রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত আইনের শাসন

—ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেছেন, যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য আইনের শাসন অপরিহার্য পূর্বশর্ত। তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিচার বিভাগের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডে অফিসার্স ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত আইনজীবীদের সনদ বিতরণ করা হয়। দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন আদালতে ৩০ লক্ষাধিক মোকদ্দমা শুনানি ও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এ বিশাল কর্মযজ্ঞের তুলনায় কর্মশক্তি খুবই অপ্রতুল। এটা সুস্পষ্ট যে, দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন মামলার অনুপাতে বিচারক সংখ্যা অনেক কম।

 তা সত্ত্বেও ঝুলে থাকা মামলাগুলো অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।

 কারণ বিচারপ্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করেছেন।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মুজমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল মতিন খসরু ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান শ ম রেজাউল করিম বক্তব্য দেন।

বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্ব অর্থনীতির রোলমডেল, যা বিশ্বব্যাংক তথা আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত। একটি দেশের বিচার বিভাগের দক্ষতা ও দ্রুত বিচারের ওপর নির্ভর করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হয়। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যখন দেখে তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের নিশ্চয়তা রয়েছে এবং বাণিজ্যিক বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি হয় তখনই বিনিয়োগের প্রসার ঘটে। তিনি বলেন, মামলা ব্যবস্থাপনায় সংস্কার এবং দক্ষ সেবাদানের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকল্প নেই। তথ্য প্রযুক্তি দিয়েই কাজের গতি অনেকগুণ বৃদ্ধি ও সেবার জন্য অপেক্ষমাণ সর্বশেষ ব্যক্তির কাছে পৌঁছানো সম্ভব। বিচার ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশনের পথে বিচার বিভাগ এরই মধ্যে কিছুটা এগিয়েছে। তিনি বলেন, নবীন আইনজীবীরা দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। তাদের নিরন্তর প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজেকে আইনজীবী হিসেবে বিকশিত করতে হবে। আইন পেশায় চড়াই-উত্রাই পেরোতে হবে। অসত্যের সঙ্গে আপস করা যাবে না। অধ্যয়ন করতে হবে। আইন অধ্যয়নের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ বিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও দর্শনে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আইনজীবীরা বিচার ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আজ যিনি আইনজীবী কাল তিনি বিচারক হতে পারেন। আইনজীবীরাই আইন ও বিচারকে গণমানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। আইনজীবীদের প্রধান কাজ মানসম্পন্ন বিচার নিশ্চিত করতে আদালতকে সহযোগিতা করা। অবশ্যই আইনজীবী তার মক্কেলের স্বার্থ দেখবেন। তবে তা হতে হবে আইন ও বিধির আওতায় এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে। একজন আইনজীবী আদালতে বা আদালতের বাইরে এমন আচরণ করবেন যেটা জনসম্মুখে বিচার ব্যবস্থার সম্মান বৃদ্ধি করে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আইন পেশায় দক্ষতা অর্জনে নিয়মিত পড়াশোনা এবং প্রশিক্ষণ জরুরি। কারণ প্রশিক্ষণ ছাড়া পেশাগত উৎকর্ষ অর্জন দুরূহ। তিনি আশা করেন, নবীন আইনজীবীরা আদালত অঙ্গনের সুষ্ঠু পরিবেশ সংরক্ষণ, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার সুফল জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গঠনমূলক ভূমিকা রাখবেন। পাশাপাশি সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অসহায়দের আইনি সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবেন।

সর্বশেষ খবর