বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ক্লাসে ঢুকে কলেজশিক্ষককে পেটাল ছাত্রলীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালের মুলাদী কলেজের দুই প্রভাষককে লাঞ্ছিত এবং একজনকে ক্লাসরুমে ঢুকে বেঞ্চের পায়া ভেঙে ও রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বহিরাগতদের নিয়ে কলেজের স্নাতক সম্মান হিসাববিজ্ঞান প্রথম বর্ষের ছাত্র ছাত্রলীগ কর্মী শাওন হামলার সময় কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ভাঙচুর করে বীরদর্পে চলে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত দুই প্রভাষকের মধ্যে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের আবদুল আলিমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অপরজন বাংলা বিভাগের প্রভাষক হাফিজ আহম্মেদকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কলেজ অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। হামলাকারীদের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রলীগ কর্মী শাওন মুলাদী পৌর শহরের লঞ্চঘাট এলাকার মো. দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। কলেজশিক্ষক পরিষদের যুগ্ম-সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যাম্পাসে এইচএসসি লেভেলের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত পোশাক এবং স্নাতক সম্মান ও ডিগ্রি (পাস) কোর্সের শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র গলায় ঝোলানো বাধ্যতামূলক।

ক্লাস শুরুর আগে কলেজের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য শিক্ষকরা বিষয়টি প্রতিনিয়ত তদারক করেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে নির্দিষ্ট পোশাক কিংবা পরিচয়পত্র ছাড়া ছাত্রলীগ কর্মী শাওন এইচএসসি ভবনের দোতলায় উঠে যায়। এ সময় কমিটির সদস্য প্রভাষক আবদুল আলিম ও প্রভাষক হাফিজ আহম্মেদ তাকে চ্যালেঞ্জ করলে শাওন তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। একপর্যায়ে ধাক্কা দিয়ে শিক্ষক আবদুল আলিমকে মেঝেতে ফেলে দেয় সে। এ দৃশ্য দেখে শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে কর্তৃপক্ষ শাওনকে শিক্ষক-কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে ওই ঘটনার জন্য শাওন দুঃখ প্রকাশ করে। এর আধঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাওন বহিরাগত ১০-১৫ জনকে সঙ্গে নিয়ে ইসলামের ইতিহাস ক্লাসে ঢুকে শিক্ষক আবদুল আলিমের ওপর চড়াও হয়। তারা বেঞ্চের পায়া ভেঙে এবং সঙ্গে আনা রড দিয়ে ওই শিক্ষকের মাথায় ও শরীরের একাধিক আঘাত করে। এতে শিক্ষক আবদুল আলিম মেঝেতে লুটিয়ে পড়লে ছাত্রলীগ পরিচয়ধারীরা তাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি-লাথি দেয়।

 এ সময় অন্য শিক্ষকরা তাকে রক্ষা করতে গেলে তাদেরও লাঞ্ছিত করা হয়। পরে শাওন তার দলবল নিয়ে স্নাতক সম্মান ভবনের তৃতীয় তলায় ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ভাঙচুর করে বীরদর্পে চলে যায়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোতাহার মিয়া এবং থানার ওসি মতিয়ার রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও কাউকে আটক করতে পারেননি। পরে আহত শিক্ষক আবদুল আলিমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি এবং হাফিজ আহম্মেদকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন এবং বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

এ ঘটনায় কলেজ অধ্যক্ষ বাদী হয়ে শাওনসহ আটজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা সাত-আটজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। এদিকে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন সুমন সেরনিয়াবাত বলেন, হামলাকারী শাওন ছাত্রলীগের কেউ নয়।

সর্বশেষ খবর