শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষত সারাবে ‘ভ্যাকুয়াম মেশিন’

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রীতিমতো আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে ‘ডায়াবেটিক ফুট’ সমস্যা। এ সমস্যায় ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ে সামান্য ক্ষত সৃষ্টি হলেই তা দ্রুত পুরো পায়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে কেটে ফেলতে হয় পা। অন্যদিকে, বিভিন্ন কারণে যেসব রোগীদের দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী হয়ে থাকতে হয়, তাদের শরীরেও ক্ষত তৈরি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ সমস্যাকে বলা হয় ‘বেডসোর’। এ উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষতস্থান সহজে ভালো (শুকানো) হয় না। তবে এবার আশা যোগাচ্ছে ‘ভ্যাকুয়াম মেশিন’।

সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাজু মিয়া ‘ভ্যাকুয়াম অ্যাসিস্টেড ক্লোজার থেরাপি’ বা সংক্ষেপে ‘ভ্যাকুয়াম থেরাপি’ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবন করেছেন ‘ভ্যাকুয়াম মেশিন’।

ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিক ফুট চিকিৎসক ডা. মঞ্জুর আহমদের আইডিয়াকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবিত এ মেশিনের মাধ্যমে ‘ডায়াবেটিক ফুট’ ও ‘বেডসোর’ রোগীদের গভীর-অগভীর সব ধরনের ক্ষতস্থান দ্রুত ভালো করা সম্ভব।

‘ভ্যাকুয়াম অ্যাসিস্টেড ক্লোজার থেরাপি’ বা ‘ভ্যাকুয়াম থেরাপি’ আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শরীরের গভীর-অগভীর ক্ষতস্থান দ্রুত শুকিয়ে তোলা সম্ভব। ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেন। বর্তমানে উন্নত বিশ্বের কয়েকটি দেশে এ প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। ডায়াবেটিস চিকিৎসক ডা. মঞ্জুর আহমদ জানান, বাংলাদেশে এ প্রযুক্তি আমদানি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ জন্য এ প্রযুক্তির প্রচলন নেই আমাদের দেশে।

থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে ডায়াবেটিস চিকিৎসায় প্রশিক্ষিত ডা. মঞ্জুর ‘ডায়াবেটিক ফুট অ্যান্ড ওউন্ড হিলিং সেন্টারের পরিচালক। কীভাবে দেশেই ‘ভ্যাকুয়াম থেরাপি’ প্রযুক্তি সহজলভ্য করা যায়, এ বিষয়টি ভাবনায় ছিল তার। নিজের ভাবনা রাজু মিয়ার সঙ্গে ভাগাভাগি করেন তিনি। কী চান, কীভাবে কাজ করবে ভ্যাকুয়াম থেরাপি এসব রাজুকে বুঝিয়ে দিলেন ডা. মঞ্জুর। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র না হয়েও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজে লেগে পড়েন রাজু।

রাজু মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেক কঠিন ছিল কাজটি। টানা দুই মাস নিজের বাসা আর মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন ল্যাব-২ এ দিনরাত কাজ করতে হয়েছে। ভ্যাকুয়াম থেরাপি প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবন করেছি ভ্যাকুয়াম মেশিন। এ জন্য বিশেষ সফটওয়্যার তৈরিতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। পুরো মেশিনকে নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করি কন্ট্রোলার সার্কিট বোর্ড। যন্ত্রের মেকানিক্যাল কাজও জটিল ছিল। রাজু জানান, ভ্যাকুয়াম মেশিন উদ্ভাবনে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ভ্যাকুয়াম মেশিনের কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে ডা. মঞ্জুর আহমদ বলেন, ভ্যাকুয়াম মেশিনের সাহায্যে ক্ষত বা অপারেশন সাইট থেকে রক্ত বা তরল শোষণ করা হয়। বিশেষ ধরনের একটি ফোম ক্ষতস্থানে লাগানো হয়। পরে বিশেষ ধরনের পাতলা ফিল্ম দিয়ে ক্ষতস্থান সম্পূর্ণ সিল করে দেওয়া হয়। সিলের ভিতরের একটি পাইপ ভ্যাকুয়াম মেশিনের পাম্পে সংযুক্ত করা হয়। পাম্পের সাহায্যে ক্ষতস্থানের তরল পদার্থ ও সংক্রামক উপাদানসমূহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাইরে টেনে নেওয়া হয়।

উদ্ভাবকরা জানান, ভ্যাকুয়াম মেশিন তৈরির পর ডায়াবেটিক ফুট ও বেডসোর রোগীদের চিকিৎসায় পরীক্ষামূলক ব্যবহার করে সফলতা এসেছে। বর্তমানে যন্ত্রটির মাধ্যমে সিলেটে ডায়াবেটিক ফুট অ্যান্ড ওউন্ড হিলিং সেন্টারে রোগীদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর