কম হয়।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান-ই-হাবিব বলেন, ‘এই দোকানের মাধ্যমে শিশুদের সততা ও সত্যবাদিতা শেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি, এটা ভবিষ্যতে তাদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে ভূমিকা রাখবে।’

মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সোহাগ বলেন, এ ধরনের মহতী ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগের ফলে শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা তৈরি হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাহিন আক্তার বলেন, এ ধরনের চিন্তা-চেতনা শিশু শিক্ষার্থীদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর