শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাবির সেই শিক্ষিকার জালিয়াতি করা থিসিস প্রত্যাহার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আজাদী পারভিন তার পিএইচডি থিসিস পেপার প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ২০১৫ সালে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ছাত্রের থিসিস জালিয়াতি করে পিএইচডি করার অভিযোগ ওঠে। ঘটনাটি জানাজানি হলে তিনি তার থিসিস প্রত্যাহারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণিত হলেও ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে ২২ আগস্ট অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তার আবেদন গ্রহণ করা হয়। গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান।চারুকলা অনুষদ ও বিভাগসূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের অক্টোবরে ‘বাংলাদেশের কারুশিল্প : একটি নৃতাত্ত্বিক সমীক্ষা’ শিরোনামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট থেকে পিএইচডি থিসিস অনুমোদন পান গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী।

তার থিসিসের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক বিলকিস বেগম। ওই থিসিস তিনি সাতটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করেন। মোহাম্মদ আলীর ডিগ্রি গ্রহণের তিন বছর পর ২০১২ সালের জুলাইয়ে তার শিক্ষক ও একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আজাদী পারভিনের ‘বাংলাদেশের কারুশিল্প : ঐতিহ্য ও আধুনিকতা’ শিরোনামে অন্য পিএইচডি থিসিস অনুমোদন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। ২০১৫ সালে চারুকলা অনুষদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক আজাদী পারভিনের থিসিস জালিয়াতির বিষয়টি বুঝতে পারেন।

ছাত্রের পিএইচডি থিসিস চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার বিষয়টি একাধিক শিক্ষকের মধ্যে প্রকাশ হলে তা নিয়ে চারুকলা অনুষদে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে শাস্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আজাদী পারভিন নিজেই তার পিএইচডি ডিগ্রি বাতিলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের দুষ্প্রাপ্য শাখা থেকে ‘ডক/৭০৯-৫৪৯২/আলীবা উ-৩১৪৬’ ও ‘ঞঐঊ/৭৪৫-০৯৫৪৯২/পারবা উ-৩৬৬৪’ কল লিস্ট থেকে থিসিস দুটি পাওয়া যায়।

সেখানে আজাদী পারভিনের গোটা থিসিসের প্রায় ৯০ ভাগ হুবহু মিল রয়েছে মোহাম্মদ আলীর থিসিস পেপারের সঙ্গে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মোহাম্মদ আলীর থিসিস নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন আজাদী পারভিন। অথচ থিসিস পেপারের প্রথমে তিনি লিখেন, ‘বাংলাদেশের কারুশিল্প : ঐতিহ্য ও আধুনিকতা শীর্ষক অভিসন্দর্ভটি আমার নিজস্ব রচনা। আমার জানা মতে এ বিষয়ে ইতোপূর্বে কোনো পূর্ণাঙ্গ গবেষণা হয়নি।’ এসব কথা তিনি লিখলেও থিসিসের প্রায় পুরোটাই অন্যের কাছ থেকে নেওয়া। তবে থিসিসের সূচিপত্রে কিছুটা এদিক-সেদিক করেন আজাদী। ‘টেরাকোটা অতিশয় প্রাচীন শিল্প নিদর্শন।’ এ লাইনটি মোহাম্মদ আলীর পিএইচডি গবেষণা প্রবন্ধের ১৯৭ নম্বর পৃষ্ঠায় ছিল। একই লাইন পাওয়া যায় আজাদী পারভিনের থিসিস পেপারের ২১৬ নম্বর পৃষ্ঠায়। ‘নান্দনিকতা সৌন্দর্যবোধ শিল্পী মানুষের একটা স্বাভাবিক চেতনার প্রকাশভঙ্গি।’ এ লাইনটি ছিল মোহাম্মদ আলীর থিসিস পেপারের ৩৮০ নম্বর পৃষ্ঠায়। একই লাইন দেখা যায় তিন বছর পর ডিগ্রি নেওয়া আজাদী পারভিনের থিসিস পেপারের ৩৪৮ নম্বর পৃষ্ঠায়। শুধু এ দুটি লাইন নয়, আজাদী পারভিনের ‘বাংলাদেশের কারুশিল্প : ঐতিহ্য ও আধুনিকতা’ শিরোনামে প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠার থিসিসের অন্তত ৯০ ভাগ হুবহু নেওয়া হয় ‘বাংলাদেশের কারুশিল্প : একটি নৃতাত্ত্বিক সমীক্ষা’ শিরোনামের থিসিস পেপার থেকে।

বিষয়টি তদন্তের জন্য সে সময় সব অনুষদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হয়। তারা গত মার্চে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনেও জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়।

তদন্ত কমিটির সদস্য ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আখতার ফারুক বলেন, ‘আমরা তদন্তে থিসিস জালিয়াতির বিষয়টির প্রমাণ পেয়েছি। আজাদী পারভিনের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তিনি থিসিস প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করায় তার আবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রহণ করেছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘অভিযোগটি ওঠার পরপরই আজাদী পারভিন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি সে সময় স্ট্রোক করেছিলেন। এখনো তিনি মারাত্মক অসুস্থ। তাই তার প্রতি মানবিক বিবেচনায় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল শুধু থিসিস বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

সর্বশেষ খবর