ভোটের মাঠে নারায়ণগঞ্জের মানুষ চায় শান্তিতে বসবাস, ব্যবসায়িক নিরাপত্তা, মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি পেতে। কিন্তু সেই গ্যারান্টি কোনো প্রার্থী দিতে পারবেন বলে মনে করেন না ভোটাররা। গতকাল নারায়ণগঞ্জ সদরের ১২, সিদ্ধিরগঞ্জের ৮ ও কদম রসুল এলাকায় ঘুরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দোকানদার ও ইপিজেডের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায় এ চিত্র। তাদের ভাষায়, আমরা চাই নিরাপত্তা। শান্তিতে ঘরবাড়িতে থাকতে চাই ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ চাই। চাই মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি।
নারায়ণগঞ্জের মানুষ স্বনামে কিছু বলতে চায় না। আওয়ামী লীগের থানা কমিটিতে আছেন এমন ব্যক্তিরাও নিজ নাম উদ্ধৃত করে কিছু বলতে নারাজ। একই অবস্থা বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাদেরও। তবে স্থানীয় ভোটার ও তৃণমূল নেতারা ভোট ভাবনায় বেশ স্বচ্ছ। তারা বলেন, বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন ক্লিন ইমেজের লোক। সাত খুনের মামলায় লড়ে তিনি আলোচিত। তিনি মাঠপর্যায়ে তুলে ধরতে চাইছেন মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ দমনসহ মেয়র হিসেবে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর ব্যর্থতাগুলো।
স্থানীয় ভোটারদের ভাষায়, ভোটের এখনো অনেক দেরি। ভোট দেব গোপনে। আপনারা শুনতে চান প্রকাশ্যে।ঝামেলাটা হলো নৌকা ও ধানের শীষ নিয়ে কথা বলা। বড় বড় নেতারা বলছেন নৌকার পক্ষে ভোট হবে, ধানের শীষের পক্ষে ভোট হবে-তাহলে আমরা হরিদাস পালদের মতামত নিয়ে আপনাদের কাম কী? চায়ের দোকানের আড্ডায় আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক বলেন, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রথম থেকেই নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনকে নৌকা ও ধানের শীষের লড়াই হিসেবে দেখতে রাজি নন। তার মতে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতীক একটি ফ্যাক্টর। তবে এর পাশাপাশি ব্যক্তি ইমেজ ও জনভিত্তি গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য তিনি নিজের ব্যক্তি ইমেজ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে পুঁজি করেই মাঠে নেমেছেন। দল তাকে সমর্থন জোগাচ্ছে। আইভীর প্রচারণা কৌশলে আছে বিগত সময়ে দলবাজির বাইরে থেকে এলাকার উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ক্লিন ইমেজকে কাজে লাগানোর চেষ্টা।
ইপিজেডের এক ব্যবসায়ী বলেন, ভোটের হিসাব এখন আগের মতো আবেগনির্ভর নেই। আপনি হলফ করে বলতে পারবেন না সংখ্যালঘু বা লাঙ্গলের সব ভোট নৌকায় যাবে। সংখ্যালঘু ভোটে আওয়ামী লীগের আইভীর নিয়ন্ত্রণ কতটুকু এ নিয়ে অনেকেরই সংশয় আছে। আবার সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কোনো প্রার্থী দেয়নি, তারপরও বলা যায় না লাঙ্গলের সব ভোট নৌকায় যাবে? নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭টি ওয়ার্ড পড়েছে জাপার এমপি সেলিম ওসমানের (নারায়ণগঞ্জ-৫) নির্বাচনী এলাকায়। এ কারণে অনেকে নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমানকে জাপার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ধরে রেখেছিলেন। জাপার নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সভাপতি আকরাম আলীও মেয়র পদে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। দল এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তারা কেউ প্রার্থী হননি। কিন্তু এসব ভোট তো মাঠে আছে। তারপর জামায়াতের সব ভোট কী ধানের শীষে আসবে? এ বিষয়টিও নিশ্চিত করে বলা যায় না।
২৭ ওয়ার্ডে সবকটি আসনে ওয়ার্ড কাউন্সিলরই নেই বিএনপির। দলের নামে নির্বাচন করা ঝুঁকি বিবেচনা করে অনেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল সব ওয়ার্ডে প্রার্থী না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, হামলা-মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে অনেকেই পালিয়ে আছেন। কেউ জেলে আছেন। তবে স্বনামে না হলেও বিএনপির নীরব উপস্থিতি আছে সব ওয়ার্ডে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে বিএনপি কত বড় ফ্যাক্টর এটা শামীম ওসমানের চেয়ে ভালো কেউ জানে না। গত সিটি নির্বাচনে তিনি সেটা ভালো মতোই বুঝেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হবে।
ভোটের মাঠ ঘুরে জানা যায়, আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর আগে নেতা-কর্মীদের নানা দ্বন্দ্ব ও মান-অভিমান মিটিয়ে পূর্ণ শক্তিতে মাঠে নামতে চাইছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। এ জন্য মাঠপর্যায়ের মুরুব্বিদের নিয়ে চলছে সভা, উঠোন বৈঠক ও আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে নানা দেন-দরবার। আগামী ৫ ডিসেম্বরে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর শুরু হবে প্রকাশ্য ভোট যুদ্ধের খেলা। ভোট যুদ্ধের আগেই মাঠ দখলের ছক করছেন সবাই। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলররা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ৭ লাখ ১০ হাজার মানুষের সিটি করপোরেশন এলাকায় ভোটার ৪ লাখ ৮০ হাজার।