শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
সংসদে বাজেট আলোচনা

অর্থমন্ত্রীকে গরিব মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনায় অর্থমন্ত্রীকে গরিব মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর বিরোধিতা করেছেন সরকারদলীয় ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা। একই সঙ্গে তারা ব্যাংকের আমানতে আবগারি শুল্ক বাড়ানোসহ ভ্যাট পুনর্বিবেচনারও আহ্বান জানান।

গতকাল স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদে বাজেট আলোচনায় সরকারদলীয় ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা অংশ নেন। সরকার দলের প্রভাবশালী সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এ সময় বলেন, সঞ্চয়পত্রে সুদ বাড়লে এর সুবিধা পাবে লাখ লাখ মধ্যবিত্ত লোক। এ ছাড়া ব্যাংক আমানতের সুদ এখন নিম্ন পর্যায়ে। অগ্রিম আয়কর কেটে নেওয়া হয়। আছে সার্ভিস চার্জ। চালু আছে আবগারি শুল্ক। সেই আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি করা হলে তা হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। আমার মনে এই প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করতে হবে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট আলোচনার ৭ম দিনে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ, সরকারি দলের মীর শওকত আলী বাদশা, মৃণাল কান্তি দাস, নুরুল ইসলাম সুজন, গোলাম মোস্তফা (নীলফামারী-৩), আবদুল মজিদ মণ্ডল, জয়া সেন গুপ্ত, দিলারা বেগম, গোলাম মোস্তফা (গাইবান্ধা-১), স্বতন্ত্র সদস্য মো. আবদুল মতিন, জাতীয় পার্টির বেগম রওশন আরা মান্নান, শাহানারা বেগম, জাসদের নাজমুল হক প্রধান ও ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, পুরো প্রস্তাবটা তুলে নিলেও সরকারের ক্ষতি হবে ৩৫৫ কোটি টাকা। এটা তো অর্থমন্ত্রীর জন্য একটা পিনাট, আমাদের বাজেটের জন্য এটা একটা পিনাট।

সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর বিরোধিতা করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, সঞ্চয়পত্রের ওপর সুদ কমানো ঠিক হবে না। ১০ শতাংশ সুদ ধরলে হয়তো হবে এক হাজার কোটি টাকা। এর সুবিধা পাবে লাখ লাখ লোক। যাদের জন্য কোনো সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প নেই। তারা ট্রাকের সামনে দাঁড়াতে পারেন না, হাত পাততে পারেন না। ?এদের অনেকে সিনিয়র সিটিজেন। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। আমরা অনেক শ্রেণির মানুষকে ভর্তুকি দেই যারা প্রাপ্য নয়। তার চেয়ে বড় কথা ঋণ খেলাপিদের বিশাল ?বোঝা নিতে পারলে আমরা কেন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের সামান্য বোঝা নেব না। প্রব্লেম একটাই, এদের প্রেসার গ্রুপ নাই, থাকলে লেজ গুটায়ে মেনে ?নেওয়া হতো। মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, ব্যাংকের কাছ থেকে বা বিদেশিদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের ঋণ ভালো ও সহজ। চালের দাম বাড়ার বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, মোটা চালের দাম বাড়লে কৃষক দাম পাবে। আমরা কৃষককে বাধ্য করতে পারি না। আবার চালের দাম রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিষয়। তাই ঝুঁকি নিয়ে ব্যালেন্স করে এগোতে হচ্ছে। তিনি বলেন, হিসাব কষেই আমরা খুশি মনে এবারের বাজেট পাস করতে পারব। এটা সম্পূর্ণরূপে উন্নয়ন বাজেট। আকারও অনেক বড়। এর অর্থ অনেক বেশি অর্থ উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। শেখ হাসিনার মূল মন্ত্র উন্নয়ন। এবারের বাজেটে তা প্রতিফলিত হয়েছে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম মেহের আফরোজ বলেন, বাজেট মানেই উন্নতি। আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীকে যদি সম্পদে পরিণত করতে না পারি তাহলে বাজেট বাস্তবায়ন সত্যিই কঠিন হয়ে পড়বে। এরই মধ্যে মাথাপিছু আয় বেড়েছে। দরিদ্রতা ৩৮ ভাগ থেকে নেমে এসেছে। এসবের মূল কারণ নারীদের আর্থিক উন্নয়ন। নারীরা নিজেরা যে টাকা আয় করে ব্যাংকে রাখে তার ওপর যদি আবগারি শুল্ক আদায় করা হয় তাহলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। অর্থমন্ত্রীকে অন্তত নারীদের দিকে তাকিয়ে ব্যাংকের অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক বাতিল করার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, আগামী নির্বাচনে আপনারা ভুল করবেন না।

প্রস্তাবিত বাজেটের প্রশংসা করলেও আর্থিক খাতে দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচারের কঠোর সমালোচনা করে ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, দেশ থেকে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, পাচারকৃত অর্থ দেশের বাজেটের সমান। তিনি বলেন, এক বছরের বাজেটই যদি বিদেশে পাচার হয়ে যায় এবং তা ফেরত আনতে না পারলে দেশকে উন্নয়নের সড়ক দিয়ে বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। তিনি ব্যাংক আমানতের ওপর থেকে আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

জাসদের এমপি নাজমুল হক প্রধান বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিড়িকে দেশ থেকে বিদায় করে দেবেন। এক্ষেত্রে মন্ত্রী গরিব মানুষদের দিকে তাকাচ্ছেন না। বিড়ির দাম বাড়িয়ে তিনি সিগারেটকে উৎসাহিত করছেন। গরিব লোক যেটা খায় সেটার দাম কেন বাড়ানো হলো? কেন এই বৈষম্য। তিনি বলেন, মন্ত্রী বলেছেন বিড়ি নির্মাণ শ্রমিক কমে গেছে। শ্রমিক কমে গেলে এই শিল্প এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই দাবি করছি, তামাক পণ্যের ওপর একই ধরনের শুল্ক নির্ধারণ করা হোক। মৃণাল কান্তি দাস বলেন, এই বিশাল বাজেট বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বিএনপি জোট দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে। সামনে নির্বাচন। জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বজায় রাখতে হলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। বিএনপি গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে সন্ত্রাসী কার্যকম চালাতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট আকারে বড় হলেও তা বাস্তবায়নযোগ্য। বর্তমান সরকারের গত ৯ বছরে বাজেটের আকার কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার বেড়েছে সাড়ে ৩ গুণেরও বেশি। পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে সরকার সাফল্যের সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিয়ে যেতে সম্ভব হয়েছে। এ বাজেটও সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে। তবে এ জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেন তারা। বলেন, সামনে নির্বাচন। অতীতের মতো তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে। এ জন্য তারা বাজেট বাস্তবায়নে বিএনপি-জামায়াত জোট নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তারা বলেন, কি করে অবিবেচকরা বলে এ বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়? অতীতে তাদের এ ধরনের অবিবেচক বক্তব্য ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবারও তা ভুল বলে প্রমাণ করতে পারব। বেল পাকিলে কাকের কী এ জন্যই তারা এসব কথা বলেন। বাজেটে বলা হয়েছে, উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর